শরীর সুস্থ রাখতে পুষ্টিকর ও সুষম খাবারের বিকল্প নেই। কিন্তু আমাদের অনেকের খাদ্যতালিকায় প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান থাকে না। প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান ছাড়া এসব খাবার আমরা হয়তো অজ্ঞতাবশতই খাই। ফলে অনেকেই অপুষ্টিতে ভোগেন। যার প্রভাব শরীরে বিভিন্নভাবে পড়ে। অপুষ্টির কারণে শরীরে যেসব লক্ষণ দেখা যায়, তারই ১০টি লক্ষণ জেনে নিন।
১. ক্লান্তিবোধ
তেমন কোনো পরিশ্রম ছাড়াই অনেক সময় ক্লান্ত লাগে। অল্প কাজেই অনেকে হাঁপিয়ে ওঠেন। আয়রনের ঘাটতিতে সচরাচর এমনটা হয়ে থাকে। আবার ভিটামিন বি কমপ্লেক্স বা ভিটামিন বি১২-এর অভাবেও ক্লান্তিবোধ হতে পারে। পর্যাপ্ত ক্যালরিযুক্ত খাবারের অভাবেও ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন। তাই শরীরে শক্তি বাড়াতে এসব পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে হবে।
২. চুল পড়া
চুলের গঠন মজবুত রাখার জন্য বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান (আয়রন, আমিষ বা প্রোটিন) জরুরি। এ ছাড়া বিভিন্ন ভিটামিন, যেমন বায়োটিন, ভিটামিন ডির অভাবেও চুল পড়া শুরু হতে পারে। এসব পুষ্টিকর উপাদান চুল পাতলা হওয়া প্রতিরোধ করে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তবে অন্য যেসব রোগে চুল পড়ে, সেসব রোগকেও মাথায় রাখা উচিত।
৩. নখ ক্ষয় ও ভঙ্গুর নখ
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। যদিও আরও কিছু রোগের কারণেও নখের ক্ষয় বা পরিবর্তন হতে পারে। সেসব রোগের উপসর্গ বা লক্ষণ না থাকলে এটি অপুষ্টির কারণে হতে পারে। পুষ্টির অভাবে নখে অনেক রকম পরিবর্তন হতে পারে, যেমন নখ ক্ষয়, নখে সাদা দাগ, নখ নড়বড়ে, নখের গঠনগত পরিবর্তন। জিংক, আয়রন, বায়োটিন—এসব পুষ্টির অভাবে এ রকম হতে পারে।
৪. ত্বকের শুষ্কতা
শরীরে পানিশূন্যতা থাকলে চামড়া শুষ্ক হয়ে যায়, অনেক সময় চামড়া ঝুলে পড়ে। ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাবেও এমনটা হতে পারে। কিছু ভিটামিন, যেমন ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই—এগুলোর অভাবেও ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। চামড়ার নমনীয়তা রক্ষার্থে এসব পুষ্টি উপাদান জরুরি।
৫. দুর্বল রোগ প্রতিরোধক্ষমতা
শরীরে বারবার জীবাণুর সংক্রমণ (যেমন কয়েক দিন পরপরই জ্বর, ঠান্ডাকাশি লেগেই থাকা) পুষ্টিহীনতার লক্ষণ হতে পারে। ভিটামিন সি, জিংক, ভিটামিন ডির অভাবে এ রকম দেখা যেতে পারে। এসব খাদ্য উপাদান রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।
৬. মাংসপেশি চাবানো
অনেকে বলেন, ‘হাত-পা চাবায়’ বা অস্বস্তি বোধ হয়। মেডিকেলের ভাষায় এটাকে বলে ‘ক্র্যাম্পস’। অনেক সমস্যার জন্যই এটি হতে পারে, তবে তা অপুষ্টির একটি লক্ষণ। কিছু কিছু খনিজ লবণ (সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম) মাংসপেশির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এসব লবণের ঘাটতিতে সচরাচর এই সমস্যা হতে পারে। তাই খাদ্যতালিকায় এসব লবণসমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে।
৭. অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আগ্রহ
ম্যাগনেশিয়াম লবণটি আমাদের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই মিষ্টিজাতীয় খাবার, লবণাক্ত খাবার; স্ন্যাকস, যেমন চিপস, ভাজাপোড়া খাবার, ফাস্ট ফুড—এগুলোর প্রতি আসক্তি ইঙ্গিত দেয় যে শরীরে লবণ বা চিনির ভারসাম্য নেই।
৮. ক্ষত ধীরে শুকানো
অনেক সময় দেখা যায় আঘাত পেয়ে ক্ষত সৃষ্টি হলে সহজে শুকাতে চায় না। এটি দুর্বল রোগ প্রতিরোধক্ষমতার ইঙ্গিত। যদিও ডায়াবেটিসসহ আরও কিছু রোগে এ রকম হতে পারে। তবে অধিকাংশ সময় দেখা যায়, কিছু পুষ্টি, যেমন ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, জিংকের অভাবে এ রকম হয়। ক্ষতস্থান সারিয়ে তোলার জন্য যে কোলাজেন প্রয়োজন, সেগুলোর জন্য এসব ভিটামিন দরকারি। পাশাপাশি আমিষজাতীয় খাবার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে, যা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। তাই খাদ্যতালিকায় আমিষের ঘাটতিতেও একই লক্ষণ দেখা যায়।
৯. দুর্বলতা ও মাথা ঝিমঝিম
আয়রন বা চিনির ঘাটতি হলে এ রকম লক্ষণ দেখা যায়। যদিও এ রকম লক্ষণের অনেক কারণ আছে, যাকে চিকিৎসক বিশ্লেষণ করে কারণ নির্ণয় করবেন।
১০. বিষণ্নতা
আমাদের মস্তিষ্কে কিছু রাসায়নিক পদার্থের ভারসাম্য পরিবর্তন হলে মানসিক সমস্যা বা উপসর্গ হতে পারে। মানসিক অস্থিরতা, এমনকি বিষণ্নতা পর্যন্ত হতে পারে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের ঘাটতিতে এ রকম হতে পারে।
এই লক্ষণগুলো পুষ্টির অভাবে হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগের কারণেও হতে পারে। এ জন্য একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। লক্ষণ পর্যালোচনা করে তিনিই চিকিৎসা দেবেন। নিজে নিজে ওষুধ খেতে যাবেন না।
ডা. সাইফ হোসেন খান, মেডিসিন কনসালট্যান্ট, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ধানমন্ডি, ঢাকা