চেন্নাই: ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি৷
মাঝখানে ১২ বছর৷ ২০০৩ সালে তানসি মামলায় যে ভাবে বেকসুর খালাস পেয়ে ফের মসনদে ফিরে এসেছিলেন জয়রাম জয়ললিতা, এ বারও সে পথেই হাঁটতে চলেছেন তিনি৷ পাঁজি-পুঁথি দেখে শপথের দিনক্ষণও স্থির হয়ে গিয়েছে৷ রোববার ফের ভারতের তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী পদে মন্ত্রগুপ্তি পাঠ করবেন জয়াম্মা৷
সোমবারের রায় ঘিরে পরতে পরতে ছিল উত্তেজনা৷ কারণ এর উপরেই নির্ভর করছিল তামিলনাড়ু রাজনীতির গতিপ্রবাহ৷ তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই ঘটনাকে তামিলনাড়ু রাজনীতির সন্ধিক্ষণ বলেই মনে করছেন৷
কিন্তু ঠিক কী কারণে এই রায় এতটা তাৎপর্যপূর্ণ?
তা নিয়ে বিশেষ চিন্তার কোনো অবকাশ নেই৷ কারণ, জয়ললিতার শাস্তি যদি বহাল রাখত কর্নাটক হাইকোর্ট, সে ক্ষেত্রে সংসদীয় রাজনীতি থেকে তিনি ১০ বছর দূ্রে থাকতেন৷ কারণ জনপ্রতিনিধিত্ব আইন ও সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুসারে, কোনো জনপ্রতিনিধি যদি দোষী সাব্যস্ত হন, তা হলে জেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও তিনি আরও ছয় বছর নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না৷ বিশেষ আদালত যে হেতু জয়াকে চার বছরের জেল দিয়েছিল, কাজেই তার তিনি ১০ বছর রাজনীতিতে থাকতে পারতেন না৷ ফলে, তামিলনাডুর রাজনীতি যে অনেকটাই জৌলুসহীন হতো, তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ কারণ তিনি দলকেও কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারতেন, সে নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকতই৷ ফলে জয়ার এই প্রবল ভাবে ফিরে আসা আগামী বছর তামিলনাড়ু নির্বাচনের জন্য হয়ে দাঁড়াল খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, ‘কলুষহীন’ জয়ললিতা শুধু যে আইনি জয় পেয়েছেন তা নয়, উনি বিরাট নৈতিক জয়ও পেলেন৷ আর সেটাকে মূলধন করেই ২০১৬ সালে আম্মা বিধানসভায় লড়বেন৷ ভোট এগিয়ে আনার সম্ভাবনাও কেউ কেউ দেখতে পাচ্ছেন৷ তবে ভোট এগিয়ে আসুক বা নয়, তাতে ফলের কোনো পার্থক্য হতে পারে এমন সম্ভাবনার কথা কেউ-ই বলছেন না৷ অর্থাৎ বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে ফিরে আসবে এআইএডিএমকেই৷
শুধু তাই নয়, সোমবারের রায়ের ফল এই দল এতটাই শক্তিশালী হলো, যে তারা হয়তো বিধানসভা নির্বাচন একাই লড়বে৷ ঠিক যে ভাবে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন লড়েছিল৷ কাজেই বিজেপি যে জোটে গিয়ে তামিলনাড়ুতে প্রথম বার পদ্ম ফোটানোর স্বপ্ন দেখছে, তা হয়তো হবে না৷
এমনিতে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আম্মার সম্পর্ক যথেষ্ঠ ভালো, সরকারে না থেকেও জমি অধিগ্রহণ বিল-সহ আরও নানা বিষয়েই তার দল মোদি সরকারকে সমর্থন দিয়েছেন, কিন্তু জোটের প্রশ্ন এখনও স্পষ্ট নয়৷ তবে জয়া মুক্তি পাওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই মোদি তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন, তা যে শুধুই সৌজন্যের বশে নয়, তার মধ্যে যে রাজনৈতিক বার্তাও রয়েছে, তা বুঝতে ভুল হওয়ার কথা নয়৷
এদিকে, ডিএমকে-র অবস্থা খুবই করুণ৷ একে তো ৯৩ বছরের করুণানিধির পক্ষে কোনো বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব নয়৷ আর এই প্রায় আট মাস অর্থাৎ যে সময়টুকু জয়া মুখ্যমন্ত্রী পদে নেই ও এডিএমকে কিছুটা অগোছালো অবস্থায় আছে, তখনও ডিএমকে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি৷ বরং টুজি-তে করুণা-কন্যা কানিমোঝি, এ রাজাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা, ছেলেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ইত্যাদি যথেষ্ঠ চাপেই রেখেছে তাকে৷ আর এ সব কিছুর প্রভাব কাটিয়ে সামনের বছর রাজ্য বিধানসভায় তারা জয়াকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে, এমনটা কঠিন৷
এবার পড়ে থাকছে কিছু ছোট দল৷ যেমন, জি কে ভাসানের তামিল মানিলা কংগ্রেস, রামডসের পিএমকে, এমডিএমকে, ডিএমডিকে৷ তাদের কেউ এখন বিজেপি সহযোগী, কেউ একা৷ তাদের সবাইকে নিয়ে ডিএমকে মহাজোট গড়ে তুলল এমনটা আশা করার কিছু দেখছে না রাজনৈতিক মহল৷ সেক্ষেত্রে ২০১৬ তে চতুর্মুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা আছে৷ সে ক্ষেত্রেও আম্মাই শেষ হাসি হাসবেন৷
কাজেই এখন অঙ্কের থেকে রসায়নই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে তামিলনাড়ুতে৷ আর রাজনৈতিক পুনর্জন্ম লাভ করে জয়ললিতা এখন সত্যিই পুরুচ্চি থালাইভি আম্মা- অর্থাৎ যিনি শুধু মা নন, তার সঙ্গে বৈপ্লবিক নেত্রীও বটে৷