জয়ের স্বপ্ন রুশনারা টিউলিপ রূপার

SHARE

rushna tulipগণতন্ত্রের আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত ব্রিটেনের নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশিদের আগ্রহ এবার একটু বেশি। এর একটা ?কারণ, এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ১২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আরেকটি কারণ, এই প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি। বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ রেহানার মেয়ে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগি্ন। টিউলিপ ছাড়াও এবারের নির্বাচনে আলোচনায় রয়েছেন প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলী ও ড. রূপা হক। ব্রিটেনের প্রভাবশালী সব অনলাইন, প্রিন্ট আর ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ঘুরেফিরেই আসছে টিউলিপ সিদ্দিক ও ড. রূপা হককে নিয়ে নানা খবর। ব্রিটেনের নির্বাচনী ইতিহাসে কোনো অভিবাসী প্রার্থী নিয়ে এবারের মতো এত মাতামাতি আর হয়নি।

ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি ও তাদের জোট শরিক লিবারেল ডেমোক্র্যাট (লিব ডেম) এবং প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির হয়ে লড়ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ১২ প্রার্থী। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ৬ প্রার্থী মনোনয়ন পেয়েছেন লেবার পার্টি থেকে।

জয়ের পথে রুশনারা আলী :লেবার পার্টির এই এমপি আগে থেকেই ব্রিটেনে সুপরিচিত এক নাম। রুশনারা আলী (৪০) বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন। ২০১০ সালের নির্বাচনে এ আসনেই সাড়ে ১১ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করে প্রথম ব্রিটিশ-বাংলাদেশি মুসলিম এমপি হয়ে ইতিহাস গড়েন রুশনারা। এ আসনের ৮০ হাজার ভোটারের প্রায় অর্ধেকই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। রুশনারা দেশটির প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির অন্যতম নীতিনির্ধারক। দলটির ছায়া মন্ত্রিসভার শিক্ষামন্ত্রীও ছিলেন তিনি। রুশনারা আলী এবারও জয়ী হবেন বলে সবার আশা।

সিলেটের বিশ্বনাথের মেয়ে রুশনারা মাত্র সাত বছর বয়সে পাড়ি জমান ব্রিটেনে। এবার রুশনারার বিরুদ্ধে লড়ছেন লিবারেল ডেমোক্র্যাটের টিনা ল্যাশমোর এবং কনজারভেটিভ দলের ম্যাট স্মিথ।জনপ্রিয়তায় এগিয়ে টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক :লেবার পার্টির হয়ে টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক (৩৩) লড়ছেন হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে। ভোটারদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তায় বেশ এগিয়ে রয়েছেন টিউলিপ।২৩ বছর ধরে লেবার পার্টির দখলে রয়েছে এ আসনটি। কিন্তু এবার জটিল এক সমীকরণে রয়েছে এ আসন। ২০১০ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে লেবারদলীয় প্রার্থী গ্গ্নেন্ডা জ্যাকসন অনেকটা হারতে হারতেই মাত্র ৪২ ভোটে জিতে যান এ আসনে। এ কারণেই ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি এবার এ আসনটিকে ‘টার্গেট সিট’ বানিয়েছে।

তবে আশার খবর হচ্ছে, সর্বশেষ প্রাক-নির্বাচনী জরিপে টিউলিপের পক্ষে ৪৮ শতাংশ ভোটার সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। বিপরীতে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী টোরি সায়মন মার্কাস ৩২ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন। নিজের এলাকা ক্যামডেন বরো কাউন্সিলের কেবিনেট সদস্য হিসেবে স্থানীয় স্কুল ও হাসপাতাল রক্ষায় লড়াই করে দরিদ্রদের আস্থা পেয়েছেন টিউলিপ।কিশোর বয়স থেকেই টিউলিপ এ এলাকায় বড় হয়েছেন, স্কুলে পড়েছেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি যোগ দিয়েছিলেন লেবার পার্টিতে। ২০১০ সালে টিউলিপ ক্যামডন কাউন্সিলে প্রথম বাঙালি হিসেবে প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। টিউলিপের এ আসনটি ব্রিটেনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাঙালি অধ্যুষিত।

