কালশীর ঘটনায় দায়ী যারা

SHARE

মিরপুরের কালশীতে বিহারি ক্যাম্পে আগুন ও হামলার পেছনে দায়ী কারা- এ বিষয়ে আমরা গভীর অনুসন্ধান ও তদন্ত চালিয়ে অনেক তথ্য পেয়েছি। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী থেকে শুরু করে বিহারি, সমস্যা নিয়ে যারা কাজ করছেন, কথা হয়েছে এমন অনেকের সঙ্গেই। ব্যতিক্রমহীনভাবে অভিযোগের তীর ছুটেছে এমপি ইলিয়াস মোল্লাহ, তার সাঙ্গপাঙ্গ ও পল্লবী থানার কর্মকর্তাদের দিকে।image_88004_0

কালশীতে কী ঘটেছিল, তা এখন আর কারও জানতে বাকি নেই। শবে বরাতের রাত শেষে বিহারি ক্যাম্পে আগুন লেগে একই পরিবারের নয়জনসহ মোট ১০ জন নিহত হয়। প্রথমে পুলিশ জানায় যে, আতশবাজি থেকে আগুন ছড়িয়েছে। এরপর তারা জানায়, আতশবাজি পোড়ানোকে কেন্দ্র করে বাঙালি-বিহারি সংঘর্ষ হয়েছে। বিহারিরা অভিযোগ তোলে, স্থানীয় এমপি ইলিয়াস মোল্লাহর ক্যাডাররা ও পুলিশ যৌথভাবে তাদের ওপর হামলা করেছে। কিন্তু প্রথমে তাদের কথা কেউ কানে তোলেনি। বরং একাত্তরের ঘাতক বলে বিভিন্ন মাধ্যমে অনেকেই বিহারিদেরই অপরাধী সাব্যস্ত করছিলেন।

ঘটনা বিহারিদের পক্ষে বাঁক নেয় ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মামুন আহমেদের বক্তব্যের সূত্র ধরে। তিনি একটি দৈনিককে জানান, ‘আটটি ঘরে তালা লাগানো ছিল। ভেতরে আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে বাধা দেন হামলাকারীরা। পরে ক্যাম্পের বাসিন্দারা দরজা ভেঙে শিশু-নারীসহ নয়জনের লাশ ও আহত ছয়জনকে উদ্ধার করেন।’ এর সঙ্গে যোগ হয় ইন্টারনেটে আপলোড হতে থাকা ভিডিও ফুটেজ।

এসবের মধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন সেখানে ছুটে যায়। অধিকাংশ দল ও ব্যক্তি এমপি ইলিয়াস মোল্লাহকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। পাশাপাশি পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও ওঠে। জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ওই ঘটনায় ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি করেছে পুলিশ। আর চারটি করেছে বিহারিরা। তবে মামলার তদন্তে অগ্রগতি নেই। এখনও দায়ী কাউকে গ্রেপ্তারও করতে পারেনি পুলিশ।

ঘটনাবলি আপাতত এখানে এসেই থমকে আছে। অভিযুক্ত সব পক্ষই তাদের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছে। বিহারিরা, নাগরিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের নেতারা দুর্বলভাবে এখনো অভিযুক্তদের বিচার ও শাস্তির দাবি করে চলেছেন। আরেকটা ইস্যু এসে হাজির হলেই এই দাবির আওয়াজও স্তিমিত হয়ে যাবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এভাবে রামু, মালোপাড়ার পাশে কালশী একটি নতুন নাম হিসেবে যোগ হবে আর এখানেও অপরাধীরা থেকে যাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে! কিন্তু কারা এই অপরাধী? কার কোন স্বার্থ হাসিলের জন্য নিভে গেল ১০টি তাজা প্রাণ!

