২৪ ঘণ্টায় ৪ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা আওয়ামী লীগের তৃণমূলে আতঙ্ক

SHARE

খুন আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে আওয়ামী লীগকে। কখন কে কোথায় কীভাবে আক্রান্ত হন সে আশঙ্কায় উদ্বেগ্ন-উৎকণ্ঠা দেশজুড়ে। গত ২৪ ঘণ্টায় চারজন তৃণমূল নেতাকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এ আতঙ্কে যেন ঘি ঢেলে দিয়েছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ বিভিন্ন কারণে আওয়ামী লীগের মধ্যম সারি ও তৃণমূল নেতারা বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় চার জেলায় চারজন তৃণমূল নেতাকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার বিকেল থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, লালমনিরহাট ও নাটোরে এসব ঘটনা ঘটে।image_97283_0

শনিবার রাত ১০টার দিকে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় যুবলীগের এক নেতাকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় একজনকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত ব্যক্তির নাম আরিফ হোসেন (৩২) তিনি ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।

সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফ উল ইসলাম বলেন, যুবলীগের ওই নেতাকে কে বা কারা পিটিয়ে হত্যার করেছে তা এখনো শনাক্ত করা যায়নি। বিএনপির কর্মীরাই ঘটনাটি ঘটিয়ে থাকতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

শনিবার দুপুরে নাটোর চিনিকলের সাবেক কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ নেতা মোজাম্মেল হোসেন মজনুকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করেছে। নিহত মজনু সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকারের আস্থাভাজন ছিলেন। সে সুবাদে বিভিন্নজনকে চাকরি দেয়াসহ বিভিন্ন তদবিরের কথা বলে নেয়া লেনদেনের জের ধরে বা ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা  হচ্ছে। তরে কে বা কারা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে তা এখনো শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

শুক্রবার বিকালে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে প্রকাশ্যে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহত জাহাঙ্গীর আলম রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর ইউনিয়নের ৬নং সোন্দড়া ওয়ার্ড আওয়ামী  লীগের সদস্য সচিব।

ইছাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুর মোহাম্মদ জানান, যুবদলের সন্ত্রাসী মাহাবুবুর রহমান, সিরাজ উদ্দিন ও রহিমসহ কয়েকজন সন্ত্রাসী তাকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানান তিনি।

শুক্রবার বিকালে লালমনিহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের ৭নং ওয়ারর্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি  ফিরোজ আলী মুন্সিকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।  তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিহতের ভাতিজা আব্দুল বারিক লাঠি দিয়ে ফিরোজ আলীকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে।

গত ২৪ ঘণ্টায় এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা বেড়েছে। চলতি মেয়াদে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় সারা দেশে শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজেদের দ্বন্দ্ব-সংঘাতেই জীবন হারিয়েছেন তারা। এ খুনোখুনির ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন নেতা-কর্মীরা কখন প্রতিপক্ষ হামলে পড়বে তাদের ওপর।

অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিজ দলের নেতা-কর্মীদের খুনোখুনিতে স্থানীয় পর্যায় থেকে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত চরম বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়েন। স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় কর্মীদের মধ্যে দেখা দেয় হতাশা। দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে কিছু নেতা-কর্মী সাংগঠনিক কার্যক্রমকে রীতিমতো বাধাগ্রস্ত করে ফেলেন।

পারস্পরিক খুনখারাবির ঘটনায় দলের ক্যাডারনির্ভর স্থানীয় রাজনীতি গড়ে ওঠার আশঙ্কাও করেন ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। এসব নিয়ে অতি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ১৪ দলের বৈঠকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ ও ফেনীর বর্বরতায় সরকার বেশ বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছে, এর মধ্যেও লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীসহ কয়েকটি জেলায় সাম্প্রতিক ঘটনায় প্রকাশ হয়ে পড়েছে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। সম্প্রতি গাজীপুরের কাপাসিয়ায় হুমায়ুন নামের এক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি সদর ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি স্থানীয় এমপি বাহারউদ্দিন বাহারের ভাতিজা। রাজধানীর কাফরুলে মিজানুর রহমান (২৬) নামে এক যুবলীগ কর্মীর গলাকাটা লাশ পাওয়া গেছে। এর আগের কয়েক দিনেও লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী মিলিয়ে আরো চারজনের লাশ পড়েছে। তারা সবাই ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী।

গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগ সমর্থিত ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন অপহৃত ও নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এই সাতজনের পাঁচজনই সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। এ হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছেন তারাও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। সাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। অপর আসামি ইয়াসীন আলীও থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

২০ মে ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি একরামুল হক একরামকে গুলি করে, কুপিয়ে ও গাড়িসহ পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডে জড়িত ও পরিকল্পনা করার দায়ে যাদের নাম এসেছে এবং যারা ধরা পড়েছে তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।