বিশ্বকাপের শুরুতে প্রায় প্রত্যেকেই সেমিফাইনালিস্ট হিসেবে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে ধরে রেখেছিল৷ চতুর্থ দল হিসেবে লড়াইয়ে রেখেছিল নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানকে৷ কেউ কল্পনা করতে পারেনি ব্রেন্ডন ম্যাকালামের নেতৃত্বে নিউজিল্যান্ড এভাবে ঝড় তুলে দেবে৷ যেভাবে একত্রিত হয়ে খেলছে, তাতে এখন তো ফাইনালিস্ট হিসেবেও ওদের ফেবারিট ধরতে হচ্ছে৷ ওদের বোলিং অ্যাটাকে দুর্দান্ত ভারসাম্য রয়েছে৷ সঙ্গে এই বয়সেও ড্যানিয়েল ভেট্টরির বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং দলের স্পিন বিভাগের বিকল্প বাড়িয়েছে৷ ওদের ব্যাটিং গভীরতা অনেক৷ শুরুতেই ওদের ওপেনাররা প্রথম ১০ ওভারেই বিপক্ষের হাত থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে৷ তা ছাড়া ওদের রিজার্ভ বেঞ্চে অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা রয়েছে৷ সুতরাং যদি কোনো কারণে ম্যাচের সকালে নিয়মিত ক্রিকেটারদের কোনো একজনকে না পাওয়া যায়, তা হলে পরিবর্ত হিসেবে এমন কাউকে দলে নেওয়া হবে যার বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে৷ হতে পারে, এবারের টুর্নামেন্টে সে হয়তো প্রথম একাদশে সুযোগই পায়নি৷
দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের নক আউট পর্বের ম্যাচ জিততে পারে না বলে যে অপবাদ ছিল, সেই চাপ কিছুটা হলেও ঘাড় থেকে নামিয়ে ফেলতে পেরেছে প্রোটিয়ারা৷ যদিও অধরা বিশ্বকাপ জয়ের চাপটা এখনও রয়েছে৷ এবারই ওদের সামনে সেরা সুযোগ৷ কারণটা অবশ্যই প্রোটিয়াদের দলের ভারসাম্য, তা সে যে উইকেটেই ওদের নামিয়ে দেওয়া হোক না কেন৷ পেস বোলিংয়ে ডেল স্টেন, মর্নি মরকেল, অ্যাবটের ভয়ঙ্কর গতি এবং সেই সঙ্গে উইকেটের দুই প্রান্ত থেকে নতুন বল নেওয়ার নিয়ম৷ এই সুযোগটা ওরা কাজে লাগাতে চাইবে৷ মাঝের ওভারগুলিতে ইমরান তাহির ও জে পি ডুমিনি অনবদ্য৷ আঁটোসাঁটো বোলিংয়ের পাশাপাশি ওরা নিয়মিত উইকেট তুলে নিচ্ছে৷ স্টেন-মরকেল-অ্যাবটদের পেস-সুইংয়ের সামনে বিধ্বস্ত হয়ে স্পিনারদের আক্রমণ করতে যাচ্ছে বিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা৷ সেই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে তাহির-ডুমিনিরা৷ তবে চাপের মধ্যে প্রোটিয়াদের ব্যাটিংকে একটু নড়বড়ে দেখাচ্ছে৷ বিশেষ করে রান তাড়া করার ক্ষেত্রে৷ গত বিশ্বকাপেও ওরা নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেছিল৷ কোয়ার্টার ফাইনালে খুব কম রান তাড়া করতে নেমেও ব্যর্থ হতে হয়েছিল প্রোটিয়াদের
অকল্যান্ডের মাঠ অবশ্য ব্যাটসম্যানদের স্বস্তি দিতে পারে৷ এখানে ঠিকঠাকভাবে ব্যাটে না লাগা সোজা শটও গ্যালারিতে গিয়ে পড়বে৷ কোয়ার্টার ফাইনালে দুর্দান্ত দ্বিশতরানের ইনিংস খেলা মার্টিন গাপটিলও হয়ত এখানে সোজা শট মারার ক্ষেত্রেই জোর দেবে৷ গ্রুপ লিগে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টানটান উত্তেজনার ম্যাচে উইকেট থেকে এগিয়ে এসে প্যাট কামিন্সকে ছয় মেরে ম্যাচ জিতিয়েছিল কেন উইলিয়ামসন৷ সেটাও শেষ ব্যাটসম্যানকে সঙ্গে নিয়ে৷ ওদিকে এ বি ডি’ভিলিয়ার্সও এমন এক ব্যাটসম্যান যে সোজা শট মারার ক্ষেত্রে সবসময় জোর দিয়ে থাকে৷ সুতরাং স্নায়ুর লড়াই শুরু না হলে প্রচুর ছক্কা দেখা যাবে৷ কারা ম্যাচ জিতবে সেটা বলা মুশকিল৷ নিউজিল্যান্ড নিজেদের এই ছন্দ ধরে রাখতে চাইবে৷ প্রোটিয়ারাও সেটাই চাইবে৷ সেক্ষেত্রে মোলবোর্নের টিকিট পেতে হলে ওদের স্নায়ুর চাপ সামলাতে হবে৷