নেপালের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌডেলের কাছে ভেঙে দেওয়া সংসদ পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে, যা প্রাণঘাতী দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভের পর বিলুপ্ত করা হয়েছিল।
নেপালি কংগ্রেস, সিপিএন-ইউএমএল, মাওবাদী কেন্দ্রসহ আটটি দল শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট অসাংবিধানিকভাবে এ কাজ করেছেন।
অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কির সুপারিশে শুক্রবার প্রেসিডেন্ট পৌডেল প্রতিনিধি পরিষদ ভেঙে দেন, যা বিক্ষোভকারীদেরও একটি প্রধান দাবি ছিল।
গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিষিদ্ধের জেরে ছড়িয়ে পড়া গণবিক্ষোভে দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৫০ জনেরও বেশি নিহত হয়।
বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সমঝোতার পর কার্কিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সোমবার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলেও ততক্ষণে বিক্ষোভ ব্যাপক আন্দোলনে রূপ নেয়। ক্ষুব্ধ জনতা মঙ্গলবার রাজধানী কাঠমাণ্ডুতে সংসদ ও সরকারি ভবনে অগ্নিসংযোগ করে। ওই অবস্থায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি পদত্যাগ করেন।
আট দলের প্রধান হুইপদের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে শনিবার সংসদ পুনর্বহালের দাবি জানানো হয়। তারা যুক্তি দেন, প্রেসিডেন্টের নেওয়া পদক্ষেপ অসাংবিধানিক এবং নেপালের বিচার বিভাগের নির্ধারিত দৃষ্টান্তের পরিপন্থী।
তরুণ প্রজন্মের তথাকথিত জেন-জি আন্দোলনের নেতাদের অন্যতম দাবি ছিল সংসদ ভেঙে দেওয়া। তবে আট দল বলছে, বিক্ষোভকারীদের দাবি জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই সমাধান করা উচিত, যার মধ্যে আগামী বছরের ৫ মার্চের নতুন নির্বাচনের ঘোষণাও অন্তর্ভুক্ত।
প্রেসিডেন্ট পৌডেল এখনো রাজনৈতিক দলগুলোর এই বিবৃতির আনুষ্ঠানিক জবাব দেননি।
এদিকে ৭৩ বছর বয়সী সাবেক প্রধান বিচারপতি কার্কি, যিনি বর্তমানে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, শনিবার কাঠমাণ্ডুতে সংক্ষিপ্ত এক অনুষ্ঠানে শপথ নেন। তিনি কয়েক দিনের মধ্যেই মন্ত্রিসভা ঘোষণা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
স্বচ্ছ ভাবমূর্তির জন্য পরিচিত কার্কি অন্তর্বর্তী সরকারে তার নেতৃত্বে জেন-জি আন্দোলনের ছাত্রনেতাদের সমর্থন পাচ্ছেন। তবে তার মন্ত্রিসভার সামনে রয়েছে একাধিক বড় চ্যালেঞ্জ—আইন-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সংসদ ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য ভবন পুনর্নির্মাণ, পরিবর্তনের প্রত্যাশায় থাকা জেন-জি আন্দোলনের তরুণদের আস্থা অর্জন এবং নেপালের গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক শৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বিগ্ন জনগণকে আশ্বস্ত করা।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে সহিংসতার জন্য দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করা।
কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অস্থিরতার পর নেপাল ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে। কার্কি শপথ নেওয়ার পর কাঠমাণ্ডুর রাস্তায় টহলরত সেনারা ব্যারাকে ফিরে গেছে।
গত সপ্তাহে সরকারের সিদ্ধান্তে হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুকসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্ল্যাটফরম নিষিদ্ধ করা হয়। তবে শিগগিরই এ নিষেধাজ্ঞা দুর্নীতির অভিযোগ ও রাজনৈতিক অভিজাত শ্রেণির বিরুদ্ধে বহুদিনের ক্ষোভে ঘনীভূত বিক্ষোভে রূপ নেয়। নিষেধাজ্ঞা তড়িঘড়ি করে সোমবার রাতেই তুলে নেওয়া হলেও তখন পর্যন্ত বিক্ষোভ এমন গতি পেয়েছিল, যা আর থামানো যায়নি।