মোল্লা ওমর জীবিত এবং সুস্থ রয়েছেন, এমনটাই প্রকাশিত হল আফগান এই তালেবান নেতার জীবনীতে৷ আফগানিস্তানে তালেবানদের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে ১৯ বছর অতিক্রান্ত করলেন বলেও প্রকাশিত হয়েছে৷ রোববার চারটি ভাষায় ১১ পাতার ৫,০০০ শব্দের এই জীবনীটি আফগান তালেবানদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে ওমরের জীবনের বিস্তারিত তথ্য থাকায় তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের অবসান হবে বলে ধারণা করছে তালেবানরা৷ওমর খুব সাধারণ জীবনযাপন করেন ও তার “বিশেষ” ধরনের কৌতুকবোধ আছে (সেন্স অব হিউমার) বলে জীবনীতে জানানো হয়েছে। তার প্রিয় অস্ত্র আরপিজি সেভেন। তবে মোল্লা ওমর কোথায় থাকেন তা কেউ না জানলেও তিনি সবসময় আফগানিস্তানের প্রতিদিনকার ও বিশ্বের সব ঘটনার খবরাখবর রাখেন বলেও জীবনীতে দাবি করা হয়েছে।
ওমর ১৯৬০ সালে কান্দাহার প্রদেশের খাকরেজ জেলার চাহ-ই-হিম্মাত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছেন বলে জীবনীটিতে বলা হয়েছে। তার পুরো নাম মোল্লা মোহাম্মদ উমর মুজাহিদ উল্লেখ করে তিনি হোটাক নৃগোষ্ঠীর তোমজি গোত্র থেকে এসেছেন বলে জানানো হয়েছে। বাবার নাম মৌলভি গুলাম নবি, যিনি একজন ‘শ্রদ্ধেয় পণ্ডিত এবং সামাজিক নেতা’ ছিলেন। ওমরের জন্মের পাঁচ বছর পর তার মৃত্যু হয়। বাবার মৃত্যুর পর ওমরদের পরিবার উরুজগান প্রদেশে চলে যায়।
সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনারা আফগানিস্তান দখল করে নিলে ওমর মাদ্রাসার পড়াশোনা ছেড়ে জিহাদে নামেন। ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিনি সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেন। এ সময় তিনি চারবার আহত হয়েছিলেন এবং তার ডান চোখ হারান।
এরপর ১৯৯২ সালে আফগানিস্তানে কমিউনিস্ট শাসন অবসানের পর দেশটির যুদ্ধবাজ নেতারা “গোষ্ঠীগত হানাহানিতে” জড়িয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ১৯৯৪ সালে ওমর দেশটির ইসলামি মুজাহিদদের নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং হানাহানি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। ১৯৯৬ সালে তাকে “আমির-উল-মোমেনিন” খেতাব দেওয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চ নেতা মনোনীত করা হয়।
এক অধ্যায়ে ওমরের “ক্যারিশম্যাটিক ব্যক্তিত্ব” সম্পর্কে বলা হয়েছে, মোল্লা ওমর কখনোই বিচলিত হন না, কখনো মেজাজ হারান না, সাহসও হারান না। নিজের সহকর্মীদের চেয়ে কখনোই নিজেকে শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচনা করেন না। বিশেষ ধরনের কৌতুকবোধের অধিকারী এই মানুষটির নিজের কোনো বাড়ি নেই, বলার মতো কোনো সম্পত্তিও নেই। আল কায়েদা নেতা ওসাম বিন লাদেনকে আফগানিস্তানে থেকে দল পরিচালনায় সব ধরনের সহযোগিতা করেছিলেন ওমর। তিনি সম্ভবত পাকিস্তানের করাচি শহরেই লাদেনের মতো কোনো প্রাসাদোপম বাড়িতেই লুকিয়ে রয়েছেন, এমনও লেখা রয়েছে ওই জীবনীতে৷ ২০০১ সালে আমেরিকার আফগানিস্তান দখলের পর থেকে ওমরকে আর কখনও প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। সেই থেকে আমেরিকা মোল্লা ওমরের মাথার দাম ধার্য করেছে এক কোটি ডলার৷