বিশ্বজুড়ে ব্যাপক কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ভূমিকা এখন সর্বজন স্বীকৃত। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধন, সম্পদের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা, আন্তঃখাত সংযোগ স্থাপন, রফতানি বৃদ্ধি এবং উদ্যোক্তার কর্মদক্ষতা বাড়াতেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) খাত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এ কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো বিশেষত এসএমই খাতকে প্রাধান্য দিয়ে জাতীয় নীতি-কৌশল প্রণয়ন করছে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই এসএমই কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধিতেও এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশের ক্রমবর্ধমান মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আয় বৃদ্ধি, সামাজিক প্রয়োজন পূরণ এবং শিল্পের ফরওয়ার্ড ও ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ উন্নত করার প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে এ খাত। এশিয়ান বিজনেস রিভিউয়ের তথ্য মতে, বাংলাদেশে উদ্যোক্তাদের ৮০ শতাংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের। জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান ২৫ শতাংশ। আর কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এ খাতের অবদান ৪০ শতাংশের মতো। যেখানে ভারতে উদ্যোক্তাদের ৯৭.৬ শতাংশ এসএমই এবং জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান ৮০ শতাংশ। চীনে উদ্যোক্তাদের ৯৯ শতাংশই এসএমই। জিডিপির ৬০ শতাংশ এ খাতের অবদান। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এসএমই খাতের অবদান ৯২ শতাংশ। জাপানে উদ্যোক্তাদের ৯৯.৭ শতাংশ এসএমই। জিডিপির প্রায় ৬৯.৫ শতাংশ এবং কর্মসংস্থানের ৭২ শতাংশ এসএমই খাতের।
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য পৃথক এসএমই ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এমনকি নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ গ্রহণের সুবিধার্থে প্রতিটি শাখায় পৃথক নারী ডেস্কও স্থাপন করা হয়েছে।
সরকারের এসএমই খাতের এই অগ্রাধিকারকে বাস্তবে রূপ দিতে বেসরকারিখাতের ইসলামী ব্যাংকও নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে শুরু থেকেই বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডেও সংযুক্ত ছিল এ ব্যাংক। এ ব্যাংক ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্য পূরণে সম্পদের সমবণ্টনের লক্ষ্যে নিম্ন আয়ের মানুষদের ও এসএমই খাতে বিনিয়োগ প্রদানে গুরুত্ব ও প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
সরকারের নীতি ও লক্ষ্যকে স্বাগত জানিয়ে ইসলামী ব্যাংক এসএমই খাতের ব্যাপক প্রসারে কাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণের ২৪ শতাংশ এসএমই খাতের। এসএমই বিনিয়োগে সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকগুলো দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
বেসরকারি ব্যাংকগুলো তাদের ঋণের ২৭ শতাংশই দিয়েছে এসএমই খাতে। বর্তমানে ১ লাখ ৩০ হাজার এসএমই উদ্যোক্তা ইসলামী ব্যাংকের সাথে জড়িত। এক্ষেত্রে পুরুষ ও নারী উদ্যোক্তার অনুপাত ৭৭:২৩। ২০১৪ সালে ইসলামী ব্যাংক এসএমই খাতে ২৪৯৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রদান করেছে। যা এ খাতে জাতীয় ঋণ বিতরণের ২৭ শতাংশ।
উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ নানাবিধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এ ব্যাংক। উদ্যোক্তাদের দোরগোড়ায় এসএমই সেবা পৌঁছে দিতে ইসলামী ব্যাংকের ২৯৪টি শাখা এবং ১৪ হাজার কর্মকর্তা নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের এই শ্রম এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার সুফল-স্বীকৃতি দুই-ই মিলেছে। দেশের এসএমই খাতের উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ সালের কর্মকান্ডের ভিত্তিতে এসএমই ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক যৌথভাবে ‘বর্ষসেরা ক্ষুদ্রউদ্যোক্তা বান্ধব ব্যাংক’ পদকে ভূষিত হয় ইসলামী ব্যাংক।