গত শনিবার ভ্যালেন্সিয়ার বিরুদ্ধে লা লিগা ম্যাচ ড্র হওয়ার পরে রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবলাররা খুঁজে পাচ্ছিলেন না ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে। অবশেষে দেখা যায় মুখ গোমড়া করে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন টানেলের মধ্যে। যেন সব কিছুই শেষ হয়ে গিয়েছে তার!
কোপা দেল রে আগেই হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। ভ্যালেন্সিয়ার সঙ্গে ড্র করার পরে লা লিগার স্বপ্নও প্রায় শেষ। সিআর সেভেনের সামনে এখন শেষ সুযোগ বলতে একটাই। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। যেখানে তিনি শুধু রিয়াল মাদ্রিদকে মরসুমে নিজেদের প্রথম বড় ট্রফিটা দিতে পারবেন, তা-ই নয়। পারবেন নিজেকে নতুন করে শ্রেষ্ঠত্বের সিংহাসনে বসাতেও। কিন্তু সেটা কি সম্ভব হবে?
হঠাৎ করে কিছুটা ম্লান হয়ে যাওয়া এই মহাতারকা আজ নামবেন কার্লোস তেভেজ, আন্দ্রে পির্লোর জুভেন্তাসের বিরুদ্ধে। প্রথম পর্বে জুভেন্তাস স্টে়ডিয়ামে ১-২ মুখ থুবড়ে পড়তে হয়েছিল রোনাল্ডোদের। সান্ত্বনা পুরস্কার বলতে শুধু মাত্র একটা অ্যাওয়ে গোল। এই অবস্থায় জুভেন্তাসকে হারাতে না পারলে রোনাল্ডোর শ্রেষ্ঠত্বের উপরই কিন্তু প্রশ্ন উঠে যেতে পারে।
ইতিমধ্যেই সমর্থকদের কটাক্ষের শিকার হতে হচ্ছে সিআর সেভেনকে। কয়েক জন আবার চমকপ্রদ ভাবে প্রতিবাদে সরব সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। যারা মনে করছেন, রোনাল্ডো বুড়ো ঘোড়া হয়ে উঠেছে। যার বড় রেসে দৌড়নোর ক্ষমতা চলে গিয়েছে। মরসুমে ৫৪ গোল করলেও বিশেষজ্ঞদের মতে সেই ধারাবাহিকতা হারিয়ে ফেলেছেন পর্তুগিজ মহাতারকা। আগে রোনাল্ডো নামা মানেই ডিফেন্ডার নাস্তানাবুদ হওয়া। সেই ভয়টা নাকি এখন বিপক্ষের চলে গিয়েছে।
যদিও এই মনোভাবের সঙ্গে একদম একমত নন দলের ইতালীয় কোচ কার্লো আন্সেলোত্তি। যিনি কিছু দিন আগেই বলেছিলেন, সিআর সেভেনের দুটো পায়ের ক্ষমতা আছে যে-কোনও ম্যাচের ছবি পাল্টে দেওয়ার। ‘‘রোনাল্ডোকে সমর্থকরা টিটকিরি দিচ্ছে কেন জানি না। ও যদি এই মরসুমে আর গোল নাও করে, তাতেও ওর শ্রেষ্ঠত্বে কোনো দাগ লাগবে না।’’ বলছেন রিয়াল কোচ।
কিন্তু রোনাল্ডোর ধারাবাহিকতার অভাব যদি রিয়াল কোচের চিন্তার এক নম্বর কারণ হয়, তা হলে দু’নম্বর অবশ্যই রিয়াল ড্রেসিংরুম। শোনা যাচ্ছে, গ্যালাকটিকসদের মধ্যে এখন ঝামেলা লেগে গিয়েছে। কিছু দিন আগেই গ্যারেথ বেলের এজেন্ট অভিযোগ জানিয়েছিলেন, দলের বাকি ফুটবলাররা নাকি বেলকে বল পাস দিতে চাইছে না। ভালো স্প্যানিশ না জানায় ক্রমশ একা হয়ে যাচ্ছেন ওয়েলস উইজার্ড। যে বিবিসি গত মরসুমে ফুটবলের অন্যতম সেরা শক্তি ছিল, সেই ত্রিভুজের বেঞ্জিমা ও রোনাল্ডোর সঙ্গেও নাকি কথা বলেন না বেল। কিন্তু জুভেন্তাস ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগেও আন্সেলোত্তির দাবি, দলে কোনো সমস্যাই নেই। ‘‘বেলের এজেন্ট কি আমাদের ট্রেনিং দেখতে আসে? ও তা হলে জানবে কী করে ড্রেসিংরুমে কী চলছে। বেলের সঙ্গে কারও কোনও ঝামেলা নেই।’’ সঙ্গে আবার এটাও জানালেন, জুভেন্তাসের বিরুদ্ধে বেল ও রোনাল্ডোর সঙ্গে শুরু থেকেই খেলবেন বেঞ্জিমা। ‘‘বেঞ্জিমা এখন পুরোপুরি ফিট। ও প্রথম থেকেই খেলবে।’’
রিয়াল যখন অগ্নিপরীক্ষার মুখে, জুভেন্তাস আবার ইতালীয় ফুটবলের হারিয়ে যাওয়া আধিপত্য ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ে। ২০১০-এ ইন্টার মিলান চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার পরে আর কোনো বীরগাথা নেই ইতালীয় দলগুলোর। দ্বিতীয় পর্বে দলে ফিরবেন পল পোগবা। জুভেন্তাসের যে ডিফেন্ডারকে ২০১৪ বিশ্বকাপে কামড় দিয়েছিলেন লুই সুয়ারেজ সেই জিওর্জিও চেলিনি বলছেন, ‘‘আমার ক্লাব কেরিয়ারের সব থেকে বড় ম্যাচ। রিয়ালের বিরুদ্ধে লড়াইটা খুব সম্মানজনক।’’