সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা : সুনামগঞ্জের পাগনার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধও ভেঙে গেছে। আজ সোমবার ভোরে ফসল রক্ষা বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় পানিতে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে যাচ্ছে।
প্রায় একমাস পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার পাগনার হাওরের ফসল বাঁধ রক্ষায় সব ধরনের চেষ্টা করেছিলেন অর্ধশতাধিক গ্রামের কৃষক। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে আজ সোমবার ভোরে হাওরের উরারবন্দ নাম বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে যাচ্ছে হাওরটি। এটি ছিল জেলার সর্বশেষ সুরক্ষিত হাওর। এর মধ্য দিয়ে বড় হাওরের সবকটিরই ধান ভেসে গেল।
পাগনার হাওরে জেলার দিরাই উপজেলা ও নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলার অনেক কৃষকদের বোরো জমি রয়েছে বলে জানা গেছে।
জামালগঞ্জের ফেনারবাঁক ইউনিয়নের পাগনার হাওরের ১০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল রক্ষার শেষ লড়াই করেছিল এলাকার লোকজন। তবে গত এক মাস ধরে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন কর্মকর্তা বাঁধে ছিল না জানিয়েছেন ফেনারবাঁক ইউপি চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু তালুকদার।
পাগনার হাওরের উরারবন্দ বাঁধ এলাকা থেকে ফেনারবাঁক ইউনিয়ন পরিষদের সচিব অজিত কুমার রায় সোমবার ভোর সাড়ে ৫ টায় জানিয়েছেন, শতাধিক শ্রমিক নিয়ে তিনি রোববার রাতেও বাঁধে কাজ করছিলেন। বাঁধ রক্ষায় ৫০ জন পাহাড়াদার নিয়োগ করা হয়েছিল। বিন্তু সোমবার ভোরে বৃষ্টির সময় উরারবন্দ বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করে। তিনি গ্রাম পুলিশ, শ্রমিক ও পাহাড়ারদের নিয়ে শেষ চেষ্টা করেছিলেন বাঁধ রক্ষার কিন্তু পানির বেগ বেশি থাকায় তা সম্ভব হয়নি। এখন হাওরে পানি ঢুকে বোরো ধান তলিয়ে যাচ্ছে।
ফেনারবাঁক ইউপি চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু তালুকদার বলেন, হাওরের এত বড় দুর্যোগে পাউবোর কোন অফিসারকে বাঁধে পাওয়া যায় নি। রোববার থেকে বাঁধে ১৭৪ জন শ্রমিক ও নজরদারী রাখার জন্য ৫০ জন পাহাড়াদার নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা সম্ভব হয়নি। সোমবার ভোরে বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকা শুরু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, জেলায় এ বছর ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৬৩৪ কোটি টাকা। ৪২টি হাওরের ফসল রক্ষায় ৬৮ কোটি টাকা ৮০ লাখ টাকার বাঁধের কাজ চলছিল। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের বৃহৎ ৩৭টি হাওরসহ মোট ৪২টি হাওরে ২০ কোটি ৮০ লাখ ব্যয়ে ২২৫টি পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) ও ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৬টি প্যাকেজে ঠিকাদার দিয়ে বোরো ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করেছিল। কৃষকদের অভিযোগ, পিআইসির কাজ ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ঠিকাদারের কাজ ৩১ মার্চের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পিআইসির ও ঠিকাদারের কাজ সময়মত শেষ হয়নি।