দেশের অবস্থা যে ভালো নয় প্রতিমুহূর্তে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। বাজারে জিনিস আছে, ক্রেতা নেই। কারণ ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
হাতিরপুলের ডিম ব্যবসায়ী সামসু। প্রতিদিন ভোর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ফুটপাতে ডিম বিক্রি করেন। আগে প্রতিদিন বিক্রি হতো তিন হাজার পিস ডিম। শনিবার রাতে সামসু জানালেন তার অবস্থা কাহিল। পাঁচ দিনে তিন হাজার ডিম বিক্রি করতে শেষ করতে পারছে না। কেন? মানুষ কিনছে কম। যিনি কিনতেন এক ডজন, এখন কিনছেন এক হালি।
এটিই প্রকৃত চিত্র।
ডিমের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বিক্রির অবস্থা যদি এই হয়, তাহলে অন্য সব পণ্যের বিক্রি কী পরিমাণ কমেছে, তা সহজেই অনুমেয়।
এক মাস তিন দিন পার হলো। অবরোধ-হরতাল থামছে না। থামছে না সরকারের গোয়ার্তুমি। সংলাপের ব্যাপারে নীতিবাচক কথাবার্তা। সাধারণ মানুষ আর কত দিন টিকবে। সম্ভবত বেশি দিন নয়। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে অনেক আগেই। এখন দেয়াল ফুড়ে পেছনে ছিটকে পড়ার অবস্থা হয়েছে।
কিন্তু কারো মাথাব্যথা নেই। নেই কারো দায়িত্ব। সরকার ও বিরোধীদল যার যার অবস্থানে অনড়। জীবন-জীবিকার সঙ্কটই শুধু নয়, মানুষ ভুগছে আতঙ্কে। নিরাপত্তাহীনতার অন্ধকার তাদের ঘিরে ফেলছে। কে কখন ক্রসফায়ারে মারা যাবে কেউ জানে না। পেট্রলবোমার আগুনে পুড়ে কঙ্কাল হওয়ার আতঙ্কে মানুষ দিশেহারা।
এই অবস্থাতেও সরকারি দলের মন্ত্রী-নেতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দম্ভোক্তি কমছে না। শনিবারও ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, “যারা নাশকতা করবে, মানুষ হত্যাসহ এ ধরনের কাজ করবে, তাদের বিরুদ্ধে যা যা করার সব করবেন। শুধু গুলি করা নয়, নাশকতাকারীদের বংশধর পর্যন্ত ধ্বংস করে দিতে হবে। আমি হুকুম দিয়ে গেলাম। দায়-দায়িত্ব সব আমার।”
জাসদের এমপি মাঈনুদ্দিন খান বাদল শনিবার কুমিল্লায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীদের বলেছেন, প্রয়োজনে সরাসরি বুকে গুলি করবেন।
তবে যে যাই বলুন না, অর্থমন্ত্রী কিন্তু স্বীকার করে নিয়েছেন দেশের অবস্থা ভালো নয়। শনিবার অর্থমন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি স্বীকার করে বলেন, “হরতাল-অবরোধের ফলে ঢাকা হয়তো কিছু বোঝা যায় না, কিন্তু রাজধানীর বাইরের জেলাগুলোতে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।”
পুলিশের আইজি শহিদুল হক অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু শনিবার তিনি পরিবহণ মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে অনুরোধ জানালেন রাত নয়টার পরে দুরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস যাতে তারা না চালান। এর আগে পুলিশই বলেছিল, তারা নিরাপত্তা দিয়ে সারাদেশে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখবে।
এটি না বলে উপায়ও নেই আইজিপির। গাইবান্ধায় শুক্রবার রাতের ঘটনা তাই প্রমাণ করেছে। পুলিশি প্রহরায় দুর্বৃত্তরা যেভাবে বাসে আগুন দিয়েছে, তা ভয়াবহ। প্রশ্ন ওঠেছে তখন পুলিশ কী করেছিল? তাহলে পাহারা দিয়ে লাভ কী? এই সব প্রশ্নের জবাব আইজিপির কাছে নেই।