সাকিবরা যেন দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে নেমেছেন

SHARE

sakib masএরকম প্রশ্ন আগে কখনও, কোনো সাংবাদিক সম্মেলনে শুনিনি৷ এই যে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে গেলেন, এর পর ড্রেসিংরুমে এমন আলোচনার কোনো রেশ থাকে নাকি? মানে, এই ধরুন, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে যাওয়ার পর, বিশেষ কোনো প্রতিক্রিয়া মাথায় বা মনে তৈরি হয় নাকি? প্রশ্নকর্তা বাংলাদেশের এক ক্রিকেট লিখিয়ে৷ বক্তা সাকিব আল হাসান৷ কী উত্তর দেবেন তিনি এমন অদ্ভুত প্রশ্নের? এটাও সঙ্গে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এখানে কথা বলার পর কোনো চাপ, ভেতরে ভেতরে, অনুভব করেন কিনা৷ সংক্ষিপ্ত জবাব দিলেন বাংলাদেশের সহ-অধিনায়ক, ‘চাপ কেন হবে? এটা একটা পেশাদারি কর্তব্য৷ প্রেস কনফারেন্সে কথা বলা৷ কথা বলা শেষ মানে শেষ৷ ব্যাপারটা এর পর আর মাথায় থাকে না৷’

মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে এসেছেন ৩৪ জন৷ আরও কয়েকজন রাতের মধ্যে এসে পড়বেন৷ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যম্ত পৌঁছনোর পর, পদ্মাপারের দেশে প্রবল সাড়া পড়ে গেছে৷ ক্রিকেটারদের অস্হিরতা দেখলেই দেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিফোন করে তাদের দেশের ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিকে অনুরোধ করেন এই বার্তা পৌঁছে দিতে যে ছটফট না করে, ধৈর্য না হারিয়ে ক্রিকেটাররা যেন খেলা চালিয়ে যান৷ এখন যা পরিস্হিতি, তাতে ও দেশের এক বিরাট অংশের ধারণা, বৃহস্পতিবার তাদের দেশই জিতবে৷ ও দেশের ক্রিকেট লিখিয়েদের একাংশ ভয় পাচ্ছেন, আসল ছবি তুলে ধরতে৷ ভারত যে তুলনায় শক্তিশালী দল, এটা লিখতে গিয়ে ওরা হোঁচট খাচ্ছেন৷ বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এখন মাশরাফিদের সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক কথা শুনতে চাইছেন না৷

সাকিব জানিয়ে গেলেন, এবার এখানে ক্রমাগত নিজেদের খেলায় উন্নতি হওয়ার পর থেকেই তাদের সম্পর্কে প্রত্যাশা বাড়ছে৷ এবং এটা তাদের আরও ভালো খেলার জন্য উজ্জীবিত করে যাচ্ছে৷ মোটেই জনতার প্রত্যাশায় তারা কোনো নেতিবাচক ব্যাপার দেখছেন না৷ এবং তাদের ঘিরে দেশের মানুষদের আগ্রহ বাড়ছে প্রতি ঘণ্টায়৷ ‘এই আগ্রহ বাড়ার মধ্যে কোনো অস্বাভাবিকতা খুঁজে পাচ্ছি না৷ ভাল খেলা, তা-ও বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারানো, কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যম্ত পৌঁছে যাওয়া, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওদের ঘরের মাঠে সমান তালে লড়ে যাওয়ার ফলে আমাদের প্রতি দেশে উন্মাদনা বেড়ে যাওয়ার মধ্যে অবাক হচ্ছি না৷ এ জন্যই তো বলছি, ভারতের সামনে উপযুক্ত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত৷’

