খ্রিস্টানদের ধর্মীয় উৎসব ইস্টার উপলক্ষে ৩০ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির অবসানের পর ইউক্রেনে সোমবার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়ার বাহিনী। মস্কো ও কিয়েভ—উভয়ই নতুন হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তিচুক্তির আশায় সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক ঘণ্টা আগেই তিনি আশা প্রকাশ করেছিলেন, চলতি সপ্তাহেই দুই পক্ষের মধ্যে একটি ‘চুক্তি’ হতে পারে।
রুশ সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, “যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ অব্যাহত রেখেছে।”
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শনিবার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে দুই পক্ষই পরে অভিযোগ করে, তারা হাজার হাজারবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে।
স্থানীয় সময় রবিবার দিবাগত রাত ১২টায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইউক্রেন জানায়, রাশিয়া দিনিপ্রোপেট্রোভস্ক, মাইকোলাইভ ও খেরসন অঞ্চলে নতুন করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
দিনিপ্রোপেট্রোভস্কের গভর্নর সারগেই লিসাক জানান, রাশিয়া ওই অঞ্চলে ‘ড্রোন হামলা’ চালিয়েছে। এতে একটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং একটি খাবারের প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরে যায়, তবে কেউ হতাহত হয়নি।
এ ছাড়া ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনী জানায়, স্থানীয় সময় সোমবার মধ্যরাত ২টা থেকে শুরু হওয়া হামলায় তারা রাশিয়ার ৪২টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
পুতিনের ঘোষিত এই ৩০ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ছিল একটি আকস্মিক উদ্যোগ, যার পেছনে ‘মানবিক কারণ’ ছিল বলে তিনি দাবি করেন।
যদিও উভয় পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে, তারা সহিংসতার মাত্রা কিছুটা কমে এসেছিল বলেও স্বীকার করে।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি রবিবার জানান, আকাশ থেকে হামলা বন্ধ থাকলেও রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে শত শত হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করে, তারা ইউক্রেনের হামলা প্রতিহত করেছে এবং কিয়েভ শত শত ড্রোন ও গোলা নিক্ষেপ করেছে, যা বেসামরিক হতাহতের কারণ হয়েছে। তবে তারা স্বীকার করে, যুদ্ধবিরতির সময় ইউক্রেনের হামলার মাত্রা ‘অনেকটা কমে গিয়েছিল’।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রবিবার রয়টার্সের সাংবাদিকরা তুলনামূলকভাবে কম বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন এবং আকাশে ধোঁয়া দেখেননি বলে জানিয়েছেন।
এদিকে পুতিন যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন ট্রাম্পের বক্তব্যের এক দিন পর, যেখানে তিনি বলেন, দুই পক্ষ শান্তিচুক্তির পথে না এগোলে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ থামানোর চেষ্টায় পিছিয়ে যাবে। ট্রাম্প রবিবার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফরমে লেখেন, ‘আশা করি রাশিয়া ও ইউক্রেন এই সপ্তাহে একটি চুক্তি করবে।’
ইতিপূর্বে ট্রাম্প একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা ইউক্রেন গ্রহণ করলেও রাশিয়া প্রত্যাখ্যান করে।
ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে সোমবার প্রশ্ন করা হলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, মস্কো ‘আশা করে’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা ‘ফলপ্রসূ’ হবে, তবে আলোচনা কখন শুরু হতে পারে, সে বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
অন্যদিকে জেলেনস্কি বারবার ৩০ দিনের পূর্ণ ও শর্তহীন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়ে এলেও গত মাসে ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপের পর পুতিন তা প্রত্যাখ্যান করেন। জেলেনস্কি রবিবার ফের প্রস্তাব দেন, অন্তত ৩০ দিনের জন্য বেসামরিক স্থাপনায় ড্রোন ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ রাখা হোক।
বেইজিংও সোমবার জানায়, তারা ‘যেকোনো যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানায়’। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির পথের দিকে এগিয়ে যাওয়া—এমন যেকোনো প্রচেষ্টাকেই চীন স্বাগত জানায়। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধানে এগিয়ে যাবে।’
গত সপ্তাহে ইউক্রেন চীনের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে অস্ত্র সহায়তার অভিযোগ তোলে এবং দাবি করে, অন্তত ১৫৫ জন চীনা নাগরিক রুশ বাহিনীর পক্ষে যুদ্ধ করছে। বেইজিং এ অভিযোগ অস্বীকার করে এবং চীনা নাগরিকদের সশস্ত্র সংঘাতে না জড়ানোর আহ্বান জানায়।