দায়ী যারা
সবার আগে এই ঘটনায় এমপি ইলিয়াস মোল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার তিন দিন আগে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে বাদানুবাদের পর তিনি বিহারিদের ৪৮ ঘণ্টার ভেতর দেখে নেয়া হবে মর্মে হুমকি দেন। তিন দিন বাদেই শবে বরাতের রাত শেষে ভোরে পুলিশের সামনেই ক্যাম্পের ইয়াসিনের ঘরে তালা ঝুলিয়ে গান পাউডার ছিটিয়ে ১০/১৫টি ঘরে আগুন  লাগিয়ে দেয়  যুবলীগের আবু  তাহের। সে পল্লবী থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানার লোক। জুয়েল রানার নেতৃত্বে দেড় শতাধিক লোক হামলা চালায় এবং লুটপাট করে। তখন গেসু, সোহাগ, মুকুল, রুবেল, ফরমা ইব্রাহীম, বাবুল, আলমগীর, বিল্লাল, বিল্লালের ছেলে জুয়েল ছাড়াও গিয়াস, হেলাল, ফারুক, টিটু ও সেলিম নামক স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত ছিল। বিভিন্ন স্থানে এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন বিহারিরা।

বিহারি ক্যাম্পের বিভিন্ন ঘরে ঢুকে শ্লীলতাহানি ও হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর চালায় মুরাদ, রনি, আরজু, ইনু, নীলা, সাব্বির, পুতুল, এনামুল, ফিরোজ, ছুটু, পাপ্পু ও হাসান। এদের প্রত্যেককেই মামলায় আসামি করা হয়েছে। তবে পুরো হামলার অগ্রভাগে ছিলেন পল্লবী থানা যুবলীগের নেতা জুয়েল রানা, শরিফুল ইসলাম, সেন্টু ও নিয়াজ। গোয়েন্দা রিপোর্টে হামলায় এদের জড়িত থাকার দাবি করা হয়েছে। পুলিশ এই চারজনকে নজরদারির মধ্যে রেখেছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জুয়েল রানাই এদিকে এমপির ডান হাত। ওদিকে আছে আশিক আর ঝুট বাপ্পী। কালা ও তার ভাই তৈয়ব এবং তাদের মিত্র তাজু এমপির হয়ে বাউনিয়ার দিকে সব কাজকর্ম করে। তাদের সহযোগী শাকিল, নাসিম ও রিয়াজ। সন্ত্রাসী নাইজ্যা ও ফালান গ্রুপের নেতারা ক্রসফায়ারে মারা যাওয়ার পর তাদের বাহিনীও ভিড়েছে এই চক্রে। এদের সবাইকেই ঘটনার তিন দিন আগে বিদ্যুৎ নিয়ে বাহাসের সময় এমপির পাশে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। এছাড়া এমপির বাহিনীর অন্যতম বাদ বাকি ক্যাডাররা হচ্ছে শুটার জুয়েল, কিলার আড্ডু, বিহারি পারভেজ, বিহারি শাকিল, তুলা রনি, গিশ বাবু, জামিল, রমজান, বাদল, তৌহিদ, জিশান, জাবেদ, সুমনসহ আরও প্রায় ২০-৩০ জন।

দায় শুধু এমপি ও তার কর্মীদের নয়, অনেকখানি বর্তায় পুলিশের কাঁধেও। বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দা শাহজাদী বেগম আমাদের জানান, ঘটনার দিন সকালে যুবলীগের নেতাকর্মী ও পুলিশ একজোট হয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় পল্লবী থানার এসআই জহির তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দেন ও মারধর করেন। এভাবে অনেক নারীকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

ওই ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, বিহারি ক্যাম্পে বহিরাগতরা হামলা চালানোর সময় পুলিশ তাদের সঙ্গেই ছিল। হামলাকারীরা যখন লাঠিসোঁটা নিয়ে ক্যাম্পের দিকে আসতে থাকে, তখনও তাদের সঙ্গে পুলিশ ছিল। কালশী নতুন রাস্তার মোড় থেকে ক্যাম্পের সামনে আসার সময় বহিরাগতদের সঙ্গে পুলিশও আসে। এমনকি বহিরাগতরা পুলিশ সদস্যদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছে, এমন দৃশ্যও সেখানে দেখা গেছে।

স্ট্র্যান্ডেড পাকিস্তানিজ জেনারেল রিপেট্রিয়েশন কমিটির (এসপিজিআরসি) কুর্মিটোলা ক্যাম্পের প্রচার সম্পাদক মো. হাসান বলেন, ‘ইলিয়াস মোল্লাহর নির্দেশে পুলিশের সহায়তায় যুবলীগ হামলা চালিয়েছে। হামলার পর আগুন নিভাতে দেয়নি পুলিশ। ওই সময় পুলিশ ক্যাম্পে গুলি চালিয়েছে। পুলিশ জানে বলেই তাদের ধরছে না। কেননা তাদের ধরলে পুলিশ নিজেই ফেঁসে যাবে।’

কুর্মিটোলা ক্যাম্প পরিদর্শনে গিয়ে গত সোমবার আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল দাবি করেন, ‘পুলিশের ব্যর্থতার কারণেই মিরপুরের ঘটনা ঘটেছে।’

বিহারিরা পল্লবী থানার ওসি সৈয়দ জিয়াউজ্জামান, এসআই জহির ও সেকেন্ড অফিসার এসআই ইয়াসিনের বিরুদ্ধে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছে। ওয়েলফেয়ার মিশন অব বিহারিজ-এর সভাপতি   মোশতাক  আহমেদ  বলেন, ‘বহিরাগতদের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে ষড়যন্ত্রে জড়িত রয়েছে পল্লবী থানা। এ থানার কিছু কর্মকর্তা বহিরাগতদের সঙ্গে টাকা-পয়সার বিনিময়ে এ ঘটনাকে নীরব সমর্থন জানিয়ে আসছে। যখন এখানে আগুন লাগে তখন তা নেভানোর চেষ্টা না করে বরং যারা আগুন নেভাতে এসেছিল তাদের দিকে রাবার বুলেট ছুড়েছে পুলিশ।’

ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত যেসব সন্ত্রাসীর নাম এসেছে তাদের কেউ গ্রেপ্তারও হয়নি। পুলিশের সম্পৃক্ততা আছে এমন অভিযোগ উঠলেও বিভাগীয় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

কেন হামলা!
হামলার পেছনে যুক্ত থাকা অনেকের নামই পাওয়া গেছে। কিন্তু কেন, কিসের আশায় এই নারকীয় তাণ্ডব? আওয়ামী লীগ নেতার স্বার্থটা এখানে কী? পুলিশই বা কেন তাদের পক্ষে এভাবে মাঠে নামল? তাদের স্বার্থটা কোথায়?

কুর্মিটোলা বিহারি ক্যাম্প, মিল্লাত ক্যাম্প, নতুন কুর্মিটোলা ক্যাম্প একেবারেই কাছাকাছি অবস্থিত। মিরপুরের এই সংসদীয় এলাকায় (ঢাকা-১৬) মোট ৪০টি বিহারি ক্যাম্প রয়েছে, যাতে ৬০ থেকে ৭০ হাজার বিহারি বসবাস করে। এর মধ্যে কুর্মিটোলা ক্যাম্পে প্রায় ৫ হাজার বিহারির বাস। সরকারি হিসাবে ৭৭৪ পরিবার। এটি মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের ই ও ডি ব্লকে অবস্থিত।

ক্যাম্পের ৭৭৪ পরিবারের জন্য রয়েছে মাত্র একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটার। ক্যাম্পের পূর্ব দিকে বাউনিয়াবাদ বাজার ও লালমাটিয়া এলাকার শুরুতেই রয়েছে রাজুর বস্তি। পশ্চিমে বেগুনটিলা এবং মুক্তিযোদ্ধা বস্তি। এই বাউনিয়াবাদ, লালমাটিয়া, বেগুনটিলা ও কিছুটা দূরবর্তী রূপনগরই হচ্ছে এমপি ইলিয়াস মোল্লাহর ঘাঁটি।

বিহারিদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত নির্বাচন থেকে। গত সংসদ নির্বাচনে কুর্মিটোলা ক্যাম্পের বিহারিদের মধ্য হতে নৌকা প্রতীকে আশানুরূপ ভোট না পড়ায় বর্তমান সাংসদ এ ক্যাম্পের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করে আসছেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয় এমপি ও তার লোকজনের জমিখেকো মনোভাব। জমি দখল, চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণের মতো সব অভিযোগই আছে এমপির ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে। যে জুয়েল রানার নেতৃত্বে কালশীতে হামলা হয়েছে, তার নামে ইতোপূর্বে ধর্ষণের মামলা ছিল। ধর্ষিতা সেই মেয়েটি অপমানে আত্মহত্যা করেছিল। জমি নিয়ে এমপির লোকজনের সঙ্গে বিভিন্ন গ্রুপের বিবাদ ও তা নিয়ে ওই এলাকায় দ্বন্দ্বটা সাধারণ ঘটনা।

