ভারতে গণধর্ষকের তথ্যচিত্র সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা

SHARE

rape 3ভারতের রাজধানী দিল্লিতে মেডিকেলছাত্রীকে গণধর্ষণ ও হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির বক্তব্য নিয়ে নির্মিত ‘ইন্ডিয়া’স ডটার’ তথ্যচিত্রটি গণমাধ্যমে সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির একটি আদালত।

বার্তা সংস্থা এএফপি বুধবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
পুলিশের মুখপাত্র রাজন ভগত বলেন, ‘তথ্যচিত্রটি সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত আদালতের রায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দিল্লি পুলিশের হাতে এসে পৌঁছেছে।’
তিনি এএফপিকে আরও বলেন, ‘আমরা কেবল তথ্যচিত্রটির চৌম্বক অংশ দেখেছি। পরে বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হয়। কারণ এতে জনশৃঙ্খলা ভঙ্গের আশঙ্কা রয়েছে।’
২০১২ সালের ডিসেম্বরে নয়া দিল্লিতে চলন্ত বাসে মেডিকেলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় দণ্ডিত মুকেশ সিং ব্রিটিশ তথ্যচিত্র নির্মাতা লেসলি উডউইনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে তার মত প্রকাশ করেন। এতে তার মধ্যে অনুশোচনার কোনো লেশ ছিল না। বরং তিনি বুঝিয়েছেন যেন ওই অপকর্ম করে ঠিক কাজটিই করেছেন।
সাক্ষাৎকারে মুকেশ বলেন, ‘ভদ্র মেয়েরা কখনও রাত ৯টার দিকে ঘুরে বেড়ায় না। ধর্ষণের জন্য একটা ছেলে যতটা দায়ী, একজন মেয়ে তার চেয়ে অনেক বেশি দায়ী। মেয়েদের কাজ হলো ঘরের কাজ করা, সংসার সামলানো। রাতে ডিসকো নাচে যাওয়া ও বারে ঘুরে বেড়ানো, আজেবাজে কাজ করা, ভুলভাল পোশাক পরা তাদের কাজ নয়। এ ধরনের মেয়েদের শিক্ষা দেওয়ার অধিকার অন্যদের আছে। কেবল ২০ শতাংশ মেয়ে ভালো।’
এ তথ্যচিত্রটি আগামী ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসে ভারত ও যুক্তরাজ্যসহ সাতটি দেশে সম্প্রচার হওয়ার কথা। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞায় মর্মাহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তথ্যচিত্রটির পুরস্কারজয়ী নির্মাতা উডউইন।

উডউইন জানিয়েছেন, নারীদের প্রতি পুরুষের মনোভাব উন্মোচন করাই ছিল তার উদ্দেশ্য। এই সাক্ষাৎকারে উত্তেজনাকর কিছু নেই বলেও দাবি করেছেন তিনি।
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে ‘লাইফ অব পাই’ সিনেমা দেখে এক ছেলেবন্ধুর সঙ্গে ফিরছিলেন ওই মেডিকেলছাত্রী। রাত সাড়ে ৮টার দিকে একটি বাসে ওঠেন তারা। এতে এক কিশোরসহ ছয় জন লোক ছিল। ছেলেবন্ধুকে মারধরের পর পালাক্রমে তারা সবাই মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। এরপর লোহার রড দিয়ে মেয়েটিকে ভয়ানক জখম করে দুজনকেই বাস থেকে ফেলে দেয়া হয়। প্রায় ১৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মেয়েটি মারা যায়। এ ঘটনায় শুধু দিল্লি নয়, ভারতজুড়ে মেয়েদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
এ ঘটনায় জড়িত ছয় জনই গ্রেফতার হয়। কিশোর অপরাধীকে সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে দেশটির আদালত। এ ঘটনার অন্যতম আসামি ও মুকেশ সিংয়ের ভাই রাম সিং তিহার কারাগারে থাকা অবস্থায় মারা যায়।
সাক্ষাৎকারে মুকেশ আরও বলেন, ‘ধর্ষণের সময় তার (মেডিকেলছাত্রী) বাধা দেয়া উচিত হয়নি। নিশ্চুপ থেকে ধর্ষণ হতে দেওয়া উচিত ছিল। তাহলে তারা (ধর্ষণে জড়িত পাঁচজন) ধর্ষণের পর তাকে ফেলে চলে যেতেন, কেবল সঙ্গে থাকা যুবককে মারধর করা হতো।’
এ অপরাধের জন্য শাস্তি হিসেবে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড প্রসঙ্গে মুকেশ বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ড মেয়েদের জন্য পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক করে তুলবে। আমরা যেমন মেয়েটিকে ধর্ষণের পরই ছেড়ে দিয়েছিলাম, এখন আর কেউ তা করবে না। এখন ধর্ষণের পর মেয়েটিকে হত্যা করা হবে।’
বিবিসির ম্যাগাজিনে মঙ্গলবার এ সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়। এটি প্রকাশিত হওয়ার পর ভারতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়ে নিহত ওই মেডিকেলছাত্রীর মা-বাবাও মুকেশ সিংয়ের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
এদিকে, তিহার জেল কর্তৃপক্ষের কাছে ভারত সরকার কৈফিয়ত চেয়েছে, কেন তথ্যচিত্র নির্মাতাকে এ সাক্ষাৎকার নেয়ার অনুমতি দেয়া হল।