সোনিয়া গান্ধীর চামড়ার রং সাদা বলেই কংগ্রেস তাকে নেত্রী বলে মেনে নিয়েছে – এই মন্তব্য করে তুমুল শোরগোল ফেলে দিয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য ও বিতর্কিত বিজেপি নেতা গিরিরাজ সিং।
বিহারের হাজীপুরে এক সাংবাদিক বৈঠকের শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতার সময় তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, রাজীব গান্ধী কোন নাইজেরিয়ান মহিলাকে বিয়ে করলে কংগ্রেস কি সেই স্ত্রীকে নেত্রী হিসেবে মেনে নিত?
এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর সোশ্যাল মিডিয়াতে গিরিরাজ সিংকে তুলোধোনা করা হচ্ছে, আর কংগ্রেস বলেছে এটা তার মানসিক অসুস্থতার পরিচয়!
বিহারের বিতর্কিত বিজেপি নেতা গিরিরাজ সিং হলেন সেই রাজনীতিক, যিনি ভারতে লোকসভা ভোটের আগে মন্তব্য করেছিলেন নরেন্দ্র মোদির বিরোধীদের সবার পাকিস্তানে চলে যাওয়া উচিত।
নওয়াদা কেন্দ্রের এমপি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য এই দাপুটে নেতাকে গতকাল (মঙ্গলবার) বিহারের হাজীপুরে সাংবাদিকদের সামনে বলতে শোনা যায়, রাজীব গান্ধী যদি কোনো নাইজেরিয়ানকে বিয়ে করতেন, তার স্ত্রীর যদি গোরা চামড়া না হত, তাহলে কংগ্রেস কি তার নেতৃত্ব মেনে নিত?
গিরিরাজ সিং যদিও বলেছিলেন তার এই সব কথাবার্তা অফ দ্য রেকর্ড, তার পরেও উপস্থিত একজন সাংবাদিক নিজের মোবাইল ফোনে তা রেকর্ড করে নেন। পরে আজ বুধবার সেই অডিও ক্লিপিংস সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, তার মন্তব্যে মানসিক অসুস্থতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে – এবং প্রধানমন্ত্রীকে গিরিরাজ সিংয়ের হয়ে ক্ষমা চাইতে হবে।
দলীয় মুখপাত্র আরপিএন সিং বলেন, “তার এই মন্তব্য শ্রীমতি সোনিয়া গান্ধী তো বটেই, দেশের সব নারীর জন্যই চূড়ান্ত অবমাননাকর। বিজেপি-র নেতামন্ত্রীরা প্রায় প্রতি সপ্তাহেই এ ধরনের মারাত্মক সব মন্তব্য করছেন – এবং গিরিরাজ সিংয়ের এই মন্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়া উচিত।
নাইজিরীয় দূতের ক্ষোভ
ভারতে নিযুক্ত নাইজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত ও বি ওকোঙ্গোর-ও বলেছেন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের একজন ব্যক্তির কাছ থেকে এই ধরনের মন্তব্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং ভারত ও নাইজেরিয়ার যা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, তাতে এটা আশা করা যায় না।
বামপন্থী নেত্রী বৃন্দা কারাট তার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, গিরিরাজ সিং ধারাবাহিকভাবে একই অপরাধ করে চলেছেন, কিন্তু সরকার সেগুলো দেখেও দেখছে না।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, গিরিরাজ সিং তার নানা আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে পুরস্কৃত হয়েছেন, মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, তিনি একটানা এত নিম্ন রুচির ও নিন্দনীয় মন্তব্য করে যাওয়ার পরও প্রধানমন্ত্রী কেন নীরব? কীভাবে তিনি এখনও মন্ত্রিসভায় আছেন?
এদিকে আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ও বিরোধীদের আক্রমণের মুখে পড়ার পর গিরিরাজ সিং অবশ্য আত্মপক্ষ সমর্থনে বলেছেন, লোকে অফ দ্য রেকর্ড অনেক কথাই বলে, তবে সোনিয়া গান্ধী তার কথায় আঘাত পেয়ে থাকলে তিনি দুঃখিত।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গিরিরিাজ সিং বিহারে বিজেপির সবচেয়ে প্রভাবশালী ভূমিহার নেতা – এবং যেহেতু সামনেই ওই রাজ্যে ভোট আসছে, তাই তার মন্তব্য যতই নিন্দনীয় হোক বিজেপি তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে সাহস পাবে না।