এ কথা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে সাকিব জানিয়ে দিলেন, মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের মতো বড় মাঠে মাত্র একটি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা থাকা বা তুলনায় বৃহস্পতিবার গ্যালারিতে অনেক বেশি ভারতীয় দর্শক থাকা সত্ত্বেও তাদের সেরা খেলাটা মেলে ধরতে অসুবিধা হবে না৷ মেনে নিলেন, বড় মাঠ মানে ফিল্ডিং সাজানোর ব্যাপারে, বুদ্ধি খরচ করার মতো ব্যাপারেও তারা ভারতকে টেক্কা দিতে পারবেন৷ ‘আরে, একটা খারাপ দিন যে বৃহস্পতিবারই হবে না, তা কি ভারতীয় ক্রিকেটাররা জোর দিয়ে বলতে পারে? কিছুই হারানোর থাকবে না সেদিন, এটা সত্যিই একটা বড় ব্যাপার৷’

দেখা হলেই বাংলাদেশের অধিকাংশ ক্রিকেট লিখিয়ে জানতে চাইছেন, ‘দাদা, কত পার্সেন্টেজ দিতে চাইছেন?’ কে বোঝাবে, এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ সম্পর্কে, আগাম পূর্বাভাস না দেওয়া ভালো৷ উত্তর একটা দিতেই হবে? যে-ই বললাম, ‘৬৫: ৩৫৷’ পরের প্রশ্ন, কাদের স্বপক্ষে? এই প্রশ্নের মাঝেই যে আশা লুকিয়ে থাকছে, তা হল, ৬৫ শতাংশ বোঝাতে বাংলাদেশের কথা বোঝাতে চাইছি কিনা৷ যা বুঝে ছোট উত্তর দিলাম, ‘অবশ্যই ভারত৷’ এবার জবাব পেলাম, ‘২০০৭ বিশ্বকাপের কথা ভুলে গেলেন? পরে, শচীনের ১০০ সেঞ্চুরির ম্যাচে আমরা আবার হারিয়ে দিয়েছিলাম৷ সব ভুলে গেলেন নাকি?’ পাল্টা জবাবে অনেক কিছু বলা যেত৷ কিন্তু এই মুহূর্তে ওরা নিরাশ হতে চাইছেন না৷ প্রায় দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে মেতে আছেন বলে মনে হলো৷

মাশরাফি, সাকিবরা অবশ্য এখন উচ্চাকাঙ্খী হয়ে পড়লেও, প্রকাশ ভঙ্গিটা এতটা উগ্র নয়, ‘আমরা ভয়হীন ক্রিকেট খেলব৷ ভারত ভাল টিম তো বটেই, কিন্তু আমাদের মনে হচ্ছে, এখানেও টিম ইন্ডিয়াকে হারানো সম্ভব৷’ কিন্তু যারা মাঠের বাইরে গলা ফাটাবেন, কাগজে লিখবেন, টেলিভিশনে বক্তব্য রাখবেন, সেই বাংলাদেশি অনুরাগীরা কোনো সমস্যার কথা এ মুহূর্তে শুনতে চাইছেন না৷ ভারতকে হারানোর পর, ওরা চাইছেন সেমিফাইনালে, পাকিস্তানকে হারাতে, ‘২৬ মার্চ হলো আমাদের বিজয় দিবস৷ স্বাধীনতা পেয়েছিলাম আমরা সেদিন৷ আর, আইসিসি, কাকতালীয়ভাবে, সেদিনই রেখেছে দ্বিতীয় সেমিফাইনাল৷ চাইতাছি সেদিন পাকিস্তানকে হারাতে৷ এর চেয়ে সুখের মুহূর্ত আমরা যে পাইনি আগে, দাদা৷’ তার মানে তো ফাইনালে পৌঁছে গেলেন? তার পর? ‘ধুস, এত সব ভালো ভালো ব্যাপার আমাদের কপালে আছে নাকি?’ কতটা আবেগ থেকে ফাইনাল পর্যম্ত পৌঁছনোর ব্যাপারটা ভাবা যায়, তা কল্পনা করে নিন৷ বলছি না, বাংলাদেশ যেন এখানে বৃহস্পতিবার ধোনিদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে নামতে চাইছে!

দেবাশিস দত্ত: কলকাতার সাংবাদিক