‘গৃহযুদ্ধর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল’, যা বললেন নেতানিয়াহু

SHARE

ইসরায়েলের সম্মানিত আইনবিদ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রেসিডেন্ট আহারুন বারাক বলেছেন ইসরায়েল গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রোনেন বারক এবং অ্যাটর্নি জেনারেলকে বরখাস্ত করার সরকারের সাম্প্রতিক প্রচেষ্টার কারণে দেশটি সেই দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

তবে তার এই মন্তব্য করার কয়েক ঘন্টা পরেই প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু টুইট করে বলেছেন, ‘কোনো গৃহযুদ্ধ হবে না!’

তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল রাষ্ট্র আইনের দেশ এবং আইন অনুসারে ইসরায়েলি সরকারই সিদ্ধান্ত নেয় কে শিন বেটের প্রধান হবেন।’ এরপর নেতানিয়াহু টুইট করে যোগ করেছেন ‘শাব্বাত শালোম।

ইসরায়েলের বিশিষ্ট ওই আইনবিদ আহারুন বারাক সতর্ক করে বলেছেন, দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার একাধিক সাক্ষাৎকারে বারাক প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ক্ষমতা কেন্দ্রীকরণের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, নেতানিয়াহু দেশকে এমনভাবে বিভক্ত করেছেন যে দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

ওয়াইনেটের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বারাক বলেছেন, ‘ইসরায়েলি সমাজের প্রধান সমস্যা হল… ইসরায়েলিদের মধ্যে তীব্র ফাটল।
’ তিনি আরো বলেন, ‘এই ফাটল আরো খারাপ হচ্ছে এবং শেষ পর্যন্ত, আমি আশঙ্কা করছি, দেশ একটি ট্রেনের মতো হবে। ট্রেনটি তার লাইন থেকে ছিটকে একটি খাদে পড়ে যাবে, যার ফলে শুরু হবে গৃহযুদ্ধ।’ বারাক ১৯৯৫-২০০৬ সাল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

শিন বেটের প্রধান প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্ত করার নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ এবং বিক্ষোভের মধ্যে বারাকের এই মন্তব্য করেছেন।
নেতানিয়াহু দাবি, তিনি বারের ক্ষমতার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন এবং তাই তাকে বরখাস্ত করতে হচ্ছে। অন্যদিকে সমালোচকরা বলছেন, ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার এবং তার সহযোগীদের দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত বন্ধ করার ইচ্ছা থেকেই নেতানিয়াহু এই বরখাস্ত কর্যকর করতে চাচ্ছেন।

চ্যানেল ১২-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বারাক বলেন, ‘ইসরায়েল গৃহযুদ্ধের কাছাকাছি পৌঁছেছে কারণ জনগণের মধ্যে বিশাল ফাটল ধরেছে। এটি নিরাময়ের জন্য কোনো প্রচেষ্টা করা হচ্ছে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘সবাই এটিকে আরো খারাপ করার চেষ্টা করছে।
আজ বিক্ষোভ চলছে, তারপর একটি গাড়ি তাদের ওপর দিয়ে চলে যাবে এবং কাউকে চাপা দিবে।’

তিনি বুধবার জেরুজালেমে নেতানিয়াহু বিরোধী বিক্ষোভের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘একজন চালক একজন বিক্ষোভকারীকে ধাক্কা দিয়ে আহত করেছে সেখানে। আগামীকাল গুলি চালানো হবে এবং তার পরের দিন রক্তপাত হবে।’

ফিলিস্তিনের গাজায় নতুন করে অভিযান চালানোর বিরুদ্ধে শুরু হওয়া বিক্ষোভকে ঘিরে ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো বন্ধ করা হয়। এদিকে যুদ্ধের মাঝেই ব্যাপক অন্তর্দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে ইহুদিবাদী ইসরায়েলে।

মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে গত বৃহস্পতিবার ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রোনেন বারকে বহিষ্কার করেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে এই বহিষ্কারাদেশ ৮ই এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত করেছেন ইসরাইলের হাইকোর্ট। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে, ফলে দেশটির ভিতরে ব্যাপক অন্তর্দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।

ইসরাইলের শ্রমিক ইউনিয়ন হিসতাদ্রুতের প্রধান আরমোন বার-ডেভিড হুমকি দিয়েছেন, নেতানিয়াহুর সরকার আদালতের আদেশ অমান্য করে রোনেন বারকে বরখাস্ত করলে বসে থাকবেন না। এদিকে ইসরায়েল বিজনেস ফোরাম (আবিএফ) হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, শিন বেতের প্রধান রোনেন বারের বরখাস্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞাকে যদি সরকার সম্মান না করে তবে তারা ‘ইসরায়েলি অর্থনীতি অচল দেবে’। ইসরায়েল বিজনেস ফোরাম দেশের ২০০টি বৃহত্তম কম্পানির বেশিরভাগ বেসরকারি খাতের কর্মীদের প্রতিনিধিত্ব করে।

সমালোচকরা যুক্তি দিয়েছেন, হামাসের ৭ অক্টোবরের আক্রমণের সময় দায়িত্বে থাকা বারের স্থলাভিষিক্ত হওয়া উচিত নয় সরকারের। তারা আশঙ্কা করছেন, নেতানিয়াহু সংস্থার প্রধানের জন্য একজন অনুগত ব্যক্তিকে নিয়োগ করবেন। কারণ প্রধানমন্ত্রী ইসরায়েলের ‘বামপন্থী গভীর রাষ্ট্র’ সম্পর্কে তার ষড়যন্ত্রমূলক সমালোচনা তীব্রতর করে তুলেছেন।

সূত্র : টাইমস অব ইসরায়েল, ফার্স্টস্পট