তুরস্ক ও ইসরায়েল তাদের সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্ভাব্য সংঘর্ষ রোধে সিরিয়ায় একটি সংঘাত নিরসন রেখা স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা করেছে বলে দুই পশ্চিমা কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে জানিয়েছেন। গত সপ্তাহে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সিরিয়ায় বেশ কয়েকটি বিমান হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে হামা বিমানঘাঁটি এবং তিয়াস বিমানঘাঁটি (যা টি৪ নামেও পরিচিত), যেখানে তুরস্ক শিগগিরই সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা করেছিল।
আঙ্কারা যখন টি৪ ঘাঁটি পরিদর্শন এবং পুনর্গঠনের জন্য প্রাথমিক মূল্যায়ন করার একটি প্রযুক্তিগত দল পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল, ঠিক তখনই এই হামলা চালানো হয়েছিল।
তুর্কি বাহিনী যদি সিরিয়ায় ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়, এমনকি ভুল করেও যদি হামলা চালানো হয়, তাহলে একটি বড় সংঘাতের ঝুঁকিতে পড়বে ইসরায়েল।
বলা হচ্ছে এসব ঘাঁটিতে তুর্কি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে ইসরায়েলি বিমানগুলোও এই অঞ্চলে অভিযান চালাতে বাধা পাবে। তুরস্ক হিসার-ধরনের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা স্থাপনেরও পরিকল্পনা করেছে সিরিয়ায়। জানা গেছে, তুর্কি সামরিক বাহিনী বিমান, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি মোকাবেলা করার জন্য স্বল্প, মাঝারি ও দীর্ঘ পাল্লার ক্ষমতাসহ ঘাঁটির ভেতরে এবং আশপাশে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপনের লক্ষ্য স্থির করেছে।
একটি সূত্র দাবি করেছে, মনে হচ্ছে ওয়াশিংটন ইসরায়েল ও তুরস্কের উত্তেজনা কমাতে চায়।
একই পশ্চিমা সূত্র অনুসারে, নেতানিয়াহু বিশ্বাস করেন যে বিমান হামলার পর তুরস্কের সঙ্গে একটি সংঘাতমুক্ত চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে এবং আলোচনা চলছে।
তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান শুক্রবার রয়টার্সকে বলেন, তুরস্ক সিরিয়ায় ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাত চায় না। সূত্রটি আরো জানিয়েছে, জনসাধারণের হুমকি সত্ত্বেও ইসরায়েল সম্ভবত হামা এবং পালমিরায় তুর্কি সামরিক ঘাঁটিগুলোকে সংঘাত নিরসন ব্যবস্থার অংশ হিসেবে গ্রহণ করবে।
ডিসেম্বরে সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি বাশার আল-আসাদের সরকারের পতন এবং সিরিয়ায় একটি প্রভাবশালী আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে তুরস্কের উত্থান ইসরায়েলকে শঙ্কিত করেছে, যারা এখন আঙ্কারাকে ইরানের চেয়ে সম্ভাব্যভাবে বড় হুমকি হিসেবে দেখে।
ডিসেম্বর থেকে আসাদের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আঙ্কারা ও দামেস্ক একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে। প্রস্তাবিত চুক্তির অধীনে তুরস্ক সিরিয়ার নতুন সরকারকে বিমান কভার এবং সামরিক সুরক্ষা প্রদান করবে, যার বর্তমানে কার্যকর সেনাবাহিনীর অভাব রয়েছে।
তুরস্ক ইসলামিক স্টেট (আইএস) গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান আরো তীব্র করতে চায়, যা এই অঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।
তবে সিরিয়া সম্পর্কে ইসরায়েলিদের প্রধান উদ্বেগ হচ্ছে দেশটিতে ইসরায়েলের বিমান অভিযানের স্বাধীনতা। কারণ সিরিয়ায় যদি তুর্কি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা স্থাপন করা হয়, তাহলে সিরিয়ার আকাশসীমা ব্যবহার করে ইসরায়েলি জেট বিমান অভিযান পরিচালনা করতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে।