হ্যাঁ, কোনো ভনিতা না করে সোজাসাপটা ভাবেই বলছি যে এক সময়ে যাদের লেখা সমালোচনা পড়ে দর্শক হলমুখী হতেন, সেই সব ফিল্ম ক্রিটিকদের কথার উপর আর বিন্দুমাত্র ভরসা করেন না ভারতের ম্যাঙ্গো পিপল। বরং তারা যে ছবিকে সব থেকে খারাপ রেটিং দেন দর্শক সাহস করে এখন সেই সব ছবি দেখতেই বেশি উত্সাহী। খুব বেশি দিন না, ফিল্ম ক্রিটিকদের রমরমা চাহিদায় ঘাটতি পড়তে শুরু করেছে গত দু’বছর যাবত্। আর এখন তো তা প্রায় তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। ১০ বছর আগেও যাদের কলমের ছোঁয়ার প্রভাব পড়ত একটি ছবির বক্স অফিস সাফল্যে, যাদের মতামত প্রধান্য পেত ছবি করিয়ে থেকে শুরু করে দর্শকদের কাছে তাদের এত দুরবস্থা হলো কেন!
একদিনে এই জায়গায় এসে পৌঁছায়নি ফিল্ম ক্রিটিকদের অবস্থান। বছরের পর বছর ধরে বেশ কয়েকটি ফ্যাক্টর কাজ করেছে। তারই মধ্যে অন্তত পাঁচটি কারণ তো অনায়াসে চিহ্নিত করতে পারি।
এই দুরবস্থার জন্যে ফিল্ম ক্রিটিকরাই সব থেকে বেশি দায়ী। কারণ একটা সময়ে টাকার বিনিময়ে তারা ভালো রিভিউ লিখতে শুরু করেছিলেন। এর জন্যে বহু প্রোডাকশন হাউজেই নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা বরাদ্দ থাকত। ঠিক ক্যানসারের মতোই এই অভ্যেস আস্তে আস্তে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে পুরো সিস্টেমকে। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গেছে তাদের মতামতের গ্রহণযোগ্যতা। এর প্রভাব পড়তে শুরু করে বক্স অফিস কালেকশনে। এ কারণেই প্রোডাকশন হাউজগুলিও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এই সব ফিল্ম ক্রিটিকদের থেকে!
প্রত্যেকেই এখন ফিল্ম ক্রিটিক!
এন্টারটেনমেন্ট এডিটর বা সিনিয়র জার্নালিস্ট হলেই তিনি অটোম্যাটিকালি ফিল্ম ক্রিটিক হওয়ার যোগ্যতা এবং অবশ্যই ছাড়পত্র পেয়ে যান! আর খুব দুঃখজনকভাবে এটাই ভারতের অলিখিত নিয়ম। ফিল্ম সমালোচনা মানে যে শুধুই গল্প ভালো না খারাপ, অভিনয় দক্ষতা আছে কি নেই, তা নিয়ে আলোচনা করা নয়, এই সহজ সত্যটাই আমরা জানি না! ফিল্ম ক্রিটিক হতে গেলে ছবি বানানো সম্পর্কে একটি বেসিক ধারণা থাকা উচিত এটাই মানতে চাই না আমরা!
ইচ্ছে হলেই ছবি সমালোচক!
শুধু সাংবাদিক পর্যন্ত ফিল্ম ক্রিটিকদের তালিকা সীমাবদ্ধ থাকলে না হয় হতো, কিন্তু না, এখন ফ্যাশন ডিজাইনার থেকে রেডিও জকি এমনকি কোনও অ্যাস্ট্রোলজারও ফিল্ম বোদ্ধা হয়ে উঠেছেন! সে তারা হতেই পারেন। কিন্তু তার আগে অন্তত নিজেদের ফিল্মি জ্ঞান সম্বন্ধে একটি সম্যক ধারণা থাকা যে একান্তই প্রয়োজনীয় এই কথাটা কে তাদের মাথায় ঢোকাবেন!
সদ্যজাত সাংবাদিকও নাকি দুঁদে সমালোচক!
সবে হয়তো জয়েন করেছেন… এক দুটো ছবির প্রোমোশনাল ইভেন্ট কভার করেছেন, আর তার পরেই তিনি হয়ে গেলেন ফিল্ম বোদ্ধা! এদিকে এখনও স্টারদের প্রতি টিনএজ ফ্যান্টাসির রেশ বেশ টাটকা। এহেন ফিল্ম সমালোচকের কাছ থেকে কত উচ্চমানের সমালোচনা আশা করবেন আপনি? আমার সঙ্গেই একবার এমন ঘটনা ঘটেছিল। একটি ছবির প্রিমিয়ারে হাজির হয়েছি। আমার পাশে এসে বসলেন বছর ১৯-এর এক সদ্যজাত সাংবাদিক। সানি লিওন-কে পর্দায় সেক্স সিনে দেখে তিনি তো আস্ত কোল্ড ড্রিঙ্কের গ্লাসটিই উল্টে দিলেন আমার গায়ে। সেটি যদিও সামলে নিলাম, পরবর্তী পর্যায়ে আরও একটি অন্তরঙ্গ সিনে সানিকে দেখে তিনি আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠলেন! এই দৃশ্যও পাশে বসে সেদিন হজম করতে হয়েছিল আমাকে!
দর্শকদের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলা
এই দলে আবার এমনও ফিল্ম ক্রিটিক আছেন যারা একেবারে দিশি বলিউডি ছবির সঙ্গে অযথা তুলনা করেন ওয়ার্ল্ড সিনেমার! তারা এটা ভুলে যান যে আম দর্শক আদৌ আগ্রহী নন যে রোহিত শেট্টির ছবি বার্গম্যান বা কুরোসোভার ছবির থেকে আলাদা কোথায়! ফলে তারা একটা সময়ের পরে দর্শকদের সঙ্গে আর কানেক্ট করতে পারেন না! তাদের করা রিভিউ পড়তে হয়তো ভালো লাগে তবে তার প্রভাব পড়ে না দর্শকদের মনে।