জানা গেছে, বছর পাঁচেক আগে বাউনিয়া বাঁধ সংলগ্ন জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের জমিতে এমপির মদদপুষ্ট জনৈক রাজু ৪০০ পরিবার নিয়ে একটি বস্তি গড়ে তোলেন, যা এখন রাজু বস্তি নামে পরিচিত। এই বস্তিতে বিদ্যুৎ সংযোগের সূত্র ধরে বিহারিদের সঙ্গে ঘটনার তিনদিন আগে বাদানুবাদ হয়। বিহারি নেতারা মনে করেন, এটা একটা ছুতো মাত্র। এখান থেকে বিহারিদের উচ্ছেদ করাই তাদের উদ্দেশ্য।

বাংলাদেশি অবাঙালি পুনর্বাসন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন বলেন, ‘কালশী-বিমানবন্দর নতুন সড়কটি হবার পর এই ক্যাম্পের ও এর আশেপাশের জায়গার দাম বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই সন্ত্রাসী ভূমিদস্যুরা কীভাবে বিহারিদের এখান থেকে উচ্ছেদ করে জায়গা দখল করবে তার জন্য নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।’

ক্যাম্পের অধিবাসী নিজামুদ্দিন বলেন, ‘এই এলাকা দীর্ঘকাল থেকে আমরা দেখে আসছি। এখানে শুধু বিহারিরাই ছিল। কিন্তু এখন চারপাশে বাঙালিরা বেড়েছে। এই কুর্মিটোলা ক্যাম্পের পাশেই আগে ছিল জাগরণী মাঠ। এখন সেখানে শুধু একটা ক্লাব আছে। সব জায়গা দখল করা হয়েছে। বিহারিদের দু’ চারজনকে হাত করে তারা প্রথমে কিছু টাকা দেয়। তারপর কাগজপত্র করে পুলিশ নিয়ে এসে জায়গা দখল করে। বিহারিরা এখন সংখ্যা ও আয়তন, দু’ দিক থেকেই কমছে।’

তিনি আরও জানান, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যাশনাল হাউজিং আমাদের এই জায়গা (বিহারি ক্যাম্প) বরাদ্দ দিয়েছে বহিরাগতদের কাছে। ২০০৩ সালে মিরপুর ১১ নম্বরের এডিসি ক্যাম্প তারা আগুনে পুড়িয়ে দেয়। অথচ এটা নিয়ে হাইকোর্টে মামলা রয়েছে। রায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের উচ্ছেদ করা যাবে না মর্মে স্টে অর্ডার রয়েছে হাইকোর্টের। অথচ বহিরাগতরা প্রায়ই জায়গা দখল করতে আসে। তারা সবসময় ক্যাম্প খালি করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

এর সঙ্গে পুলিশের যোগ কতখানি! এ বিষয়ে প্রশ্ন ওঠামাত্রই কুর্মিটোলা ক্যাম্পের বিহারি নেতা মুন্না বলেন, ‘জনি নামে আমাদের একজনকে পল্লবী থানার এসআই জাহিদুর রহমান খান থানায় নিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে। থানা এখানে সব সময়ই আমাদের বিরুদ্ধে।’ জানা গেছে, থানায় যেসব কর্মকর্তা আসেন, তারা একটা ভীতি নিয়েই এ এলাকায় থাকেন। বিহারিদের সম্পর্কে ভীতিকর অনেক গল্প চালু আছে থানাপাড়ায়। ফলে বাঙালি পুলিশ কর্মকর্তারা সব সময়ই বিহারিদের নিয়ে আতঙ্কে থাকেন ও তাদের শত্রু জ্ঞান করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পল্লবী থানার পুলিশ কর্মকর্তারা ইলিয়াস মোল্লাহর মতের বাইরে যেতে পারেন না। ইলিয়াস মোল্লাহর ক্যাডারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করায় এর আগে পল্লবী জোনের একজন এডিসি ও দুই ওসিকে বদলি করা হয়েছিল। এসব নিয়ে মিরপুর জোনের পুলিশ প্রশাসনের মধ্যেও রয়েছে বদলি আতঙ্ক। সম্প্রতি পল্লবী থানার বর্তমান ওসি সৈয়দ জিয়াউজ্জামানকে বদলি করার চেষ্টা করেন ইলিয়াস মোল্লা। এজন্য এমপি দুবার ডিও লেটার দিয়েছেন। জানা গেছে, এর পরই এমপির সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা চালান ওসি। কালশীর ঘটনার মধ্য দিয়ে তিনি এমপির আস্থাভাজন হয়ে ওঠার পরীক্ষায় পাস করেছেন।

