কলম্বিয়া মানেই কি নেইমারের জন্য ‘অভিশাপ’

SHARE
neimarব্রাজিল বনাম কলম্বিয়া মানেই কি সেটা ‘অভিশাপ’ নেইমার দ্য সিলভা জুনিয়রের জন্য? ব্রাজিল বিশ্বকাপে এই ম্যাচের পরেই শেষ হয়ে গিয়েছিল তার বিশ্বকাপ। জুনিগার কড়া ট্যাকলে এতটাই গুরুতর চোট পান নেইমার যে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল আদৌ আর কোনো দিন মাঠে নামতে পারবেন কি না?

সে দিনের পরে এক বছরও কাটেনি। নেইমারের ফুটবলজীবনে ফিরে এলো কলম্বিয়া নামক ‘অভিশাপ’। সে দিনের বিশ্বকাপের মতোই এদিন কোপা আমেরিকার স্বপ্নও শেষ হয়ে গেল নেইমারের। কলম্বিয়া ম্যাচে রেফারির সঙ্গে খারাপ আচরণ করায় চার ম্যাচ সাসপেন্ড হলেন ব্রাজিলীয় তারকা। যে খবরের বিস্ফোরণের জেরে ব্রাজিলীয় ফুটবল ফেডারেশনে বড় মাত্রার ভূকম্প হয়েছে। মাথায় হাত কর্তাদের। তারা বুঝতে পারছেন না শুক্রবার পর্যন্ত এক ম্যাচ সাসপেনশন পাওয়া নেইমার হঠাত্ করে কোপা থেকে ছিটকে গেলেন কেন? কী এমন হলো যে তার সাসপেনশন বাড়িয়ে দেওয়া হলো?

শোনা যাচ্ছে, কনমেবোলের কর্তারা ম্যাচটার ভিডিও দেখেছেন। যেখানে কলম্বিয়ার এক ফুটবলারকে হেড বাট করা ছাড়াও জুনিগাকে অকথ্য গালিগালাজ করেন নেইমার। তাতে অবশ্য চটেনি লাতিন আমেরকিার ফেডারেশন। তাদের মূল অভিযোগ, বার্সা মহাতারকা নাকি ম্যাচ শেষের পরে টানেলে রেফারির সঙ্গে ঝামেলা করেন। লাল কার্ড দেখার পরে খুবই চটে যান ব্রাজিল তারকা। টানেলে গিয়েও অপেক্ষা করতে থাকেন রেফারির জন্য। রেফারি ড্রেসিংরুমে যাওয়ার পথে তাকে অকথ্য গালিগালাজ করেন নেইমার। জানতে চান, কোন ভিত্তিতে তাকে লাল কার্ড দেখানো হলো। নেইমারের এহেন আচরণের পরেই তার এক ম্যাচ সাসপেনশনের সঙ্গে আরও তিন ম্যাচ জুড়ে দেন কনমেবোল কর্তারা।

সাসপেনশনের পরে অবাক করেই নেইমার পাশে পেলেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের ফুটবলার ও কোচকে। আর্জেন্টিনার তারকা জাভিয়ার মাসচেরানো বলে দিলেন, এটা নাকি নেইমারের বিরুদ্ধে ফেডারেশনের চক্রান্ত। ‘‘কোপায় এ রকম ঘটনাই ঘটে। নেইমারকে প্রায় কুড়ি বার লাথি মারা হয়। কিন্তু অবাক করে একটা হ্যান্ডবলের জন্য ওকে হলুদ কার্ড দেখতে হয়,’’ বলছেন মাসচেরানো। যিনি মনে করেন যে, নেইমারের মতো বিশ্বমানের প্রতিভাকে স্বাধীন ভাবে খেলতে দেওয়া হয় না। ‘‘মনে রাখতে হবে নেইমারের বয়স কিন্তু তেইশ। ওকে দশ বার লাথি মারলে ও রেগে যেতে বাধ্য।’’ আর জেরার্ডো মার্টিনোর সাফ বক্তব্য, নেইমারের এই শাস্তি প্রাপ্য নয়।

তবে নেইমারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন প্রাক্তন ব্রাজিল স্ট্রাইকার লুই রোনাল্ডো। বলে দিলেন, ব্রাজিলের ঐতিহাসিক হলুদ জার্সি পরা মানে দায়িত্ব নিতে শেখা। ‘‘নেইমার প্রথম থেকেই খুব আগ্রাসী ব্যবহার করছিল, যেটা মানা যায় না। ব্রাজিল জার্সি পরা মানে আরও দায়িত্ব নিতে শিখতে হবে।’’

নেইমারহীন ব্রাজিলের ভবিষ্যত্ তা হলে কী? কাকে নেইমারের দায়িত্ব দেওয়া হবে? গ্রুপ সি-র যা পরিস্থিতি, তাতে শেষ ম্যাচে ভেনেজুয়েলাকে হারাতেই হবে। কয়েক মাস আগের লুই ফিলিপ স্কোলারির মতোই অবস্থা বর্তমান কোচ দুঙ্গার। যাকে ভাবতে হচ্ছে, নেইমারের জায়গায় কে খেলতে পারেন? প্রথমে যার নাম উঠে আসছে তিনি হচ্ছেন রবিনহো। কোপার স্কোয়াডে তার প্রত্যাবর্তন ঘটলেও এখনও পর্যন্ত ম্যাচ খেলেননি তিনি। তবে শুক্রবার অনুশীলনে নাকি বার্সার তারকার জায়গায় তাকেই ঝালিয়ে নেওয়া হয়। নেইমারের দ্বিতীয় বদলি হিসাবে থাকতে পারেন ফিলিপ কুটিনহো। তবে অনভিজ্ঞ এই ফুটবলারকে এত বড় দায়িত্ব না-ও দিতে পারেন দুঙ্গা। শেষমেশ হয়তো ফর্মেশন পাল্টে ৪-৪-২ করতে পারেন ব্রাজিলের কোচ। সেন্টার ফরোয়ার্ডে  ফির্মিনো-তারদেলির জুটি।

কনমেবোলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আবেদন জানাতে পারে ব্রাজিল। তবে দুঙ্গা জানিয়েছেন, তার প্ল্যান বি তৈরি। ‘‘আগেও তো নেইমারকে ছাড়া খেলেছি। আমাদের তৈরি থাকতে হবে। অবশ্যই ওর মতো ফুটবলার না থাকাটা ক্ষতি। তবে এখন ভাবতে হবে যারা আছে তাদের মধ্যে কে খেলবে।’’ নেইমারের খারাপ আচরণ নয়, রেফারিকেই এই ঘটনার জন্য দোষ দিচ্ছেন ১৯৯৪ বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল অধিনায়ক। ‘‘মানছি নেইমার খারাপ ব্যবহার করেছে। কিন্তু ওকেও পুরো ম্যাচ অনেক কটূক্তি সহ্য করতে হয়েছে। এভাবে কাউকে সাসপেন্ড করে দিলে সবাইকে বাড়িতে বসে থাকতে হবে।’’

নেইমার শেষ বার যখন বড় একটা টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন, তার পরের ম্যাচে ব্রাজিলের ভাগ্যে কী ছিল, দেশের কেউ ভুলেছেন বলে মনে হয় না। এবার কি মহাতারকাকে ছেড়ে কোপা-স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে ব্রাজিল? নাকি নতুন কোনো বিপর্যয় অপেক্ষা করে আছে পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের কপালে?

অপেক্ষা আর কয়েক ঘণ্টা।