ব্রেইন টিউমার জেনেও মাঠে নামা, তারপর দুর্ভাগ্য!

SHARE

8478227bfd7a2e86292a6174a55f239f-RussCancer‘কেউ কেউ বলে ফুটবল জীবন-মরণের প্রশ্ন। ওদের এই মানসিকতায় আমি হতাশ। ফুটবল তো এর চেয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ’—লিভারপুলের কিংবদন্তি কোচ বিল শ্যাঙ্কলি বলেছিলেন কথাটা। একটু বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে? তাহলে জার্মান ক্লাব ফ্রাঙ্কফুর্টের মার্কো রাসের গল্পটা জেনে নিন। একটা খেলা, একটা ম্যাচ, একটা ক্লাব যে কখনো কখনো নিজের জীবনের প্রশ্নের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, সেটিই পরশু দেখিয়ে দিলেন এইনট্রাখ্ট ফ্রাঙ্কফুর্ট অধিনায়ক।
কদিন আগেই জার্মানির ডোপিং–বিরোধী সংস্থা তাঁকে ডেকেছিল নিয়মমাফিক পরীক্ষার জন্য। পরীক্ষার ফল এল গত বুধবার, পরীক্ষায় ‘পজিটিভ’ রাস। কিন্তু এর চেয়েও আরও বড় দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছিল ৩০ বছর বয়সী ডিফেন্ডারের জন্য। ডোপ পরীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হলো, শরীরে হরমোনের যে দ্রুত বৃদ্ধি হচ্ছে, সেটি পারফরম্যান্স–বর্ধক কোনো ওষুধের কারণে নয়, আসলে রাস অসুস্থ। মস্তিষ্কে টিউমার ধরা পড়েছে জার্মান ডিফেন্ডারের!
ফুটবলার তো পরের কথা, যেকোনো মানুষেরই এমন দুঃসংবাদে ভেঙে পড়ার কথা। কিন্তু রাস কী করলেন? এক দিন পর মৌসুমে ফ্রাঙ্কফুর্টের সবচেয়ে বড় ম্যাচ—নুর্নবার্গের সঙ্গে বুন্দেসলিগা প্লে-অফ। বুন্দেসলিগায় এবার ১৬তম হওয়া ফ্রাঙ্কফুর্ট দুই লেগের এই প্লে-অফ জিততে না পারলে আগামী মৌসুম খেলতে হবে দ্বিতীয় স্তরে।
ফ্রাঙ্কফুর্টের যুব প্রকল্পের ছাত্র তিনি, শুধু ভলফসবুর্গে দুই বছর (২০১৩-১৫) ছাড়া ক্যারিয়ারের পুরোটাই ফ্রাঙ্কফুর্টে কাটানো রাস কী করলেন? মাত্রই এক দিন আগে শুনেছেন মস্তিষ্কে বাসা বেঁধেছে টিউমার। কিন্তু প্রিয় ক্লাবের এই ভীষণ দরকারের দিনে ঘোষণা দিলেন, ‘আমি খেলব!’ টিউমার ধরা পড়ার পরের দিনই নেমে গেলেন নুর্নবার্গের সঙ্গে প্লে-অফের প্রথম লেগে।

কিন্তু জীবনযুদ্ধে বীরের মতো যিনি লড়াই করে যাওয়া রাসকে ফুটবল যোগ্য পুরস্কার দিল না। ম্যাচের ৪২ মিনিটে নুরেমবার্গের সেবাস্টিয়ান কার্কের ফ্রি কিক ঠেকাতে পা বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু অসহায় দৃষ্টিতে ফ্রাঙ্কফুর্ট অধিনায়ক দেখলেন, বল জড়িয়ে যাচ্ছে নিজেদেরই জালে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য মিয়াত গ্যাসিনোভিচের গোলে ১-১ সমতা নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ফ্রাঙ্কফুর্ট। এখন দ্বিতীয় লেগের অপেক্ষা।
কিন্তু জয়-পরাজয় ছাপিয়েও ফুটবলপ্রেমীদের আবেগের জায়গাটা দখল করে নিয়েছেন রাস। যে ফুটবলের টানে টিউমার নিয়েও মাঠে নেমেছিলেন, সেটি এই ম্যাচে তাঁকে যোগ্য সম্মান দেয়নি। যে ক্লাবের জন্য বুক চিতিয়ে লড়ে গেছেন পুরো ক্যারিয়ার, সেই ফ্রাঙ্কফুর্ট এবার বুন্দেসলিগায় টিকে না থাকতে পারলে তার দায়ও কিছুটা বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে রাসকে। মাঝেমধ্যে বেখেয়ালে এতটা নিষ্ঠুরও হতে পারে ফুটবল?
অথবা কে জানে, হয়তো দ্বিতীয় লেগে রাসের জন্য অনিন্দ্য সুন্দর কোনো গল্পের প্লট তৈরি করতেই এমন খানিক ট্র্যাজেডি? হয়তো সেখানে জিতিয়ে দিয়ে টিউমারের সঙ্গে লড়াইয়েও রাসকে প্রেরণা দিতেই এত আয়োজন।