রূপাকে নিয়ে আশাবাদ :রুশনারা আলী ও টিউলিপ সিদ্দিকের পর ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটি সবচেয়ে বেশি আশাবাদী ড. রূপা হককে (৪৩) নিয়েই। তার প্রতি ভোটারদের আস্থাই এমন আশাবাদ জাগিয়ে তুলেছে। ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটনে লেবার পার্টির প্রার্থী তিনি। লন্ডনের ইলিংবরার ডেপুটি মেয়র ছিলেন রূপা হক। রাজনীতি পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন কিংসটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষকের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল।এ আসন থেকে গতবার ৩ হাজার ৭১৬ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী এঞ্জি ব্রে। এবারও তিনি এখানে প্রার্থী হয়েছেন। তার সঙ্গেই হবে রূপার লড়াই। কনজারভেটিভ পার্টি বাজেট কমানোয় এ এলাকার চারটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। এর বিরুদ্ধে রূপা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। এ ঘটনা রূপা হকের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে দিয়েছে।

মিনা সাবেরা রহমান :ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি থেকে মাত্র একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতই মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি মিনা সাবেরা রহমান। লন্ডনের বার্কিং আসনে লড়ছেন সুনামগঞ্জের ছাতকে জন্ম নেওয়া মিনা। তিনি থাকেন বার্মিংহামে। আইন বিশেষজ্ঞ মিনা একটি আবাসন সংস্থায় ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত। ১৯৯৩ সাল থেকে কনজারভেটিভ দলের রাজনীতির সঙ্গে তিনি যুক্ত। এবারই প্রথম নির্বাচনে প্রার্থী হলেন তিনি।বার্কিং আসনটি লেবার পার্টির একচেটিয়া। লেবার দলের মার্গারেট হজ ১৯৯৪ সাল থেকে বার্কিং আসনের এমপি। গত নির্বাচনে তিনি ৫৪ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। মার্গারেট হজ এবারও আসনটিতে লেবার দলের প্রার্থী। তার বিপরীতেই লড়তে হবে মিনাকে।আনোয়ার বাবুল :উইলইন অ্যান্ড হ্যাটফিল্ড আসনে লেবার পার্টির মনোনীত প্রার্থী আনোয়ার বাবুল মিয়া। একটি ব্রিটিশ বিনিয়োগ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তিনি। জন্ম সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে। আনোয়ার বাবুলকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে কনজারভেটিভ দলের গ্রান্ট শাপস, লিবারেল ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিউগ আনন্দের সঙ্গে।

২০১০ সালে এ আসন থেকে ৫৭ শতাংশ ভোটে কনজারভেটিভ দলের গ্রান্ট শাপস জয়ী হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লেবার প্রার্থী মাইক হোবডে পেয়েছিলেন ২১ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট।প্রিন্স সাদিক চৌধুরী :নর্দাম্পটন দক্ষিণ আসনে লিবারেল ডেমোক্র্যাটের মনোনয়ন পেয়েছেন প্রিন্স সাদিক চৌধুরী। কনজারভেটিভ দলের আন্দ্রে লিসডমও এ আসনের প্রার্থী। ২০১০ সালে এ আসন থেকে লিসডম ৫৫ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লিবারেল ডেমোক্র্যাট প্রার্থী স্কট কলিন্স পেয়েছিলেন ২১ শতাংশ ভোট। সাদিককে এবার লেবার পার্টির লুসি মিলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।মেরিনা আহমদ :লেবার পার্টির আরেক বাংলাদেশি প্রার্থী ব্যারিস্টার মেরিনা আহমদ। বৃহত্তর লন্ডনের বেকেনহ্যাম আসনের এই প্রার্থী অ্যামনেস্টি বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। মেরিনা ৩০ বছর ধরে লেবার পার্টির সঙ্গে যুক্ত। মেরিনার আসনটি কনজারভেটিভদের নিরাপদ ঘাঁটি বলেই মনে করা হয়।

আলি আখলাকুল ইসলাম :লেবার পার্টি থেকে লুটন আসনে লড়ছেন আলি আখলাকুল ইসলাম। ষাটের দশকে তার পরিবার ব্রিটেনে বসবাস শুরু করে। আলি আখলাকুল রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় জড়িত।অন্যান্য প্রার্থী :এবারের নির্বাচনে অন্য বাংলাদেশি ব্রিটিশ প্রার্থীরা হচ্ছেন_ লুটন দক্ষিণ আসন থেকে লিবারেল ডেমোক্র্যাটের আশুক আহমেদ, নর্থইস্ট হ্যাম্পশায়ার আসন থেকে লেবার পার্টির এমরান হোসাইন, স্কটল্যান্ডের এভারডিনশায়ারের বেনফ অ্যান্ড বুখান আসন থেকে লেবার পার্টির সুমন হক এবং ওয়েলসের আরফন আসন থেকে লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলের মোহাম্মদ সুলতান।