ইন্দিরা গান্ধী নারী হয়েও মোদির চেয়ে বেশি সাহসী ছিলেন : রাহুল গান্ধী

SHARE

বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেছেন। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের কথা উল্লেখ করে মোদিকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তুলনা করেছেন রাহুল গান্ধী।

ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন ভারতের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। আজ থেকে ৪১ বছর আগে ১৯৮৪ সালের এই দিনে সারা ভারত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।
৩১ অক্টোবর তার বাসভবনের লনে নিজের দুই দেহরক্ষীর গুলিতে তিনি নিহত হন। ভারতে শিখদের স্বর্ণ মন্দিরের অপবিত্রতার অভিযোগে প্রতিশোধ নিতে একেবারে সামনে থেকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে ৩০টিরও বেশি গুলি ছুড়েছিল।

এদিকে বিহারের নালন্দায় এক জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে রাহুল গান্ধী বলেন, ‘১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় ইন্দিরা গান্ধী আমেরিকাকে ভয় পাননি বা মাথা নত করেননি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর ‘ক্ষমতা’ নেই।

রাহুর গান্ধী বলেন, ‘বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র তার বিমান ও নৌবাহিনীকে পাঠিয়েছিল ভারতকে ভয় দেখাতে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী মার্কিনিদের বলেছিলেন, আমরা আপনাদের নৌবাহিনীকে ভয় পাই না। আপনারা যা করার করুন। আমরাও যা করার করব।

তিনি আরো বলেন, ‘ইন্দিরা গান্ধী একজন নারী ছিলেন, কিন্তু তার সাহস এই ব্যক্তির (মোদি) চেয়েও বেশি ছিল। নরেন্দ্র মোদি কাপুরুষ। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর কোনো দূরদর্শিতা বা ক্ষমতা তার নেই। আমি তাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি, যদি নরেন্দ্র মোদির সাহস থাকে তাহলে তার বলা উচিত, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট মিথ্যা বলছেন এবং তিনি (প্রধানমন্ত্রী মোদি) তার কাছে মাথা নত করেননি। ট্রাম্প অপারেশন সিঁদুর বন্ধ করেননি।
তিনি তা করতে পারবেন না।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার দাবি করেছেন, তিনি ভারতের অপারেশন সিঁদুরের পরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য হস্তক্ষেপ করেছিলেন। দক্ষিণ কোরিয়ার গিয়ংজুতে এশিয়া-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা (এপেক) সিইওদের মধ্যাহ্নভোজে বক্তৃতা দেওয়ার সময় ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তার মধ্যস্থতায় এই বছরের শুরুতে দুটি পারমাণবিক-সশস্ত্র দেশের মধ্যে শত্রুতা থেমেছে।

মোদির প্রতি আক্রমণ অব্যাহত রেখে লোকসভার বিরোধীদলীয় এ নেতা দাবি করেছেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ৫০ বার প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ‘অপমান’ করেছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘ট্রাম্প বলেছেন, আমি ফোনে মোদিকে ‘অপারেশন সিঁদুর’ বন্ধ করতে বলেছিলাম। নরেন্দ্র মোদি দুই দিনের মধ্যে অপারেশন সিঁদুর বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদির বলার সাহস নেই যে, ‘আমেরিকার প্রেসিডেন্ট মিথ্যা বলছেন।’

তিনি বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ট্রাম্পের দেখা হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তিনি ভয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন না। তিনি লুকিয়ে বসে আছেন। নরেন্দ্র মোদির সাহস নেই।’ ট্রাম্প এই প্রথম এমন দাবি করেননি। বরং বারবার বলেছেন, তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি স্থাপনে মধ্যস্থতা করেছেন। তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা এর আগে এই দাবি খারিজ করে দিয়েছেন।

ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যা করা হয়েছিল অমৃতসর স্বর্ণমন্দিরে বিরুদ্ধে অভিযান জেরে হওয়া। ইন্দিরা গান্ধী ১৯৮৪ সালের এই দিনে (৩১ অক্টোবর) নিজের দুই দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত পর, ভারতে দেখা সবচেয়ে জঘন্য সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘটে। মাত্র তিন দিনে প্রায় ৩ হাজার ৩৫০ শিখকে (সরকারি অনুমান) হত্যা করা হয়। তার মধ্যে দেশের রাজধানী দিল্লিতেই হত্যা করা হয়েছিল ২ হাজার ৮০০ জন শিখকে।

১৯৮৪ সালের জুনে স্বর্ণমন্দিরে এক সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেন ইন্দিরা। পাঞ্জাবের শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ‘খালিস্তান’ নামক পৃথক ও স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের উদ্দেশ্যে লড়াই শুরু করেছিল। সংঘাত–সহিংসতার ঘটনা ঘটছিল। সামরিক অভিযান ‘ব্লু স্টার’-এর মাধ্যমে স্বর্ণমন্দির থেকে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উৎখাত করা হয়।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ওই অভিযানে ৮৩ জন ভারতীয় সেনা প্রাণ হারান এবং প্রায় আড়াই শতাধিক সেনা আহত হন। অন্যদিকে, ৪৯২ জন শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী ও বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন বলে সরকারি প্রতিবেদন জানায়। তবে স্বাধীন সূত্রের তথ্যে দেখা যায়, প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা সরকারি হিসাবের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। এই অভিযানে স্বর্ণমন্দির কমপ্লেক্সও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন এই অভিযান দেশ-বিদেশে শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রবল ক্ষোভের সৃষ্টি করে। অনেকেই এই ঘটনাকে শিখ ধর্মের ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে দেখেন। ক্ষোভের প্রকাশ হিসেবে অসংখ্য শিখ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা তাদের পদ থেকে ইস্তফা দেন।

অভিযানের পর ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ওপর সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করে এবং তার নিরাপত্তা থেকে শিখ দেহরক্ষীদের অপসারণের পরামর্শ দেয়। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এর পরেই তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

হত্যার দিন সকাল ৯টা ১০ মিনিটে ইন্দিরা গান্ধী ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসেন। তার হাতে ছিল কালো রঙের ছাতা, পাশে হাঁটছিলেন সিপাহি নারায়ণ সিং। তার পেছনে ছিলেন ইন্দিরার ব্যক্তিগত সচিব আর. কে. ধাওয়ান, পরিচারক নাথু রাম এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা রামেশ্বর দয়াল।

‘দ্য পাথ অফ মার্টার্ডম’, হত্যার দিন এই পথ দিয়ে ইন্দিরা গান্ধী গিয়েছিলেন। ছবি: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা

প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের পাশেই আকবর রোডে ছিল তার দপ্তর ছিল। দুটি ভবনের মধ্যে যাতায়াতের জন্য একটি সংযোগপথ ছিল। সেই পথের ফটকের সামনে গিয়ে ইন্দিরা ধাওয়ানের সঙ্গে কথা বলছিলেন।

ঠিক তখনই, পাশে দাঁড়ানো শিখ নিরাপত্তাকর্মী বেয়ন্ত সিং আচমকা তার রিভলভার বের করে গুলি চালান। প্রথম গুলিটি লাগে ইন্দিরার পেটে। এরপর আরো দুটি গুলি গিয়ে লাগে তার বুকে ও কোমরে। মাত্র পাঁচ ফুট দূরেই অটোমেটিক সাবমেশিনগান হাতে দাঁড়িয়েছিলেন আরেক শিখ নিরাপত্তাকর্মী সতবন্ত সিং। ইন্দিরার গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়া দেখে তিনি মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে পড়েন। তখন বেয়ন্ত সিং চিৎকার করে বলেন, ‘গুলি চালাও!’ এরপর সতবন্ত সিং মুহূর্তের মধ্যেই তার অস্ত্রে থাকা সব ২৫ থেকে ৩০টির বেশি গুলি ইন্দিরা গান্ধীর শরীরে ঝাঁঝরা করে দেন।

সূত্র : এএনআই, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা,