যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ১০ ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। যবিপ্রবি অ্যাক্ট এবং কোড অব কন্ডাক্ট লঙ্ঘন করে ক্যাম্পাসে মিছিল-সমাবেশ করায় এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়।
একইসঙ্গে নিয়ম লঙ্ঘনের ঘটনার অধিকতর তদন্তে নয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে।
ট্রেজারার প্রফেসর শেখ আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে শনিবার বেলা একটায় নিজস্ব কনফারেন্স রুমে যবিপ্রবি প্রশাসনের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, প্রক্টর, প্রভোস্ট, ছাত্র উপদেষ্টাসহ গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা অংশ নেন। তবে উপাচার্য প্রফেসর ড. আবদুস সাত্তার খুলনায় অবস্থানের কারণে তিনি সভায় উপস্থিত ছিলেন না।
সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা হায়াতুজ্জামান মুকুল জানান, যবিপ্রবি অ্যাক্ট এবং কোড অব কন্ডাক্ট লঙ্ঘন করার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ১০ ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে এ দশ ছাত্রের নাম ও রাজনৈতিক পরিচয় জানাননি জনসংযোগ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, “রোববার বিস্তারিত জানানো হবে।”
জনসংযোগ কর্মকর্তা আরও জানান, শনিবার ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া ঘটনার ব্যাপারে নয় সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। ট্রেজারার প্রফেসর শেখ আবুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন এ টিম তিন কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করবে। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ। এ নিষিদ্ধাদেশ অমান্য করে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ নামে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসে মিছিল-সমাবেশ করে ছাত্রলীগ। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অপসারণ, বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারসহ বেশ কিছু দাবি জানায়। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে একটি বোমাও বিস্ফোরিত হয়। ছাত্রদের এই কর্মকাণ্ডকে রাজনৈতিক কার্যকলাপ হিসেবে বিবেচনা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুপুরে জরুরি সভা বসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে এবং পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক বলে দাবি করেছেন যশোর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার আককাছ আলী।
এর আগে ছাত্রসংগঠনের প্রচারপত্র, বই-পুস্তক পাওয়ায় এ যাবৎ বেশ কয়েক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস হওয়া সত্ত্বেও গত বছরের ১৬ মে সুব্রত বিশ্বাসকে সভাপতি ও এস এম শামিম হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগ আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি ঘোষণা করে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি যবিপ্রবি কমিটিকে অনুমোদন দেয়।
সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন হওয়ায় তখন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে ওই বছরের ১৪ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে ছাত্রলীগের বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র নাইমুল ইসলাম রিয়াদ।
রিয়াদ খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে কর্তৃপক্ষ ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বহিষ্কার করে। নিহত রিয়াদের মামা বাদী হয়ে যে হত্যা মামলা করেন, তাতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ওই দুই নেতাসহ জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুলও আসামী। গত বছর ১৮ নভেম্বর ক্যাম্পাসে গেলে নিহত রিয়াদের সহপাঠীরা সুব্রতকে পুলিশে দেয়। আর শামীম চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।