আমার পরিকল্পনায় আন্দোলন, এ ধারণা বানানো: তারেক

SHARE

তারেক রহমানের পরিকল্পনা ও নির্দেশে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট রমজানের পরপরই সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করতে যাচ্ছে- এই ধারণার সঙ্গে একমত নন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নিজেই। লন্ডনে কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমার পরিকল্পনায় আন্দোলন হবে, এই ধারণা বা পারসেপশন কিছু লোকের বানানো। আন্দোলন হবে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ও এর জোট নেতাদের পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী।’ সময়মতো রাজনীতিতে আবার সক্রিয় হবেন বলেও জানান তারেক রহমান।image_91252_0

দীর্ঘ দিন বাংলাদেশে নিজের অনুপস্থিতি সম্পর্কে তার ভাষ্য- ‘আমি দেশে থাকার সময় দেশের টাকা নাকি পাচার হয়ে যেত। সন্ত্রাস হতো, অনেক খারাপ কাজ হতো। এখন তো আমি দেশে নেই। দেশ তো এখন অনেক ভালো থাকার কথা।’ নিজের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে তিনি জানান, ওয়ান ইলেভেনের সময় তার ওপর নির্যাতনের ক্ষতি সারা জীবনই তাকে বয়ে বেড়াতে হবে।

গত ১৫ জুলাই উত্তর-পূর্ব লন্ডনের রমফোর্ড উপশহরের একটি সিটি প্যাভিলিয়নে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত ইফতার পার্টিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই অনুষ্ঠানে তিনি তার বক্তব্যে বাংলাদেশের নানা সমস্যা ও উন্নয়ন সম্পর্কে নিজের ধারণা ও পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে আমাদের প্রত্যেককে কিছু কিছু ক্ষুদ্র স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। দেশটা কারো একার নয়, কারো বাবার নয়, দেশটা সবার।’ ইফতারের পর তিনি স্থানীয় নেতা-কর্মীদের ভিড় এড়িয়ে কালের কণ্ঠের সঙ্গে কিছু সময় কথা বলেন।

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ছয় মাস পেরিয়ে গেছে। দেশে একপক্ষের প্রত্যাশা ও অন্যপক্ষের আশঙ্কা ছিল বিএনপি ও তার শরিক দলগুলো বড় ধরনের আন্দোলনে নামবে। কিন্তু আজও সে প্রত্যাশা বা আশঙ্কা বাস্তবে রূপ পায়নি। এর জবাবে তারেক রহমান বলেন, আন্দোলন তো অনেক বড় আকারে হয়েছে। এক মাসের বেশি সময় ঢাকা শহর সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল।

আমরা নির্বাচন-পরবর্তী আন্দোলনের কথা জানতে চাইছি-  এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা- সাংবাদিকরা মাঠের অবস্থার কথা ভালো জানেন। পাঁচ জানুয়ারির পরের দিনের সব সংবাদপত্রের রিপোর্টগুলো যদি আমরা এক জায়গায় করি, তাহলে সহজেই বলে দেওয়া যায়, ৯৫ শতাংশ ভোটার ওই নির্বাচনে ভোট দিতে যায়নি। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে করাপ্ট এবং পলিটিক্যালি বায়াস বর্তমান ইলেকশন কমিশনও বলেছে, যে ১৪৭টি আসনে ভোট হয়েছে তার মধ্যে ৪৪টি কেন্দ্রে কোনো ভোট পড়েনি। ওই ৪৪টি কেন্দ্রে কি আওয়ামী লীগের কোনো লোকজন ছিল না? তারাও ভোট দিতে যায়নি। তার মানে ক্ষেত্রবিশেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আওয়ামী লীগের একটি অংশও নির্বাচন বয়কট করেছে। এখানে প্রমাণ হচ্ছে বর্তমান অবৈধ সংসদের বিরোধী দল নয়, সত্যিকারের বিরোধী দল যদি আন্দোলনের ডাক দেয় তাহলে তা অবশ্যই সফল হবে। এ বিষয়ে বিএনপি ও এর নেতৃত্বাধীন জোটের নেতারা আলোচনায় বসবেন। তাঁদের সিদ্ধান্তেই ধীরে ধীরে কর্মসূচি আসবে।

আপনি নিজে এ আন্দোলনে কিভাবে অ্যাকটিভ থাকতে চাইছেন- এ প্রশ্নের জবাবে তারেক বলেন, সময়মতো এটাও হবে। আগে তো আমি অ্যাকটিভলিই রাজনীতি করেছি।

দেশে বিএনপির মধ্যে একটা স্ট্রং পারসেপশন আছে, তারেক রহমানের উপস্থিতি ছাড়া আন্দোলন তেমন জোরদার হবে না- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই একানব্বই সালে আমরা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছি এবং জয়ী হয়েছি। আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে, সে সময় সব দল একসঙ্গে একটি প্রতিবাদ মিছিল করতে চেয়েছিল। চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার জনসভায় এরশাদ সরকার গুলি চালিয়েছিল। তারই প্রতিবাদে সে মিছিলের আয়োজন হয়। কিন্তু শেখ হাসিনা প্রাণের ভয়ে তাতে অংশ নেননি। সে সময় খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই আন্দোলন সফল হয়েছিল। যে পারসেপশনের কথা বলছেন, তা কিছু লোকের বানানো। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই আন্দোলন হবে এবং তা সফল হবে।

আরেক প্রশ্নের উত্তরে তারেকের জবাব, দলের অনেকে এই মুহূর্তে আন্দোলনে আমার সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখতে চায়। আমি দীর্ঘদিন সক্রিয় রাজনীতি করেছি। এটি তারই সুফল।

নিজের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, আগের থেকে অনেক ভালো। তবে আমার শারীরিক ক্ষতি যেটা করা হয়েছিল, মানে ফ্যাকচারটা- তার এক বছর পর আমি এখানে এসেছি। ডাক্তার আমাকে বলেছেন, তৎক্ষণাৎ যদি অপারেশনটা করা হতো তাহলে সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যেত। কিন্তু দেরি হয়ে গেছে। টেন টু ফিফটি পারসেন্ট সমস্যা সারা জীবনই থেকে যাবে।

এই সাক্ষাৎকারের আগে তারেক রহমান যখন সিটি প্যাভিলিয়নে বক্তব্য রাখছিলেন তখন মাঝে মধ্যেই সেখানে স্থানীয় কর্মীদের বসার জায়গা নিয়ে বিতর্ক ও হৈচৈ হচ্ছিল। এতে বারবার বক্তব্য থামাতে বাধ্য হন তারেক রহমান। তবে বিষয়টি সম্পর্কে তার মন্তব্য, নিজের সংসারকেও কি আমরা সব সময় সমস্যামুক্ত রাখতে পারি? সূত্র: কালের কণ্ঠ