সাংসদের বক্তব্য
এমপি ইলিয়াস মোল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘আমার যা বলার আমি তা অসংখ্যবার বলেছি। বিপক্ষরাই আমার বিরুদ্ধে যা তা বলেছে। তা না দেখে আপনারা সাংবাদিকরা যে যা বলছে, তাই ছেপে দিচ্ছেন। এজন্যেই আমি চাই, সত্য ঘটনা উদঘাটন হোক। তদন্ত হোক। তদন্তে কারও নাম বেরিয়ে আসলে তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমার ওপরে অপবাদ দিবে, এটা হতে পারে না। সত্য উদঘাটনে আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই আমি। সত্য উদঘাটন হলেই দেখবেন আমার কোনো দোষ নেই।’

হামলায় যাদের দেখা গেছে, তারা আপনারই লোক, আপনার হয়ে নির্বাচন করেছে, আপনার সঙ্গে কাজ করে। তাদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নিলেন?

‘আমার লোক তো অবশ্যই ছিল, তবে হামলায় না। তারা গিয়েছিল ঠেকাতে। বিহারিদের মধ্যে কিছু বহিরাগত আছে। তারা পুলিশ ও আমাদের যারা ঠেকাতে গিয়েছিল তাদের ওপর হামলা করেছে।’

তাহলে হামলাটা করল কারা?
‘তদন্ত করতে দিন। এটা পুলিশ খুঁজে বের করতে পারবে। তারা সেখানে উপস্থিত ছিল। আর এটাই তো তাদের কাজ। দয়া করে আমার বিরুদ্ধে আর যা তা লেখবেন না।’

পুলিশের বক্তব্য
এ প্রসঙ্গে পুলিশের মিরপুর জোনের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ইমতিয়াজ আহমেদকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। তথ্য সংগ্রহ করে যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। এখনও বলার মতো কোনো অগ্রগতি নেই।’

তবে পুলিশের সম্পৃক্ততা বা দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি দাবি করেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে দায়িত্বে অবহেলা ছিল না। ওসির সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি, পুলিশ না থাকলে ওইদিন আরও বড় ধরনের ঘটনা ঘটত।’

তিনি আরও বলেন, ‘মূলত বিহারিদের কয়েকটি গ্রুপের মধ্যে ঝামেলা আছে আগে থেকেই। তাদের মধ্যকার কোন্দলের ফলেও এ ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা সব সম্ভাবনাই বিবেচনায় রাখছি। পুলিশ বা এমপির কথা বললে তদন্ত ব্যাহত হয়। আপনি কাউকে দেখিয়ে দিতে পারেন না। এতে তদন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এভাবে প্রভাবিত না করলে বরং তদন্তেই বেরিয়ে আসবে, কে আসল অপরাধী।’

কিন্তু পুলিশের তদন্ত তো আলোর মুখ দেখে না অনেক ক্ষেত্রেই। আর পুলিশের বিরুদ্ধেই যেখানে অভিযোগ, সেখানে তাদের তদন্ত কতটুকু গ্রহণযোগ্য? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি গঠন হচ্ছে তদন্তের জন্য। তারা সবাই তো আর পুলিশ না। আপনারা এর-ওর নাম বলে তদন্তকে প্রভাবিত না করে অপেক্ষা করুন। সময়মতো সবই বেরিয়ে আসবে।’