সারাদেশে অব্যাহত খুন, গুম ও অপহরণের প্রতিবাদে আগামী ৯ জুন আগামী সোমবার সারাদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ১৯ দলীয় জোট।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
রিজভী আহমেদ বলেন, র্যাবকে গঠন করা হযেছিলো জনগণের জান-মাল রক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য। কিন্তু এ অবৈধ সরকার র্যাবকে কিলিং স্কোয়াডে পরিণত করেছে।
তিনি গতকালের ১৯ দলীয় জোটের বৈঠকে সারাদেশে অব্যাহত গুম-খুনের প্রতিবাদ জানানো হয় বলে উল্লেখ করেন।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে উদ্দেশ্য করে রিজভী বলেন, তার মতো পরান্নজীবি বৃন্তচ্যুত বামপন্থীরা অপহরণ আর লাশের মিছিলের বাস্তবতায় এখন মন্ত্রী। নিজের এই অবৈধ চাকরীকে টিকিয়ে রাখার জন্য অবৈধ মনিব প্রধানমন্ত্রীকে সবসময় খুশী রাখতে বিরোধী দলের প্রতি এই সমস্ত উস্কানী, প্ররোচণা, অসভ্যতামূলক বক্তব্য প্রদান করে যাচ্ছে। আত্মবিশ্বাস হারিয়ে গেলে, স্নায়ু শিথিল হলে, হৃদয় দুর্বল হলে তখন পা চাটা মুসাহেব হওয়া ছাড়া কোনো কর্মই থাকেনা।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি হাসানুল হক ইনু বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জঙ্গীবাদের নেত্রী বলার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান।
রিজভী বলেন, নিজের পাতে ক্ষমতার সামান্য একটু ঝোল ঢেলে নিতে হাসানুল হক ইনুর মতো মন্ত্রী ও নেতারা এতটাই উন্মত্ত্ব ও বিপথগামী যার ফলে এখন তাদের চৈতন্য লোপ পেয়ে গেছে।
ইনুকে উদ্দেশ্য করে রিজভী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত হয়ে ওঠা গডফাদারের রক্তঝরানো জনপদ নারায়ণগঞ্জের মানুষ যার নামে শুনলে গভীর ঘুমের মধ্যে আঁতকে উঠে তাকেই যখন প্রধানমন্ত্রী মাতৃস্নেহে আশ্রয় দেন তখন নিশ্চুপ থাকতে আপনার বিবেকে বাধে না ? ফেনীর নিজাম হাজারী, লক্ষীপুরের আবু তাহের কার স্নেহে লালিত পালিত হয় সেটি কী আপনি জানেন না?
হাসানুল হক ইনু অবৈধ ক্ষমতার জোরে রাজনীতিতে নি:স্ব, নিসম্বল মুশীক এখন ঐরাবতে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, বাস্তবতা হলো তিনি নিশ্চিত হতে পারছেন না, কতটুকু চামচামি করলে মন্ত্রীত্ব টিকে থাকবে।
তিনি বলেন, যে প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক খেতাবপ্রাপ্ত দুর্নীতিবাজকে দেশপ্রেমিক বলতে পারেন সেই প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে প্রতিনিয়ত গুণকীর্তন আর বাণীবন্দনা ইনুদের মতো লোকদের মুখেই শোভা পায়। দুর্নীতি-নীতিহীনতা-স্বজনপোষণ, প্রতিপক্ষকে হত্যা, মহামারীর ন্যায় গুম, খুন যে সরকারের প্রধান কর্মসূচি সেই সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাতকচলানো অর্থিপ্রার্থী ছাড়া তার কাছ থেকে আর কিইবা জনগণ আশা করতে পারে।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে একটির বদলে দশটি লাশ ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন, এহেন আত্মস্বীকৃত হত্যার নির্দেশদাতাকে আপনি কী বলবেন ইনু সাহেব ? আপনি কী তখন কোনো শব্দ খুঁজে পান না ?
তিনি বলেন, কথায় বলে তেলাপোকাও পাখী আবার ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনও গণতন্ত্র। এই নির্বাচনকে গণতন্ত্র হিসেবে পরিকীর্তিত করার জন্য ইনু সাহেবদের কী প্রাণান্তকর চেষ্টা।
তিনি বলেন, হিটলারের দলের নামও ছিল সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি। দেশে দেশে নিষ্ঠুর ফ্যাসিষ্ট সরকার’রা গালভরা বুলি দিয়ে জনগণকে ধোকা দেয়ার চেষ্টা করতেন। তাতে কারো শেষ রক্ষা হয়নি।
বুধবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯ দলীয় জোটের সভার কথা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, সভায় কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তগুলো হলো-
১। সমপ্রতি বেআইনী গুম, খুন, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় চরম মাত্রায় উপনীত হয়েছে। বর্তমানে র্যাবকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে কেবল বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদেরকেই হত্যা নয় বরং টাকার বিনিময়ে গডফাদারদের দুস্কর্মের সঙ্গী হয়ে র্যাব সাধারণ মানুষকেও হত্যার বানিজ্যে নেমে পড়েছে। সমপ্রতি নারায়ণগঞ্জ ও ফেনীতে লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের ঘটনা তারই চরম বহি:প্রকাশ। সভায় দেশব্যাপী অবৈধ সরকারের মদদে অপহরণ, গুম, খুনের প্রকোপ বৃদ্ধি এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিশেষ করে র্যাবের অনৈতিক অরাজক কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
২। অবৈধ সরকার ভয় পেয়ে ঢাকা মহানগরীতে সভা সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। এমনকি ঘরোয়া রাজনীতিতেও যতটুকু সভা সমাবেশ করার সুযোগ থাকে সেটিকেও কেড়ে নেয়া হয়েছে। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ঢাকা মহানগরীতে সভা সমাবেশ উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জোর দাবি করা হয়।
৩। কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের নাইক্ষংছড়ি সীমান্তে বার্মার সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর গুলিতে বিজিবি’র নায়েব সুবেদার মিজানুর রহমান নিহতের ঘটনায় সভায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সভায় আরো বলা হয়-এই মর্মান্তিক ঘটনা সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতিরই প্রতিফলন। সরকার দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৈৗমত্ব বিষয়ে উদাসীন বলেই সীমান্ত সুরক্ষিত করতে কোন কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করতে পারেনি।
৪। অবৈধ সরকারের ব্যর্থতার কারণেই দেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতর খুব দ্রুতগতিতে অবনতি ঘটছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য দায়ী গডফাদারদের প্রকাশ্য বক্তব্য দিয়ে পৃষ্ঠপোষকতা দান করছেন। ফলে দেশব্যাপী সাধারণ মানুষের জান মালের নিরাপত্তা সর্বকালের মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশী বিপন্ন। সভায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং অবিলম্বে মানুষের মনে স্বস্তি, শান্তি, নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনার জন্য জোর দাবি জানানো হয়।
৫। গত ৫ জানুয়ারী ভোটারবিহীন তামাশার নির্বাচন করে নিজেদের বাছাইকৃত অস্ত্রধারীদের দিয়ে এই অবৈধ সরকার জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রেখেছে। সভায় অবিলম্বে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আহবান জানানো হয়।