পরিবেশবাদীদের সুপারিশের ভিত্তিতে আগামী বাজেটে দূষণকারী কারখানার ওপর সবুজকর আরোপ করা হচ্ছে। এতে পরিবেশবাদীরা খুশি হলেও পোশাক কারখানার মালিকরা একে ‘ব্যাড ট্যাক্স’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাদের মতে, এর ফলে পরিবেশ দূষণ বাড়বে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)’র সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বাংলামেইলকে বলেন, সবুজকর একটা ‘ব্যাড ট্যাক্সে’ পরিণত হবে। এর ফলে পরিবেশ দূষণের মাত্রা বাড়বে বৈ কমবে না। কোনো কারখানা যদি ১ শতাংশ কর দিয়ে পরিবেশ দূষণ করে উৎপাদন চালিয়ে যেতে পারে তাহলে তারা বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন করবে না।’
এ ধরনের কর আরোপ না করে পোশাক মালিকদের জন্য কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) স্থাপনের নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানান তিনি।
২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে উৎপাদনের সময় পরিবেশ দূষণ হয় এমন সব পণ্যের ওপর সবুজ কর বা গ্রিনট্যাক্স আরোপ করা হবে। মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট খাতে এই কর আদায় করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রস্তাবিত করহার হবে ১ শতাংশ। মূলত যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে বর্জ্য শোধনাগার বা ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) নেই সেসব কারখানায় এ ধরনের করারোপ করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলামেইলের সঙ্গে আলাপকালে এই করকে পোশাক মালিকদের হয়রানি করার আরও একটি শাখা হিসেবে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশেন (বিকেএমইএ)’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
তিনি বলেন, ‘এমনিতেই পোশাক মালিকরা নানামুখী সমস্যার মধ্য দিয়ে সময় পার করছে। ব্যাংকের উচ্চ সুদ হার, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট, রানাপ্লাজা ও তাজরীনের দুর্ঘটনা, উৎসে কর নিয়ে এমনিতেই সমস্যায় রয়েছে পোশাক খাত। নতুন করে পোশাক কারখানার ওপর গ্রিন ট্যাক্স আরোপ করা হলে তা হবে ‘মড়ার উপর খাড়ার ঘাঁ’।’
এই কর আরোপ সরকারের তেমন কোনো কাজে আসবে না বলেও মনে করেন তিনি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য আমিনুল করিম বাংলামেইলকে বলেন, ‘গাজীপুর, সাভার এবং ঢাকার তৈরি পোশাকের বর্জ্য পড়ছে তুরাগ, বুড়িগঙ্গা এবং বংশী নদীতে। এতে ব্যাপক হারে দূষণ বাড়ছে। সবুজকর একটি নতুন ধারণা। পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষায় এই করারোপ করা হচ্ছে। রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করাই সবুজ করারোপের একমাত্র লক্ষ্য নয়। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি সঠিক জায়গায় নিয়ে আসা। যাতে মালিকরা ইটিপি স্থাপনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তাই এখান থেকে কত আদায় হলো সেটা নিয়ে এনবিআর ভাবছে না। তবে সবুজকর আদায়ে এনবিআর কঠোর অবস্থানে থাকবে। ঢাকা ও এর আশপাশের জেলাগুলোতে সংশ্লিষ্ট করাঞ্চলগুলোর মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
জানা গেছে, পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে ৩০ শতাংশ সবুজকর আরোপের জন্য এনবিআরকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়, দূষণ রোধে স্বাভাবিক করের পাশাপাশি দূষণকারী কারখানাগুলোর ওপর অন্তত ৩০ ভাগ গ্রিন ট্যাক্স আরোপ করা প্রয়োজন। পরিবেশ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সবুজ কর একটি অত্যাবশ্যকীয় পদক্ষেপ।