মুজিবুর হাসপাতালে, জানালেন অপহরণের কাহিনী

SHARE

নিখোঁজ হওয়ার সাড়ে তিন মাসের বেশি সময় পর বৃটেন প্রবাসী বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমান মুজিব ও তার গাড়িচালক সোহেলকে উদ্ধার করা হয়েছে গাজীপুর থেকে। উদ্ধারের পর সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মুজিবুরকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ডাক্তারদের অনুমতি নিয়ে গুলশান জোনের এক পুলিশ কর্মকর্তা মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেছেন। মুজিবুর অপহরণের ঘটনা পুলিশ ও পরিবারের সদস্যদের কাছে বর্ণনা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তাকে অপহরণ করা হয়েছিল।image_94925_0

মুজিবুর রহমানের শ্যালক ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার সকালে আমি বৃটেন থেকে ঢাকায় শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করি। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে গাড়িতে থাকতেই খবর পাই আমার ভগ্নিপতি, বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমান মুজিব ও তার গাড়ি চালক সোহেল আমার গুলশানের বাসায় পৌঁছেছেন। তখন সময় দুপুর ১২টা। আমি সরাসরি বাসায় যাই। দেখতে পাই জীর্ণ শীর্ণ দেহে মুজিব ও সোহেল দু’জনে শুয়ে আছেন বিছানায়। তাদেরকে নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে গুলশানে অবস্থিত ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করি ও তাদের ফিরে আসার বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করি। খবর পেয়ে বেলা আড়াইটার দিকে গুলশান জোনের একজন সহকারী কমিশনারের নেতৃত্বে বেশ কিছু সাদা পোশাকের পুলিশ ইউনাইটেড হাসপাতালে আসে। এ সময় ডাক্তারদের অনুমতি নিয়ে গুলশান জোনের এক পুলিশ কর্মকর্তা কথা বলেন মুজিবুর রহমানের সঙ্গে।

প্রাথমিক আলাপচারিতায় মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, গত ৪ মে বিকেলে সুনামগঞ্জ থেকে সিলেট ফেরার পথে সিলেট শহরতলীর টুকের বাজার এলাকায় তাকে বহণকারী গাড়িটির গতিরোধ করে একটি মাইক্রোবাস। ও গাড়িতে বসা ছিল ৮/১০ জন লোক। তারা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক পরিচয় দেয়। প্রথমে তারা গাড়িচালক সোহেলের লাইসেন্স দেখতে চায়। এরপর দুজনকে গাড়ি থেকে নামতে বলে। গাড়ি থেকে নামার পর পরই পাশেরই মাইক্রোতে উঠতে বলে মুজিব ও সোহেলকে। এ সময় মুজিব ও সোহেল ধস্তাধস্তির চেষ্টা করলে আগন্তুকরা অস্ত্র বের করে তাদের মাথায় ঠেকায় ও গুলি করার হুমকি দিয়ে গাড়িতে তুলে নেয়। গাড়িতে উঠার পর পরই মুজিব ও সোহেলের নাকে কিছু একটা স্প্রে করে কথিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এরপর আর কোনো কিছু বলতে পারেননি তিনি।

গুলশান জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার লুৎফুর কবির সাংবাদিকদের জানান, বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমানকে পুলিশি নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তিনি সুস্থ হলে তিন মাস কোথায় ছিলেন, কারা তাকে অপহরণ করেছিল এ ব্যাপারে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

বৃটেন বিএনপির উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য প্রবাসী মুজিবুর রহমান ও তার গাড়িচালক মো. রেজাউল করিম সোহেল গত ৪ মে সুনামগঞ্জ থেকে সিলেট ফেরার পথে নিখোঁজ হন।

৬ মে মুজিবের ভাগনি জামাতা অধ্যক্ষ রবিউল ইসলাম সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ওই দিন দুপুরে জেলা বিএনপি মুজিবের সন্ধান চেয়ে শহরের লন্ডন প্লাজার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে। ৭ মে মুজিব ও তার গাড়ি চালক সোহেলের সন্ধান দাবিতে সুনামগঞ্জ শহরে মানববন্ধন এবং ৮ মে সুনামগঞ্জ জেলায় আধাবেলা হরতাল পালন করে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন।

১০ মে রবিউল ইসলামের সাধারণ ডায়েরিকে অভিযোগ হিসেবে নিয়ে শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড থেকে আকবর চৌধুরী (৩০), জিহাদ (২৭) ও তারেক (২৭)  নামে ৩ যুবককে আটক করে পুলিশ। অপরদিকে ২০ মে দিনগত রাতে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কসবা গ্রাম থেকে মাহমুদ নামে অপর এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ।

মুজিব নিখোঁজের ঘটনায় আটককৃতরা বর্তমানে জামিনে আছেন বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম খান।