টাইব্রেকারে নায়ক রোমেরো স্বপ্নের শেষ সিঁড়িতে মেসিরা

SHARE

সাও পাওলো: কে জানত একশো কুড়ি মিনিটের পর বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের চূড়ান্ত নায়ক হয়ে দেখা দেবেন সের্জিও রোমেরো! আর্জেন্টিনা গোলকিপার বিশ্বকাপের ভরা গোলকিপারদের বাজারে কোনও কলকেই পাননি। কিন্তু তাঁর টাইব্রেকারে অব্যর্থ দুটো গোল বাঁচানোই লিওনেল মেসিকে তুলে দিল বিশ্বকাপ স্বপ্নের শেষ সিঁড়িতে।image_89869_0

আর্জেন্টিনা ০ (৪)
নেদারল্যান্ডস ০ (২)

মেসি থেকে শুরু করে আর্জেন্টিনার চার জন কিকার গোল করলেন। কমলা জার্সির সেখানে দুটো পেনাল্টি চারটায় নষ্ট। নেদারল্যান্ডস কোচ আগের ম্যাচে শেষ মুহূর্তে টিম ক্রুলকে পেনাল্টির জন্য নামিয়ে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। আজব লাগল ম্যাচ পেনাল্টিতে যেতে পারে জেনেও তিনি তিনটে বদলি আগেই কেন করে নিলেন? ব্রাজিলীয় ডিফেন্সের বেলো কেলেঙ্কারির মতোই ফান গলের কোচিং জীবনে এই প্রশ্নটা এবার সঙ্গে ঘুরবে।

টাইব্রেকার শুরু হওয়ার সময় আর্জেন্টিনা কোচ অ্যালেজেন্দ্রো সাবেয়ার মুখটা দেখলে হয়তো গোলে বল মারতেই পারতেন না মেসিরা৷ নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত সময়েও যেভাবে বেশ কয়েকটি গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট করা আর্জেন্টিনা কোচকে দেখে তখন মনে হচ্ছে যে কোনও সময় তার হার্ট অ্যাটাক হতে পারে৷ আর হবে নাই বা কেন ৷ বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগের থেকেই পাহাড়প্রমাণ চাপ মেসির থেকেও বেশি রয়েছে সাবেয়ার উপর৷ তাকে কোচিং-এর পদে কেন রাখা হয়েছে! একেবারেই বাজে কোচ! ইত্যাদি দেশজ মিডিয়ার নানা সমালোচনা প্রতিদিন সহ্য করতে হচ্ছে তার৷ এদিন আবার প্রতিপক্ষ ছিল নেদারল্যান্ডস৷ চলতি বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত রবেনরাই এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ ছিল আর্জেন্টিনার৷ টাইব্রেকার হওয়ার পর অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, হয়তো এবারও হলো না আর্জেন্টিনার৷ রন ভ্লারের প্রথম পেনাল্টি মিসের পরেই যেন অন্য দৃশ্য, অন্য বডি ল্যাঙ্গোয়েজ হিগুয়েনদের৷ শুধু ভ্লারই নন, ডাচ তারকা স্নাইডারের শটও এদিন ঝাঁপিয়ে পড়ে সেভ করলেন আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক রোমেরো৷ কোস্টারিকার বিরুদ্ধে আগের ম্যাচে পেনাল্টি শ্যুটআউটে রিজার্ভ গোলকিপারকে এনে ফাটকা খেলেছিলেন হল্যান্ড কোচ ভ্যান গাল৷ এদিন ভরসা রাখলেন নিজের প্রথম কিপার সিলেসেনের উপরই৷ গোটা ম্যাচে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভাল সেভ করলেও পেনাল্টি শ্যুট আউটে তার পারফরম্যান্স দেখে নিশ্চয়ই বেঞ্চে বসে হাত নিশপিশ করছিলেন কোস্টারিকা ম্যাচের নায়ক টিম ক্রুল৷ কিন্তু এদিন আফশোস করা ছাড়া আর কোনও উপায়ও ছিল না তার৷ ডাচদের দু’টো শট থামিয়ে এদিনের নায়ক রোমেরোই৷ ম্যাক্সি রদরিগেজের শট জালে জড়াতেই ১৯৯০ সালের পর আবার বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছে গেল ‘লা অ্যালবিসেলেস্তে’রা৷

বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচগুলিতে আর্জেন্টিনা খেলা দেখার পর ‘মেসি ভাল খেললেই আর্জেন্টিনা জিতবে’ এমন ধারণাই হয়ে গিয়েছিল সবার৷ এমনকী, সাবেয়ার দলের রক্ষ্মণভাগ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল৷ বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে আগের ম্যাচ থেকেই যেন অনেক বেশি আঁটোসাঁটো দেখাচ্ছে আর্জেন্টিনাকে৷ ডাচদের মতোই এদিন যেন ‘টোটাল ফুটবল’ ও ‘টিমগেম’ খেলতেই দেখা গিয়েছে জাবালেতাদের৷ উল্টোদিকে অবশ্য ভ্যান পার্সি-রবেন ও স্নাইডারের ত্রিভুজ গোটা ম্যাচেই নাকে দম করে রেখেছিল আর্জেন্টিনা রক্ষ্মণকে৷ কিন্তু ভিনসেন্ট কোম্পানিদের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনাল জেতার পরেই যেন একটা বাড়তি উদ্যম লক্ষ্য করা যাচ্ছে মারাদোনার দেশের৷ লক্ষ্য এখন একটাই,বিশ্বকাপ ট্রফি বুয়েনস আইরেসে নিয়ে যাওয়া৷ আর সেই লক্ষ্যে যেন এখন আরও বেশি অবিচল দেখাচ্ছে লিওনেল মেসিদের৷ মঙ্গলবার জার্মানির কাছে ব্রাজিলের কচুকাটা হওয়া দেখতে দেখতে অনেক  ফুটবল প্রেমীর মনেই আশঙ্কা জেগেছিল, হয়তো বুধবার ব্রাজিলের মতো অতটা না হলেও খারাপ ফল আশা করছে আর্জেন্টিনারও৷ শনিবার তৃতীয় স্থানাধিকারী ম্যাচে কী মুখোমুখি হবে দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী? এমন আশঙ্কাও করা হচ্ছিল৷

কিন্তু বাস্তবে সেটা ঘটেনি৷ শুধু আর্জেন্টিনাই নয়, নেদারল্যান্ডসও যেমন এদিন গোটা ম্যাচ জুড়ে সমান তালে লড়াই চালিয়ে গিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়৷ হয়তো এই কারণেই বুধবার ম্যাচটি টাইব্রেকারে ফয়সালা হওয়াটা সঠিক হয়েছে৷ একবার তো অতিরিক্ত সময়ের শেষদিকে গোলকিপারকে একা পেয়ে হেডে প্রায় গোল করেই ফেলেছিলেন আর্জেন্টিনার প্যালাচিও৷ কিন্তু এদিন দুই গোলকিপারই যেন প্রতিজ্ঞা করে নেমেছিলেন যে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় আজ কিছুতেই গোল খাব না৷ গোল হয়ও নি৷ মেসি-রবেন-স্নাইডার-রদরিগেজের একের পর এক শট বাঁচিয়ে গিয়েছেন তারা৷ বুধবার তাই বৃষ্টির মধ্যেই ব্রাজিলের বাণিজ্য নগরী যে ম্যাচটি দেখল, তাকেই বোধ হয় আদর্শ সেমিফাইনাল ম্যাচ বলে৷ যেখানে গোল না হলেও দু’দলের খেলা দেখেই টিকিটের পয়সা উসুল দর্শকদের৷-ওয়েবসাইট