শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, মৃত্যু বেড়ে ৫

SHARE

টানা প্রবল বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরে নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ’আটাশির’ বন্যার চেয়েও এবার ভয়াবহ বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদী উপজেলার মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

রোববার সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় বন্যার্তরা দুর্ভোগে পড়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদীর পানি কমে বিপৎসীমার ৫১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং চেল্লাখালী নদীর পানি কমে বিপদসীমার ১৮৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

উজানের ঢলের পানি নেমে আসা অব্যাহত থাকায় শেরপুর সদর ও নকলা উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এখনো শেরপুরের ৫টি উপজেলার কমপক্ষে শতাধিক গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলের মাঠ তলিয়ে রয়েছে। অসংখ্য বাড়িঘর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে মাছের খামার থেকে কোটি কোটি টাকার মাছ ভেসে যাওয়ায় খামারিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

গত শুক্রবার রাতে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বের হয়ে বন্যার পানিতে নিখোঁজ হওয়া নালিতাবাড়ী উপজেলার অভয়নগর গ্রামের বাছির উদ্দিনের ছেলে দুই ছেলে আবু হাতেম (৩০) ও আলমগীরের (১৭) লাশ শনিবার ওই এলাকার একটি ধান ক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচজনে। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন বাতকুচি গ্রামের আব্দুল হাকিমের স্ত্রী জহুরা খাতুন (৪৫)। এছাড়া ঝিনাইগাতীর সন্ধ্যাকুড়া এলাকায় বন্যার পানিতে ভেসে এসেছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অজ্ঞাত এক নারীর গলিত লাশ।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থরা বলছেন, এবারের বন্যা অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। অনেকেই বলেছেন ‘আটাশির বন্যার চেয়েও এবার ভয়াবহ’। মাছের খামারিরা বলছেন, তাদের খামারের মাছ ভেসে যাওয়ায় তারা নিঃস্ব হয়ে গেছেন। অনেক স্থানে পাহাড়ি ঢলের পানির প্রবল তোড়ে ভেঙে গেছে ঘরবাড়ি, গাছপালা। পানি উঠায় অনেকের বাড়িতে চুলা জ্বলছে না। তাই রান্না-খাওয়া বন্ধ রয়েছে। বন্যা কবলিত পরিবারগুলোতে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বাড়ি-ঘর ডুবে যাওয়ায় অনেকে নিরাপদ স্থানে ও আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন। পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারের জন্য কাজ করছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

পাহাড়ি ঢলের প্রবল স্রোতে শেরপুর থেকে তিনআনী হয়ে নালিতাবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের রানীগাঁও সেতুর কাছে সড়ক ভেঙে যাওয়ায় শনিবার দুপুর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া শেরপুর থেকে গাজীর খামার হয়ে নালিতাবাড়ীগামী রাস্তার কলসপাড় ইউনিয়নের ৪টি স্থানের ওপর দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবাহিত হওয়ায় ওই সড়কে যানবাহন ও মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এছাড়া নালিতাবাড়ী-নাকুগাঁও স্থলবন্দর সড়কসহ জেলার অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ১০টি সড়কের ওপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বন্যায় জেলায় ৭ হাজার ৬৯৬ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান সম্পূর্ণ নিমজ্জিত, ৯ হাজার ৬৯৩ হেক্টর জমির রোপা আমন আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া ২০৮ হেক্টর জমির সবজির সম্পূর্ণ এবং ৪১৩ হেক্টর আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যায় ৬৫ হাজার ৪০০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান রোববার সকালে বলেন, শনিবার রাতে ভারি বৃষ্টি হয়নি। তবে রোববার সকাল থেকে আবার বৃষ্টি হচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকায় পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারের জন্য সেনাবাহিনী, বিজিবি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য এবং উপজেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা কাজ করছেন। বন্যার্তদের সহায়তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ত্রাণ তৎপরতা পুরোদমে চলছে। তাছাড়া ১৭টি মেডিকেল টিম বানভাসি মানুষের স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার জন্য এলাকায় কাজ করছে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে বন্যার্তদের চিকিৎসা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।