চলে গেলেন গ্যুন্টার গ্রাস

SHARE

gunterজন্ম পোল্যান্ডে৷ কিন্তু সাহিত্যে নোবেলসহ অনেক স্বীকৃতিই পেয়েছেন জার্মানিতে নতুন জীবন শুরুর পর৷ আজ সোমবার ৮৭ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন লেখক, চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর গ্যুন্টার গ্রাস৷

২০১২ সালের ১৪ অক্টোবর৷ জার্মানির ল্যুবেক শহরে ‘গ্যুন্টার গ্রাস হাউস : ফোরাম ফর লিটারেচার অ্যাণ্ড আর্ট’-এর আবার উদ্বোধন হলো৷ তার সাহিত্য, বিশেষ করে শিল্পকর্মের আরো বিস্তৃত প্রদর্শনের উদ্দেশ্যেই এই নব উদ্বোধন৷

নোবেলজয়ী জার্মান লেখক গ্যুন্টার গ্রাস যে একজন উঁচুমাপের চিত্রশিল্পী এবং ভাস্করও, তা অনেকেই হয়তো জানেন না৷ এই জাদুঘরে রয়েছে তার অঙ্কনচিত্র, এচিং, লিথোগ্রাফি, জলরং ও তেলচিত্রের প্রায় এগারোশো শিল্পকর্ম৷ তার অনন্য সাহিত্যকর্মের কিছু পাণ্ডুলিপিও আছে সেখানে৷ এর বাইরেও দৃষ্টি আকর্ষণ করে খোলা আকাশের নিচে, ভবনের বাগানে রাখা তার ভাস্কর্য৷ ১৯৮৬ সাল থেকে এই শহরেই বাস করেন গ্রাস, তার নিজের অফিসঘরও এ ভবনেই৷ তাই প্রায়ই তাকে দেখা যায় সেখানে৷ দর্শনার্থীদের জন্য এটাও দারুণ এক আকর্ষণ৷

১৯৪৫ সালে পোল্যান্ডের ডানজিশ থেকে জার্মানিতে আসেন গ্রাস৷ প্রথমে পাথর খোদাইয়ে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ শুরু৷ তারপর ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত ‘ড্যুসেলডর্ফ আর্ট অ্যাকাডেমি’-তে এবং পরে বার্লিনেও ফাইন আর্টসে শিক্ষা গ্রহণ৷ মূলত এ সময়েই শুরু হয় তার সাহিত্যচর্চা৷ বাস্তববাদি শিল্পকর্ম, বিশেষ করে সাদা-কালো গ্রাফিকস চিত্রশিল্পের মোটিভ বা ফিগার, যেমন মাছ, শামুক, বাবুর্চি, নান্ বা মঠবাসিনী, তার পঞ্চাশের দশকের রচনার প্রোটাগনিস্ট৷

জন্মস্থান ডানজিশ শহরের সঙ্গে গ্যুন্টার গ্রাসের রয়েছে গভীর সম্পৃক্ততা৷ জার্মান অধিকৃত পোল্যান্ড ও এই শহরের শৈশবের স্মৃতিচারণ করেই রচনা করেন বিশ্বখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য টিন ড্রাম’৷ ডানজিশ ট্রিলজির প্রথম পর্ব৷ সঙ্গে যোগ হয় পরবর্তী উপন্যাস ‘ক্যাট অ্যাণ্ড মাউস’ ও ‘ডগ ইয়ার্স৷ শহরের সর্বত্রই গ্রাসের উপস্থিতি অনুভব করা যায়৷ গ্যুন্টার গ্রাস সমিতিও রয়েছে এখানে৷ ২০০৯ সালে ডানজিশ-এর পুরোনো শহরের প্রাণকেন্দ্রে তার নামে স্থাপন করা হয় একটি গ্যালারি৷ পুরোনো ও অতি সাম্প্রতিক বহু চিত্রকর্ম, গ্রাফিকস ও ভাস্কর্য দিয়ে সাজানো হয়েছে গ্যালারিটি৷ গ্রাফিক ডিজাইনের প্রচুর নমুনাও রয়েছে সেখানে৷ শহরের সাথে গ্রাসের সুসম্পর্কে ছেদ পড়েছিল ২০০৬ সালে৷ এক আত্মকাহিনিতে তিনি নাৎসিদের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ভাফেন-এস এস বাহিনীর সদস্য থাকার কথা প্রকাশ করায় পোল্যান্ডে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছিল৷ তার ডানজিশ শহরের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব বাতিলের পক্ষেও মত দিয়েছিলেন অনেকে৷

সেই ক্ষত অনেকটা শুকিয়ে গেছে৷ ডানজিশ শহরবাসী গ্রাসকে নিয়ে গর্বই করেন৷ শহরের আদি ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছুই যে তার কাছ থেকে জানতে পেরেছেন তারা!

গ্যুন্টার গ্রাস
•    পুরো নাম: গ্যুন্টার ভিলহেল্ম গ্রাস
•    জন্ম : ১৬ অক্টোবর ১৯২৭, ডানজিশ, পোল্যান্ড ( তখন নাম ছিল ফ্রি সিটি অফ ডানজিশ)
•    পেশা: লেখক, নাট্যকার, কবি, চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর
•    বাবা: ভিলহেল্ম গ্রাস
•    মা: হেলেনে
•    স্ত্রী: প্রথম স্ত্রী আনা মার্গারেটা শোওয়ার্তস
•    দ্বিতীয় স্ত্রী উটে গ্রুন্যার্ট
•    সন্তান: তিন ছেলে, তিন মেয়ে
•    স্বীকৃতি: সাহিত্যে নোবেল, গেওর্গ ব্যুশনার পুরস্কার, অনারারি ফেলো অফ দ্য রয়েল সোসাইটি অফ লিটারেচার, প্রিন্স অফ অস্ট্রিয়াস পুরস্কার
•    খুব উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম : দ্য টিন ড্রাম, ক্যাট অ্যাণ্ড মাউস, ডগ ইয়ার্স, ক্র্যাব ওয়াক, হোয়াট মাস্ট বি সেইড