দীর্ঘদিন যাবত সংস্কারের অভাবে ঝিনাইদহের অধিকাংশ সড়ক-মহাসড়ক এবং গ্রামীণ রাস্তা জনসাধারণের চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এতে করে সৃষ্টি হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) এবং এলজিইডি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলার ৬টি উপজেলায় মোট রাস্তার পরিমাণ ১৭’হাজার ৭’শ ৭০.৬৭ কিলোমিটার। যেখানে পাঁকা রাস্তার পরিমাণ ১২’ হাজার ৭’শ ১২.৬৭ কিলোমিটার এবং কাঁচা রাস্তার পরিমাণ ৫’হাজার ৫৮ কিলোমিটার। এছাড়া ৪টি জাতীয় মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ৭৫.৫৬ কিলোমিটার, ২টি আঞ্চলিক সড়কের দৈর্ঘ্য ৫০.০০ কিলোমিটার, ৪টি জেলা সড়কের দৈর্ঘ্য ২’শ ৭৬.৬৪ কিলোমিটার এবং একটি এলজিইডি সড়কের দৈর্ঘ্য ৩.৪৭ কিলোমিটার।
সম্প্রতি অতি বৃষ্টির কারণে এসকল সড়ক ও মহাসড়কের বিটুমিন উঠে পাথর খোয়া বের হয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যান চলাচলের ক্ষেত্রে চরম সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অন্যদিকে গ্রামীণ সড়ক দীর্ঘ দিন সংস্কার না করার কারণে রাস্তাগুলোতে বর্ষার পানি জমে কাঁদার সৃষ্টি হয়েছে। এ সকল রাস্তা দিয়ে জনসাধারণের চলাচলে চরম দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ-যশোর, ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ-মাগুরা, ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙা মহাসড়কের খানাখন্দের কারণে প্রায়ই বাস-ট্রাক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। তবে সবচেয়ে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙা মহাসড়কের আমের চারা থেকে ডাকবাংলা ব্র্যাক অফিস পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা দীর্ঘদিন নির্মাণের নামে খুঁড়ে রাখা হয়েছে। ফলে দূরপাল্লার পরিবহনসহ ছোট যানবহন চলাচলে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
এছাড়াও শহরের আরাপপুর, চুয়াডাঙা বাসস্ট্যান্ড, হামদহ, তেতুলতলা, ছালাভরার ব্রিজ, বারোবাজার, শহরের আলফাজ মার্কেটের সামনে, শহরের পাগলা কানাই গ্রামবাংলার স্ট্যান্ড, শৈলমারি বেলেখাল ভায়া গান্না সড়ক, গান্না ফুল বাজার-ইকড়া সড়ক, চান্দুয়ালি বাজার ভায়া জিয়ালা-রতনপুর আমেরচারা সড়ক, ডাকবাংলা বাজারের রফিক সড়ক-গবরাপাড়া ভায়া হরিণাকুন্ডু হাসপাতাল সড়ক, হরিণাকুন্ডু হরিশপুর-ত্রিবেনি সড়ক, পঞ্চগ্রাম-চারাতলা সড়ক, শৈলকুপার আবাইপুর মিনগ্রাম ভায়া মাগুরা সড়ক, হাটফাজিলপুর-বাকড়ি সড়ক, এমপির মোড় শেখরা ভায়া বাকড়ি সড়ক, হাট গোপালপুর- কুশাবাড়িয়া সড়ক, টিকারি বাজার-লক্ষ্মীপুর সড়ক, লাউতলা-বালিয়াডাঙ্গা ভায়া বারোবাজার সড়ক, মহেশপুরের খালিশপুর-ভৌরবা সড়কসহ গ্রামাঞ্চলের পাকা-কাঁচা রাস্তাগুলো সংস্কাররের অভাবে বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে।
ঝিনাইদহের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলি রবিউল আলম বলেন, যে রাস্তাগুলো নষ্ট হয়েছে তা সংস্কার করা দরকার। তবে এই দুটি প্রকল্পের ব্যাপারে অফিসিয়ালভাবে জানা নেই। অফিসিয়ালভাবে আনুমোদন পেলে সংস্কার নিয়মানুযায়ী সড়কের কাজ করা হবে এবং জনসাধারণের সমস্যা দূর হবে।
যাত্রী সাধারণ ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙা মহাসড়কের পিচ রাস্তা খুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে। আবার কোনো কোনো সড়কের বিভিন্ন স্থানে মাটি দেবে ক্যানেলের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও বিটুমিন উঠে পাথর খোয়া বের হয়ে ছোট-বড় খানাখন্দ সৃষ্টিতে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মূল শহরের প্রেরণা ৭১ এর আশপাশ দিয়ে বড়বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ইট-পাটকেল দিয়ে গর্তগুলো বন্ধ করলেও স্বাভাবিকভাবে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না।
এ বিষয়ে খুলনা সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বিপুল কুমার সাহা বলেন, খুলনা বিভাগের জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সড়ক মিলে ২’হাজার ৬৩৯ কিলোমিটার সড়ক মেইনটেন্যান্সের জন্য ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। যেখানে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বরাদ্ধ ছিল ১১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। যা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। যেখানে ঝিনাইদহ জেলার ১’শ ২৮ কিলোমিটার মহাসড়কের মধ্যে ৩০ কিলোমিটার সংস্কার করা সম্ভব হবে। আগামী শুকনো মৌসুমে যে সকল সড়কগুলো বেশি খারাপ এবং গুরুত্ব অনুযায়ী আগে সংস্কার করা হবে। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে সংস্কার করা হবে।