আতঙ্কে পোশাক কারখানার মালিকরা

SHARE

পোশাক কারখানার মালিকরা বিশাল আতঙ্কে আছেন৷ কারণ নিরাপত্তা ইস্যুতে কারখানাগুলোর সংস্কার বা সেগুলো নতুন ভবনে স্থানান্তরের জন্য অর্থের সংস্থান এখনো নিশ্চিত হয়নি৷ আর তার ওপর আছে শ্রমিকদের বর্ধিত মজুরির চাপ৷image_87840_0

গত বছরের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে এক হাজার ১৩৪ জন শ্রমিকের মৃত্যু এবং এর আগে তাজরীন ফ্যাশানস-এ আগুনের ঘটনায় শ্রমিক নিরাপত্তা এবং ন্যূনতম মজুরি নিয়ে চাপের মুখে পড়ে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প৷ শ্রমিকদের নিরাপত্তা, ভবনসহ নানা বিষয় দেখতে স্থানীয়ভাবে পাঁচ হাজার ৫০০ পোশাক কারাখানা এরই মধ্যে পরিদর্শনের আওতায় এসেছে৷ এর বাইরেও ক্রেতাদের জোট দুই হাজার ১০০টি পোশাক কারখানা পরিদর্শন করেছে।ক্রেতারা এখন স্বাভাবিকভাবেই ত্রুটিপূর্ণ কারখানা বন্ধ করে সংস্কার বা নতুন ভবনে কারখানাগুলি সরিয়ে নেয়ার তাগিদ দিচ্ছে মালিকদের৷ কিন্তু এই কাজের খরচ এবং বন্ধ অবস্থায় শ্রমিকদের বেতন কোথা থেকে আসবে – সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে তাদের কাছে৷

ক্রেতারা এ জন্য ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি তহবিল গঠনের কথা বলেছে৷ এছাড়া স্বল্প সুদে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার ঋণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে৷ যে সব পোশাক কারখানা বন্ধ করা হবে, তাদের শ্রমিকদের দুই মাসের আংশিক বেতন পরিশোধের প্রতিশ্রুতিও পাওয়া গেছে৷ তবে একই সঙ্গে এর মধ্যে ১৪টি পোশাক কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশে৷

গত বছরের ১লা ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশে পোশাক কারখানায় নতুন মজুরি কার্যকর হয়৷ ৭৭ ভাগ মজুরি বৃদ্ধি পেয়ে শ্রমিকদের এখন সর্বনিম্ন মজুরি দাঁড়িয়েছে ৫,৩০০ টাকা৷ কিন্তু মজুরি বৃদ্ধির এই চাপ সহ্য করতে পারছে না অনেক পোশাক কারখানাই৷ এর মূল কারণ, আন্তর্জাতিক ক্রেতারা পোশাকের দাম বাড়াচ্ছে না৷ ফলে ছোট ছোট অনেক পোশাক কারাখানা এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-র সহ সভাপতি শহীদুল আযিম৷

৯৪৬টি পোশাক কারখানার ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে যে, তাদের মাত্র ৪০ ভাগ নতুন মজুরি বাস্তবায়ন করতে পেরেছে৷ শহীদুল আযিম জানান, ‘‘অনেক পোশাক কারখানারই নতুন মজুরি বাস্তবায়নের সক্ষমতা নেই৷”

কাজের পরিবশে এবং নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলি গত ছয় মাসে ১১ কোটি ডলারের কার্যাদেশ হারিয়েছে। এরপরেও আরো কার্যাদেশ বাতিলের আশঙ্কা করছে বিজিএমইএ৷

বিজিএমইএ-র সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, “৫৭টি পোশাক কারখানা থেকে গত ছয় মাসে ১১ কোটি ডলারের কার্যাদেশ বাতিল হয়েছে৷ সংখ্যার হিসাবে যা প্রায় ২০ কোটি পিস পোশাক৷”

তিনি জানান, পোশাক শিল্পের ৪০ শতাংশ কারখানাই শেয়ার্ড বিল্ডিংয়ে৷ সেখানে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ইস্যুই এখন প্রধান৷ এ সব কারখানায় শতকরা ১৫ ভাগ শ্রমিক কাজ করেন৷ এভাবে কার্যাদেশ বাতিল হলে লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হবেন৷

নিরাপত্তা, কম মজুরি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা প্রশ্নে পশ্চিমা ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে৷ বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে তারা ভারত, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়ায় চলে যাচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে৷

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ৷ রফতানি আয়ের প্রায় ৮০ ভাগ আসে এই খাত থেকে৷ পোশাক কারখানায় নিয়োজিত আছে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক, যাদের ৮০ ভাগই নারী৷ তাই পোশাক কারখানার এ ধরনের বিপর্যয় পুরো অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ফেলবে৷ ব্যবসা হারাবেন বাংলাদেশের অনেক পোশাক কারখানার মালিক৷ সূত্র: ডিডব্লিউ