বিচারকদের রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে হবে

SHARE

সেই লক্ষ্যে ওই বছর ২১ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ইনার গার্ডেনে অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে অভিভাষণ দেন তিনি। সেদিনের অভিভাষণে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে স্বতন্ত্র-স্বাধীন বিচার বিভাগের গুরুত্ব তুলে ধরার পাশাপাশি প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন।

এরপর বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, প্রয়োজনীয় আইনি ও কাঠামোগত সংস্কার, বিচার বিভাগের জন্য স্বতন্ত্র ও পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ, অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদায়ন-বদলি ও শৃঙ্খলায় আচরণবিধি প্রণয়ন, উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে আইন প্রণয়নের পদক্ষেপ নেন। সেই ধারাবাহিকতায় বিচার বিভাগের জন্য স্বতন্ত্র সচিবালয় গঠনের অধ্যাদেশ জারি করা হয়, যা বিচার বিভাগের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্জন বলে মনে করেন অনেকে।

বিদায়ি অভিভাষণে এসব বিষয় তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহেমদ বলেন, সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি থাকার পরও এদেশের জনগণ কোনোদিন পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন বিচার বিভাগের স্বাদ গ্রহণ করতে পারেনি। অর্জনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থেকেও বারবার ফিরে এসেছি। পৃথক সচিবালয়ের কাজের অগ্রগতি তুলে ধরার পাশাপাশি বিচার বিভাগের প্রধান তার অভিভাষণে বিচারকদের উপযুক্ত কর্মপরিবেশ, মানসম্মত আবাসন ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক পর্বে বিচার বিভাগ অসাংবিধানিক ক্ষমতা, অপশাসন ও রাষ্ট্রীয় কপট-কৌশলের অঘোষিত সহযোগী হয়েছে। দুঃশাসনের বলয়কে আবরণ দিয়েছেন অনেক বিচারক।
অন্যায়-অবিচারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত হয়েছেন। রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিচারকদের এ নৈতিক বিচ্যুতি জনসাধারণকে শেষ পর্যন্ত জুলাই-আগস্টের রক্তক্ষয়ী প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করার অন্যতম অনুঘটক।

প্রধান বিচারপতি বলেন, পৃথক সচিবালয় ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে এদেশের আপামর জনসাধারণের সাংবিধানিক সব অধিকার সুরক্ষিত করার প্রধান নিয়ন্ত্রা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। অসৎ ও অসাধু বিচারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সংবিধানের ৯৬(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে ৬৭ বছরের পর আর বিচারক পদে থাকার সুযোগ নেই। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের জন্ম ১৯৫৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর। সে হিসাবে চলতি বছর ২৭ ডিসেম্বর তার ৬৭ বছর পূর্ণ হবে। ওইদিন সুপ্রিম কোর্টে অবকাশকালীন ছুটি থাকায় ১৮ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতিকে বিদায়ি সংবর্ধনা দেবে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন।