আয়ারল্যান্ড ম্যাচের অস্বস্তি তাসকিন-সানি

SHARE

19ed55e92afb00982b7ccbc56f1a9b65-43বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে তুমুল আড্ডায় লাঞ্চ সারছেন তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তরে ঘুরে বেড়ানো সেই আড্ডার বড় একটা অংশজুড়ে থাকছে দুই ‘বাবা’র অভিজ্ঞতা বিনিময়। তামিম এখানে ‘জুনিয়র’। মোবাইলে ছেলের ছবি দেখতে দেখতে বলছেন, ‘ওর চোখগুলো কার মতো হয়েছে, এটা বুঝতে পারছি না।’ সাকিবের এই ‘সমস্যা’ নেই। মেয়ের কপাল-নাক-চোখ সব নাকি বাবার মতোই হয়েছে।
পাশের টেবিলে একাকী লাঞ্চ সারছেন আরাফাত সানি। নাগপুরের জিম্বাবুয়ে-স্কটল্যান্ড ম্যাচ টেলিভিশনে দেখাচ্ছে। সেদিকে দু-একবার তাকালেন কি তাকালেন না। বিষণ্ন চোখমুখ দেখেই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, কী ঝড় বয়ে যাচ্ছে তাঁর মনে!
টিম হোটেলে এর ঘণ্টা খানেক পর তাসকিন আহমেদের দেখা মিলল। দূর থেকে তাঁকে দেখেই ‘হিরো’ বলে ডাক দিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তাসকিনকে এই নামেই ডাকেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তাসকিনের মুখে পরিচিত সেই ঝলমলে হাসি। ঝড় বয়ে যাওয়ার কথা তাঁর মনেও। তবে চোখমুখ দেখে তা বোঝার উপায় নেই।
বোঝাই যাচ্ছে, ইয়র্কারের মতো নিজের মানসিক অবস্থার ওপরও ভালোই নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের তরুণ পেসারের। নইলে অস্বস্তি নিশ্চয়ই কাঁটা ফোটাচ্ছে তাঁর মনেও। বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন উঠলে কোন বোলারের মনেই বা তা ফুটবে না!
অস্বস্তির গুমোট হাওয়া আসলে ঘুরে বেড়াচ্ছে পুরো দলেই। যেখানে হওয়ার কথা ছিল উল্টো। হল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে অমন লড়াকু জয়। আজ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে নামার কথা ছিল ফুরফুরে এক বাংলাদেশের। এই ম্যাচে জিতলেই সুপার টেন একরকম নিশ্চিত। সেটিতে পুরো মনোযোগ ঢেলে দেওয়ার বদলে কিনা নামতে হচ্ছে আইসিসির সঙ্গে ‘যুদ্ধে’!
একরকম যুদ্ধই তো! হল্যান্ডকে হারিয়ে মাঠ ছেড়ে বেরোনোর পরই ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফট চিঠি ধরিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ দলের ম্যানেজারের হাতে। যাতে দুই বোলারের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে আম্পায়ারদের সংশয়ের কথা লেখা। দ্বিপক্ষীয় সিরিজে কোনো বোলারকে নিয়ে এমন প্রশ্ন উঠলে ১৪ দিনের মধ্যে বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা দিতে হয়। আইসিসি টুর্নামেন্টের ক্ষেত্রে সময়সীমা সাত দিন। সানি ও তাসকিনকে পরদিনই (গতকাল) চেন্নাইয়ের গবেষণাগারে পাঠিয়ে দিতে বলা হয়েছিল। সেটি সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ দল। বলা হয়, দলে এমনিতেই চোটের সমস্যা আছে। তাসকিন-সানি যদি না থাকেন, আর নতুন কেউ চোট পান, তাহলে মাঠে একাদশ নামানোই কঠিন হয়ে যাবে।
বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন উঠলে পরীক্ষার ফল প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত বোলারদের খেলতে কোনো বাধা নেই। এ কারণেই যত দ্রুত সম্ভব পরীক্ষাটা করে ফেলার একটা তাগিদ থাকে আইসিসির তরফ থেকে। কোনো বোলারের বোলিং অ্যাকশনে সত্যি সত্যিই ত্রুটি থাকলে যে ওই দল ‘অন্যায়’ সুবিধা পেয়ে যাবে। সানি-তাসকিনকে পরীক্ষার জন্য কবে পাঠানো হবে—এই নিয়ে মতবিরোধের কারণেই আইসিসি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিতে কাল সন্ধ্যা পর্যন্ত দেরি করেছে।
বাংলাদেশ দল ‘লড়াই’ করে আজ আয়ারল্যান্ড ম্যাচ পর্যন্ত ধরে রেখেছে তাসকিন-সানিকে। তবে প্রাথমিক দাবি অনুযায়ী আগামী পরশু প্রথম পর্ব শেষ হওয়া পর্যন্ত তা পারা যাবে কি না, এ নিয়ে সংশয় আছে। ক্রিকেটে ‘চাকিং’ এমন এক স্পর্শকাতর ব্যাপার যে, এতে সব সময়ই ষড়যন্ত্র-তত্ত্বের দেখা মেলে। এখানেও বাংলাদেশ দল তেমন কিছুর গন্ধ পাচ্ছে। সানির অ্যাকশন নিয়ে তা-ও কিছুটা ফিসফাস ছিল, কিন্তু তাসকিনকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করানোটা নিয়ে দলে ক্ষোভ আছে। কাল সংবাদ সম্মেলনে এসে সেই ক্ষোভের প্রকাশও ঘটালেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। দুই বোলারের কারোরই বোলিং অ্যাকশনে কোনো সমস্যা নেই বলে দাবি তো করলেনই, পাল্টা আক্রমণও করলেন আম্পায়ার-ম্যাচ রেফারিকে। প্রকারান্তরে যা আইসিসিকেই আক্রমণ। হাথুরুসিংহে পাল্টা প্রশ্নও তুললেন, ‘ওদের যদি কোনো বোলারকে নিয়ে সংশয় থাকে, আমারও ওদের নিয়ে সংশয় আছে। গত বারো মাস ওরা একইভাবে বোলিং করে গেল, হঠাৎ করে আজ কেন প্রশ্ন উঠছে?’
কেন উঠছে—এ নিয়ে নানা মত থাকতে পারে। তবে ঘটনা হলো, প্রশ্নটা উঠেছে এবং সেই প্রশ্নের উত্তর পেতে গবেষণাগারে ক্যামেরার সামনে বোলিং করার জন্য ছাড়তেই হবে তাসকিন ও সানিকে। এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জটা হঠাৎই আরও অনেক বড় হয়ে গেল!