প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হরতাল-অবরোধের নামে বিএনপি-জামায়াতের তিন মাসের সন্ত্রাস, নাশকতা ও মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, নাশকতাকারী ও সন্ত্রাসী এবং এর হুকুমদাতা ও ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নাশকতা নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। মানুষের জানমাল রক্ষা সরকারের দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে যা যা করার তা-ই করা হবে।আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আন্দোলনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। এই ব্যর্থতার গ্গ্নানি নিয়েই তিনি ঘরে ফিরে গেছেন, আদালতেও হাজিরা দিয়েছেন। তাহলে তিনি কেন এভাবে মানুষ হত্যা করলেন? তবে তার শিক্ষা হয়েছে, মানুষ হত্যা করে আন্দোলন সফল করা যায় না। গতকাল শুক্রবার রাতে গণভবনে দলের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।আন্দোলনের নামে আগুনে দগ্ধ মানুষের যন্ত্রণা উপলব্ধি করতে বিএনপি-জামায়াতের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, একটি জ্বলন্ত মোমবাতির ওপর এক মিনিট হাত রেখে পরীক্ষা করলেই বোঝা যাবে পোড়া মানুষের যন্ত্রণা কী? যারা আগুনে পুড়ে অর্ধমৃত অবস্থায় বেঁচে আছেন, তাদের সারা জীবন এই অমানুষিক যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থার ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এরা চরম সুবিধাভোগী সংগঠন। একটা কিছু হলেই তারা অনেক কথা বলে। কিন্তু যখন খালেদা জিয়া মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেন, তখন তারা নিশ্চুপ ছিল। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের তাণ্ডবের সময় এসব মানবাধিকার সংগঠন দুই হাজার লোক মারা গিয়েছে বলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিল। তালিকা চাইলে তারা দেড়শ’ জনের তালিকা দিয়েছিল। এদের অনেকেই পরে বলেছিলেন, তারা মারা যাননি। এসব কর্মকাণ্ডের পেছনে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত আপাতত ধ্বংসাত্মক ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকলেও ভবিষ্যতে আবারও এগুলো ঘটাতে পারে। এ জন্য সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দলকে তৃণমূল পর্যন্ত সুসংগঠিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে দলের অধিকাংশ তৃণমূল সম্মেলন শেষ হয়েছে। মানুষের কল্যাণে ত্যাগের মানসিকতা নিয়ে জনগণের পাশে থাকার জন্যও নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
সিটি নির্বাচনের প্রচার কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হতে উপদেষ্টাদের প্রতি আহ্বান :সূচনা বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যে যে এলাকায় থাকেন সেই এলাকার নির্বাচনী কার্যক্রমে যুক্ত হতে হবে। এই নির্বাচনকে সাংগঠনিক ও রাজনৈতিকভাবে নিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের অপপ্রচার ও সন্ত্রাস-নাশকতার জবাব দিতে হবে। প্রমাণ করতে হবে আমাদের সঙ্গেই জনগণ রয়েছে, নাশকতা-সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদীদের সঙ্গে নয়। তারা সন্ত্রাস-নাশকতা ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধেই ভোট দেবে।যত অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রই হোক না কেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া আবারও সভা-সমাবেশ কিংবা সিটি নির্বাচনে ভোট চাইতে নামলে আমাদেরও জনগণের কাছে তার সন্ত্রাস-নাশকতা ও মানুষ হত্যার বিষয়গুলো তুলে ধরতে হবে। তাকে ভোট দিলে তিনি যে আবারও সন্ত্রাস-নাশকতার সুযোগ পাবেন, সে বিষয়েও মানুষকে সচেতন করতে হবে।
বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য অধ্যাপিকা ড. সুলতানা শফি বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীদের ‘শত নাগরিক কমিটি’র অনুরূপ ‘সহস্র নাগরিক কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব দিলে গৃহীত হয়। এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক দলের কেন্দ্রীয় নেতা ড. আবদুর রাজ্জাক দুই-একদিনের মধ্যে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে বলে জানান। উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আঞ্চলিক সম্মেলন করার প্রস্তাব দেন।বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মেজর জেনারেল (অব.) কেএম সফিউল্লাহ বীরউত্তম, অধ্যাপক ড. আবদুল খালেক, অধ্যাপক ডা. এমএ মান্নান এমপি, এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সি প্রমুখ।