রায় শুনেও নির্বিকার তাঁরা

SHARE

Nur

নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুন মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায় শুনে সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‍্যাবের সাবেক কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানা নির্বিকার ছিলেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন আজ সোমবার সকালে এই মামলার রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে নূর হোসেন ও র‍্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ২৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। বাকি নয় আসামির সবাইকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

রায় ঘোষণার সময় নূর হোসেনসহ ২০ আসামি আদালতে স্থাপিত লোহার খাঁচার (আসামির কাঠগড়া) ভেতরে ছিলেন। আর র‍্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা ছিলেন খাঁচার বাইরে।

সকাল ১০টার কিছু পরেই রায় ঘোষণা করেন আদালত। সংক্ষিপ্ত রায়ে আসামিদের দণ্ড ঘোষণা করা হয়।

রায় শোনার পর নূর হোসেন এবং র‍্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন ও মাসুদ রানাকে নির্বিকার থাকতে দেখা যায়। তাঁদের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়াই লক্ষ করা যায়নি।

তবে মৃত্যুদণ্ডের রায় শুনে লোহার খাঁচার ভেতরে থাকা কয়েকজন আসামি হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। এ সময় তাঁদের সান্ত্বনা দেন নূর হোসেন।

রায় ঘোষণার পর একপর্যায়ে তারেক সাঈদের সঙ্গে নূর হোসেনকে বেশ স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে দেখা যায়।

মৃত্যুদণ্ডের রায় শোনার পরও গুরুত্বপূর্ণ চার আসামির নির্বিকার থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ওয়াজেদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁরা স্বাভাবিক থেকেই প্রমাণ করেছেন, তাঁরা অপরাধী। যাঁরা পেশাদার অপরাধী, তাঁরা মানুষ খুন করেও স্বাভাবিক থাকতে পারেন। হাসি-ঠাট্টা করতে পারেন।’

মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন। তিনি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার অপরাধ-জগতের নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা (পরে বহিষ্কৃত) ছিলেন।

অন্যদিকে, তারেক সাঈদ হলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর (মায়া) জামাতা। আর রানা হলেন খুলনা-২ আসনের সাংসদ মিজানুর রহমানের ভাগনির স্বামী।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছয়টি লাশ। পরদিন মেলে আরেকটি লাশ। নিহত অন্যরা হলেন নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম।

ঘটনার এক দিন পর কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে নূর হোসেনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন। আইনজীবী চন্দন সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় একই থানায় আরেকটি মামলা হয়। এই মামলার বাদী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল। পরে দুটি মামলা একসঙ্গে তদন্ত করে পুলিশ।

১১ মাস তদন্তের পর ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল র‍্যাব-১১-এর সাবেক ২৫ জন কর্মকর্তা-সদস্যসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। পরের বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি মামলার অভিযোগ গঠিত হয়। এরপর প্রায় সাত মাসে ৩৮ কর্মদিবস মামলার বিচারকাজ চলে। গত ৩০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ঘোষণা করেন। আজ রায় ঘোষণার সময় মামলার ৩৫ আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা ২৩ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।