পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার সাবেক সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টি নেতা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গ্রহণ করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল প্রসিকিউশনের আবেদন গ্রহণ করে আজ এ আদেশ দেয়।
আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উপস্থাপনের পর তাকে গ্রেফতারের আদেশ প্রার্থনা করে প্রসিকিউশন। প্রসিকিউশন টিমের সদস্য জাহিদ ইমাম সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। মামলায় আগামী ২ জুন পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে।
জব্বারের বিরুদ্ধে গতকাল ট্রাইব্যুনালের রেজিষ্টারের মাধ্যমে ৫টি অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল ও জাহিদ ইমাম। এর আগে জব্বারের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, ধর্মান্তরকরণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো ৫টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তদন্ত প্রতিবেদন ২৯ এপ্রিল দাখিল করে তদন্ত সংস্থা। তার বিরুদ্ধে সাক্ষী করা হয়েছে ৪৬ জনকে। এর মধ্যে ৪০ জন ঘটনার এবং ৬ জন জব্দ তালিকার সাক্ষী ।
জব্বারের বিরুদ্ধে আনীত পাঁচ অভিযোগের মধ্যে ১ম অভিযোগে বলা হয়েছে, জব্বার মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার ফুলঝড়িতে দুজন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে। এছাড়া নাথপাড়া ও কুলুপাড়ার শতাধিক বাড়িতে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে।
২য় অভিযোগে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সময়সে ফুলঝুড়িতে সে একজনকে হত্যা এবং ৩৬০টি বাড়ি-ঘর লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে। ৩য় অভিযোগে বলা হয়েছে, নলিতে সে ১১ জনকে গণহত্যা ছাড়াও ৬০টি বাড়ির মালামাল লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে। ৪ নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ফুলঝড়িতে প্রায় দুইশত নিরস্ত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের লোককে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করে জব্বার। ৫ম অভিযোগে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় জব্বার আঙ্গুলকাটা এবং মঠবাড়ীয়া থেকে ৩৭ জনকে আটক, মালামাল লুণ্ঠন, অপহরণ, নির্যাতন, ১৫ জনকে গুরুতর জখম এবং ২২ জনকে হত্যা করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) মো. হেলাল উদ্দিন গত ২৯ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের কাছে জব্বারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন। ৯৯ পৃষ্ঠার তদন্তের মূল প্রতিবেদনসহ সাক্ষ্য ও তথ্য প্রমাণ সমৃদ্ধ ৮টি ভলিয়্যমে আরো ১ হাজার ৯০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন রয়েছে।
তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সদস্য সানাউল হক বলেন, আব্দুল জব্বারের শ্বশুর ছিল স্থানীয় মুসলিম লীগ নেতা। আর জব্বার ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর সহযোগী মঠবাড়ীয়া থানা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান। বর্তমানে তার বয়স আনুমানিক ৮০ বছর।
তিনি বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে-জানতে পেরে এ আসামী বিদেশে পালিয়ে গেছে। সে আমেরিকার ফ্লোরিডায় রয়েছে বলে তথ্য রয়েছে। সেখানে আগে থেকেই তার ছেলে মেয়ে থাকে।
সানাউল হক বলেন, শ্বশুরের হাত ধরেই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকা ও মানবতাবিরোধী নানা অপরাধ সংঘটিত করে সে। এলাকায় রাজাকার বাহিনী সংগঠিত করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয় জব্বার। তার নির্দেশেই মঠবাড়িয়ায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক, মেধাবী ছাত্র ও হিন্দুদের হত্যাসহ নানা মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘঠিত হয়। জব্বার সুন্দরবন উপকূল এলাকার রাজাকারদেও নেতা ছিল।
জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে ১৯৮৬ সালে পিরোজপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয় জব্বার। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য হয়। ১৯৯১ সালের পর বিএনপিতে যোগ দেয় সে। পরে আবার জাতীয় পার্টিতে ফিরে আসে জব্বার।