রবেন, ভ্যান পার্সিদের রুখতে টোটাল ফুটবলেই ভরসা পিন্টোর

SHARE

টোটাল ফুটবল শুধু ডাচরাই খেলতে পারে, তা নয়। বাকিরাও কিন্তু সেটা জানে।’

কথাটা যিনি বলছেন, তিনি চলতি বিশ্বকাপে চমক দেওয়া দলগুলির মধ্যে একটির কোচ। কোচিং শিখেছেন টোটাল ফুটবলের আবিষ্কর্তা রাইনাস মিশেলসের কাছ থেকেই। আশির দশকের শুরুর দিকে কোলোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন জর্জ লুইস পিন্টো। যিনি বর্তমানে কোস্টারিকার কোচ। সেই সময় কোলোনের একটি ক্লাবে কোচিং করাচ্ছেন রাইনাস মিশেলস। এর কয়েক বছর পরেই হল্যান্ডকে তাদের একমাত্র খেতাব এনে দেবেন মিশেলস। ১৯৮৮সালের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। সে সময় প্রায়ই মিশেলসের প্রশিক্ষণ দেখতে চলে যেতেন পিন্টো। কথাও বলতেন ডাচ কিংবদন্তীর সঙ্গে। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে পিন্টো বলেছেন, ‘যখনই ক্লাস থাকতো না, ক্লাবে গিয়ে অনুশীলন দেখতাম। মিশেলসের সঙ্গে কথাও হতো। অনেক কিছু দেখতাম। শিখেওছি।’ খোদ টোটাল ফুটবলের জনকের থেকে শেখা বিদ্যেই যে কাজে লাগাতে চান ডাচ বধের জন্য, সেই ইঙ্গিত দিয়ে দিলেন পিন্টো।image_89175_0

সালভাদোরের এরিনা ফন্টে নোভাতে আজ শনিবার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে নামছে কোস্টারিকা। বিপক্ষে হল্যান্ড। সেই ম্যাচে নামার আগে কার্যত হল্যান্ডের বিরুদ্ধে এভাবেই মনস্তাত্বিক লড়াই শুরু করে দিলেন পিন্টো। একা তিনি নন। ডাচ ফুটবলের অন্দরের সঙ্গে পরিচিত আরও একজন। ব্রায়ান রুইজ। কোস্টারিকার অধিনায়ক গত ম্যাচে গ্রিসের বিরুদ্ধে গোল করেছিলেন। তিনি বর্তমানে খেলেন পি এস ভি আইন্দহোভেনে। সেখানে তার সতীর্থ হল্যান্ডের জিয়র্জিনিও উইজনালদাম এবং মেমফিস ডিপে। রুইজের পাশাপাশি কোস্টারিকার আরেক ভরসা জোয়েল ক্যাম্পবেল। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ড্র, ইতালি ও উরুগুয়েকে হারিয়ে নকআউটে ওঠার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন ক্যাম্পবেল। শুধু আক্রমণে নয়। রক্ষণেও বেশ চমকপ্রদ পারফরম্যান্স কোস্টারিকানদের। এখনও পর্যন্ত মাত্র দু’টি গোল হজম করেছে তারা দিয়েছে পাঁচটি গোল।

সেমিফাইনালে ওঠার পথে হল্যান্ডের সামনে যে মোটেই সহজ হবে না কোস্টারিকা হার্ডল, সেটা ভালো করেই জানেন আর্জেন রবেন। বলেছেন, ‘কোস্টারিকা যথেষ্ট ভালো দল। ওরা এতদূর আসবে তা কেউ ভাবেনি। ম্যাচটা মোটেই সহজ হবে না।’ বিশেষত রবেন এবং ভ্যান পার্সি জুটিকে রুখে দেয়ার জন্য যে বিশেষ পরিকল্পনা থাকবে কোস্টারিকার, তা বলা বাহুল্য।

কোস্টারিকার মিডফিল্ডার সেলসো বর্জেস বলেছেন, ‘ওদের কোনোভাবেই জায়গা দেয়া যাবে না। সামান্য সুযোগ পেলেই ওরা বিপদে ফেলে দিতে পারে।’ হল্যান্ডকে নিয়ে ইতোমধ্যেই হোমওয়ার্ক করেছেন পিন্টো। সেটা বোঝা গেলো তার বিশ্লেষণে। রবেনের প্রশংসা করলেন। একইসঙ্গে বলছিলেন, ‘মেক্সিকো হল্যান্ডের বিরুদ্ধে গোল করেও তা রক্ষা করতে অনেকটা পিছিয়ে গিয়েছিল। ফলে হল্যান্ড জায়গা পাচ্ছিলো। আবার চিলি হল্যান্ডের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক খেললেও অনেকটা জায়গা দিয়ে ফেলেছিলো রবেনদের। তাই ওদের জায়গা দিলেই সমস্যা হবে।’

হল্যান্ডের বিরুদ্ধে পিন্টো পাবেন না ডিফেন্ডার অস্কার দুরাতেকে। গ্রিসের বিরুদ্ধে জোড়া হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। গত ম্যাচে টাইব্রেকারে শট বাঁচিয়ে নায়ক দলের গোলকিপার কেইলর নাভাসের কাঁধে সমস্যা থাকলেও আপাতত সুস্থ তিনি। ফলে শনিবার হল্যান্ডের বিরুদ্ধে তার খেলার সম্ভাবনা বেশি। উল্টোদিকে হল্যান্ড শিবিরে চোট আঘাতের সমস্যা ক্রমেই বাড়ছে। সেকথা মাথায় রেখেই এবং কোস্টারিকার পারফরম্যান্সের নিরিখে হল্যান্ড কোচ লুইস ভ্যান গালও সমীহ করছেন কোস্টারিকাকে। বলেছেন, ‘কোস্টারিকা যথেষ্টই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। তা না হলে ওরা শেষ আটে উঠে আসতো না।’

অতীতে কখনও মুখোমুখি হয়নি কোস্টারিকা এবং হল্যান্ড। ফলে প্রথম সাক্ষাতেই বিপর্যয় এড়ানোর লক্ষ্যে সতর্ক থেকে এগোতে চায় হল্যান্ড। উল্টোদিকে শেষ আটে উঠে ইতোমধ্যেই ইতিহাসে নাম লিখিয়ে ফেলেছে টিকো’রা। হারানোর কিছুই নেই তাদের। বরং, পাওয়ার আছে সবটাই। ফলে ইতিহাসের আরও অধ্যায়ে নিজেদের নাম লিখিয়ে ফেলার সোনার সুযোগ হাতছাড়া করতে কোনওভাবেই রাজি নয় কোস্টারিকা। আর সেই লক্ষ্যে কার্যত ‘গুরুমারা বিদ্যে’ই অবলম্বন করতে চান পিন্টো। রবেন, ভ্যান পার্সিদের আটকাতে ডাচ ফুটবলের প্রতীকি ঘরানা ‘টোটাল ফুটবল’ই ভরসা তার।- ওয়েবসাইট।