উপকূলে আজ শনিবার দুপুরে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’। চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ। অনেক জায়গায় ভেঙে পড়েছে গাছের ডাল। বিমানবন্দর ও বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে কুতুবদিয়ার চারটি, মহেশখালীর তিনটি, টেকনাফের একটি ও পেকুয়ার তিনটি ইউনিয়ন লন্ডভন্ড হয়েছে। কক্সবাজার পৌরসভার নাজিরারটেকসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। বরগুনায় দেড় লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু মেঘনা মোহনা, নোয়াখালী, কুতুবদিয়া, সন্দ্বীপ, হাতিয়া ও সীতাকুণ্ড উপকূল হয়ে উত্তর দিকে চলে যাবে। এর প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আগামীকাল বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধির পাঠানো খবর:
চট্টগ্রাম: রোয়ানু আঘাত হানায় চট্টগ্রাম নগরের সর্বত্র বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নগরের বাদশা মিয়া সড়ক, রৌফাবাদ, বারেক বিল্ডিং মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় গাছ ও ডাল উপড়ে পড়েছে রাস্তার ওপর। এতে বাদশা মিয়া সড়কের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। অনেকে ঘরবন্দী অবস্থায় আছে। নগরের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকার ঝিনুক মার্কেটের নিচের অংশের দোকানপাট পানিতে ভেসে গেছে। প্রচণ্ড বাতাসে ঘরের চালা ঘুড়ির মতো উড়ছে। বহির্নোঙরে থাকা একটি জাহাজ ঢেউ ও বাতাসের তোড়ে উপকূলের কাছাকাছি চলে এসেছে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার রিয়াজুল কবির প্রথম আলোকে জানান, ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সকাল ১০টা থেকে উড়োজাহাজের ওঠানামা ও বিমানবন্দরের পরিচালন কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের পর্ষদ সদস্য জাফর আলমের ভাষ্য, চট্টগ্রাম বন্দরে আজ সকাল আটটা থেকে সব ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে পণ্য ওঠানামা ও পরিবহনসহ সব ধরনের কার্যক্রমও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পিডিবি চট্টগ্রাম নগরের স্টেডিয়াম এলাকার নির্বাহী প্রকৌশলী অশোক চৌধুরী জানান, জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে আজ বেলা ১১টা থেকে সর্বত্র বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঘূর্ণিঝড় কেটে যাওয়ার পর পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হবে।
কক্সবাজার: দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রোয়ানুর প্রভাবে সাগরের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ছয়-সাত ফুট উচ্চতায় বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলে আঘাত হেনেছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে কুতুবদিয়ার চারটি, মহেশখালীর তিনটি, টেকনাফের একটি ও পেকুয়ার তিনটি ইউনিয়ন লন্ডভন্ড হয়েছে। কক্সবাজার পৌরসভার নাজিরারটেকসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার অন্তত ৭০ হাজার মানুষকে ১২৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
জেলায় ৬ নম্বর বিপৎসংকেত বহাল আছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক।
সকাল ১০টার দিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে ইয়াছির লাইফ গার্ড স্টেশন, পুলিশের পর্যবেক্ষণ টাওয়ারসহ শতাধিক দোকানপাট। ইয়াছির লাইফ গার্ড স্টেশনের পরিচালক মোস্তফা কামাল বলেন, পর্যটকসহ লোকজনকে সৈকতে নামতে দেওয়া হচ্ছে না।
বরগুনা: রোয়ানুর প্রভাবে নদ–নদীতে অধিক উচ্চতার জোয়ারের তোড়ে ও প্রবল বর্ষণে বরগুনা সদর, তালতলী ও পাথরঘাটা উপজেলার ১২টি স্থানে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে এসব এলাকার ৪৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে দেড় লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শহিদুল ইসলাম বলেন, বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সেটা জানা সম্ভব হয়নি।