বিপ্লবী শরিফ ওসমান বিন হাদির চিরবিদায়ের মধ্য দিয়ে ইনকিলাব মঞ্চ নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
অনেকের মতে, দেশের আগামী দিনের রাজনীতিতে সংগঠনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ফলে হাদির মৃত্যুর পর কে এটির হাল ধরবেন, তা নিয়ে জনমনে কৌতূহল রয়েছে।
রোববার এ প্রসঙ্গে সংগঠনটির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা জানান, হাদিকে বুকে ধারণ করেই তারা এগোচ্ছেন।
ইনকিলাব মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা হাদি সংগঠনটির আহ্বায়ক ছিলেন। তার চলে যাওয়ার পর এখনো কেন জানি মনে হচ্ছে-তিনি (হাদি) এখনো সংগঠনের আহ্বায়ক। তাকে যেন তারা প্রতিমুহূর্তেই পাচ্ছেন। তার দেখানো পথেই সংগঠনটি এগিয়ে যাবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সাধারণ মানুষ তথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা হচ্ছে-কে হচ্ছেন শহীদ হাদির গড়া ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক।
শোক ও সমবেদনার পাশাপাশি সামাজিক প্ল্যাটফর্মে লেখা হচ্ছে-শহীদ হাদির শূন্যস্থান কখনো পূরণ করা সম্ভব নয়। তবে তার গড়া ইনকিলাব মঞ্চকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
শহীদ হাদি ও ইনকিলাব মঞ্চের প্রতি বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে আহ্বায়কের দায়িত্ব নিতে হবে। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ইনকিলাব মঞ্চ যেন বাতিঘরে পরিণত হয়-এমন কথাও লেখেন কেউ কেউ।
ইনকিলাব মঞ্চের শীর্ষ নেত্রী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমা বলেন, আমরা আমাদের ভাইয়ের সংগ্রামী জীবনকে আঁকড়ে ধরে, বুকে ধারণ করেই এগোচ্ছি।
সংগঠনের আহ্বায়ক কে হবেন, এটি নিয়ে আমরা এখন কিছু ভাবছি না। এখনো সংগঠনের আহ্বায়ক আমাদের হাদি ভাই। আমরা শোকাহত।
তবে এর মধ্য দিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। ভাইয়ের পারিবারিক কিছু ব্যাপারও আছে। আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেব। সব মিলিয়ে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা প্রেস ব্রিফ করে জানাব।
জুমা আরও বলেন, বীর শহীদ হাদি ভাই আমাদের অনুপ্রেরণা, আমরা তাকে সর্বদা মিস করছি। তার দেখানো আদর্শেই ইনকিলাব মঞ্চ চলবে।
সংগঠনটির আহ্বায়ক পদ নিয়ে কী করব-এখনো বিস্তারিত বলতে পারছি না। হাদি ভাইয়ের সৃষ্টি ‘ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার’ দু-একদিনের মধ্যে খুলে দেওয়া হবে। তার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় সেন্টারটির সব কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছিল।
ইনকিলাব মঞ্চের প্রকাশনা সম্পাদক ফাহিম আবদুল্লাহ বলেন, কমিটিতে কে আসবেন, তা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা সবাই শোকাহত, ব্যস্ত।
মঙ্গল-বুধবারের মধ্যে ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার খুলে দেওয়া হবে। এছাড়া ইনকিলাব মঞ্চ থেকে দ্রতই কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এসব বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনায় বসব।
শনিবার হাদির দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর শাহবাগে সমাবেশ করেন ইনকিলাব মঞ্চের বিক্ষুব্ধরা।
বিকালে শহীদ হাদির হত্যাকারীদের গ্রেফতারের বিষয়ে অগ্রগতি জানাতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) খোদা বখস চৌধুরীকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে (আলটিমেটাম) শাহবাগের সমাবেশ শেষ করেন মঞ্চের শীর্ষ নেতারা।
এ সময়ের মধ্যে জবাব দিতে না পারলে তাদের পদত্যাগ দাবি করেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল জাবের।
রোববার ইনকিলাব মঞ্চ থেকে দুই দফায় কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেজে ‘ইনকিলাব মঞ্চের দুই দফা’ শিরোনামে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। হাদির হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা এবং সিভিল-মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সে থাকা দোসরদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
হাদির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনি, পরিকল্পনাকারী, সহায়তাকারী, পলায়নে সহযোগী, আশ্রয়দাতাসহ পুরো চক্রকে দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করতে হবে বলে প্রথম দাবি জানায় ইনকিলাব মঞ্চ।
রোববার রাত ৯টায় ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেজ থেকে জানানো হয়, আজ সোমবার বেলা ১২টায় শাহবাগ শহীদ হাদি চত্বরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
পেজে জানানো হয়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও সহ-স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ইনকিলাব মঞ্চের ঘোষিত ২৪ ঘণ্টা আলটিমেটামের মধ্যে দুই দফা দাবি মেনে নেননি এবং সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে ব্যাখ্যা দেননি।




