নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ভ্রীকুটি ম-পে অবস্থিত রাষ্ট্রিয় সভাগৃহে আগামীকাল বুধবার শুরু হচ্ছে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) ১৮তম শীর্ষ সম্মেলন। এই সম্মেলনে যোগ দিতে আজ মঙ্গলবার বিকালে নেপাল যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এবারের শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য আরো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।
জানা যায়, বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন।
ফ্লাইটটি নেপালের স্থানীয় সময় সোয়া ৪টায় কাঠমান্ডুর ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।
বিমানবন্দরে উষ্ণ অভ্যর্থনা শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এক আনুষ্ঠানিক মোটর শোভাযাত্রা সহকারে হোটেল ক্রাউন প্লাজা সোয়েলটি- কাঠমান্ডুতে নিয়ে যাওয়া হবে। নেপাল সফরকালে তিনি এ হোটেলে অবস্থান করবেন।
প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে সার্কের অন্যান্য সদস্য দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন এবং ভাষণ দেবেন। মঞ্চে আসন গ্রহনের আগে তারা ফটো সেশনে অংশ নেবেন।
প্রথমদিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনের ফাঁকে নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট ড. আশরাফ ঘানি এবং মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিন আব্দুল গাইয়ুমের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
একই দিন তিনি অন্যান্য দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানদের সঙ্গে হোটেল ক্রাউন প্লাজা সোয়েলটিতে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর আয়োজিত ভোজসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন।
পরদিন ২৭ নভেম্বর শেখ হাসিনা ও সার্কের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ র্রিট্রিয়েট সেশনে যোগ দিতে হেলিকপ্টারে নেপালের শীর্ষ পর্যটনকেন্দ্র ধুপিখেল যাবেন।
একইদিন ধুপিখেল থেকে ফিরে তারা শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সার্কের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ কাঠমান্ডুর রাষ্ট্রপতি ভবনে নেপালের প্রেসিডেন্ট ড. রামবরণ যাদবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তারা নেপালের রাষ্ট্রপতির দেয়া ভোজসভায়ও যোগ দেবেন।
শেখ হাসিনা ২৮ নভেম্বর দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেন, শীর্ষ সম্মেলনে আঞ্চলিক সহযোগিতা জন্য যুব উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, যোগাযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, জলবায়ু পরিবর্তন, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, খাদ্য নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ- এই ১০ প্রধান বিষয়ের ওপর ঢাকা গুরুত্বারোপ করবে।
বাংলাদেশ এ অঞ্চলের জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সার্ককে আরো কার্যকর একটি মঞ্চ হিসেবে দেখতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সার্কের সিদ্ধান্তগুলো যথাসময়ে ও যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করবো।
মাহমুদ আলী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার ৮ দেশের এই সম্মেলনে সার্কের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে ‘সার্ক মোটর ভেহিক্যালস এগ্রিমেন্ট’, ‘সার্ক রিজিওনাল রেলওয়ে এগ্রিমেন্ট’ এবং ‘সার্ক ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট ফর এনার্জি কোঅপারেশন (বিদ্যুৎ)’ স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হলে সার্ক দেশগুলোর মধ্যে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন এবং জ্বালানি খাতে সহযোগিতা জোরদার হবে। যা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সম্পর্কও জোরদার করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক)- দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের একটি অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক সংস্থা। এই আঞ্চলিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়টি প্রথম উত্থাপিত হয় ১৯৮০ সালে।
এর ৫ বছর পর ১৯৮৫ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকায় সার্কের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠা হয় সার্ক।
পরে আফগানিস্তান সার্কের পূর্ণাঙ্গ নতুন সদস্য পদ লাভ করে। এ ছাড়া এ সংস্থার রয়েছে কয়েকটি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র।