বিশ্বকাপ বছরের আগে কোনো বড় দলের বিপক্ষেই তেমন ঝলক দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ।
গেল ২০১৪ সাল জুড়েই ছিল হতাশা। জয় দেখতে দেখতে হুট করে ছন্দ পতন, জায়ান্টদের বিপক্ষে বড় পরাজয়, ব্যাটসম্যানদের দৈন্যতা, বোলারদের নির্বিষ বোলিং, ফিল্ডারদের পিচ্ছিল হাত- বছরের ময়নাতদন্তে সারমর্ম হিসেবে এটাই উপস্থাপিত হয়। এই বিষয়গুলোকে প্রমাণ করে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩২৬ রান করেও হার, কিংবা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬৭ রানে ৮ উইকেট দখল করার পরেও হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়া। শেষে উষর বছরে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে আসে জিম্বাবুয়ে সিরিজ। এলটন চিগম্বুরা বাহিনীকে ৫-০ ব্যবধানে হোয়াইট ওয়াশ করে স্বস্তি পায় টাইগাররা। আর বিশ্বকাপের আগে আত্মবিশ্বাসের পালেও হাওয়া লাগায়।
সমস্যাটা অবশ্য অন্যখানে। চার বছর ধরে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে ভ্রমণ করেনি বাংলাদেশ। অথচ আসন্ন ২০১৫ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বেই দুই স্বাগতিক দেশ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ছাড়াও ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার মতো দলের মোকাবেলা করতে হবে মাশরাফি মুর্তজা বাহিনীকে। বিশ্বকাপের দুই আয়োজক দেশই এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার। শ্রীলঙ্কাকেও ফেলে দেয়া যাচ্ছে না। চলমান ত্রিদেশীয় সিরিজের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে ইংল্যান্ডকে ভাবা হচ্ছে ‘অবিস্ফোরিত শক্তি’ হিসেবে। সুতরাং এই বিগফোরকে পেছনে ফেলে সুপার এইটে ওঠা বাংলাদেশের জন্য এক প্রকার অসম্ভবকে তাড়া করাই! যদিও আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডকে প্রত্যাশিতভাবে হারায় টাইগাররা।
শঙ্কার বিষয় আছে আরও। মিনোজ আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ড প্রত্যেকেই এক মাসের বেশি সময় ধরে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অবস্থান করছে। আর স্থানীয়দের সহায়তায় বিশ্বকাপ প্রস্তুতি নিচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদের পেস বোলাররা বিশেষ সাহায্য পেতে পারে এই কন্ডিশনিং ক্যাম্প থেকে। উপরন্তু শাপুর জর্দান ও মোহাম্মদ নবীদের জন্য বাড়তি পাওয়া গেল এশিয়া কাপেই বাংলাদেশের মাটিতে মুশফিক বাহিনীকে হারিয়েছে তারা। তারপরও অবশ্য সব শেষ হয়ে যায় না। কিছু আশা থাকেই। বাংলাদেশেরও আছে। সেটা হলো ৫০ ওভারি ক্রিকেটে টাইগাররা সবসময় সমীহ জাগানিয়া দল। সেক্ষেত্রে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রমাণের জন্য মরিয়া থাকবে বাংলাদেশের এক ঝাঁক তরুণ। বড় মঞ্চে একটা ম্যাচই ভাগ্য বদলাতে পারে তাদের। আর বড় চার দলের একটি হারালেই জাগতে পারে তাদের সুপার এইট সম্ভাবনা।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কুষ্ঠি:
২০০৭ সালের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে দেশের প্রয়াত ক্রিকেটার মানজারুল ইসলামের রানার স্মৃতিকে সাথী করে ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক এক জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর সুপার এইটে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকেও হারিয়েছিল টাইগাররা। যা বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা পারফরম্যান্স। ঘরের মাঠে ২০১১ সালের ক্রিকেটযজ্ঞে ইংল্যান্ডকে হারায় সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বধীন স্বাগতিক দল। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বিধ্বস্ত হয়। ২০০৩ সালে নিজেদের সবগুলো ম্যাচেই হারে খালেদ মাসুদ পাইলটের দল। এমনকি কেনিয়া ও কানাডার বিপক্ষেও। এর আগে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপে পাকিস্তান ও স্কটল্যান্ডকে হারায় টাইগাররা।
এক্স-ফ্যাক্টর:
অতীতে বাংলাদেশ যতো বারই ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে ততো বারই নিজেদের সেরা ক্রিকেটটা বের করে এনেছে। গেল বছর জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগে ভক্ত ও মিডিয়ার কাছে ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। এটা যদি সাকিব-তামিমদের ক্ষুধার্ত করে তোলে তবে বড় কোনো শক্তি টাইগারদের কাছে পদানত হতেই পারে। এক্ষেত্রে টেস্ট ক্রিকেটের নবীন দেশটির মূলধন ত্রিশঙ্কু সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। এর মধ্যে সাকিবকে দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন ভাবা হয়। নিকট অতীতে যিনি দেশের হয়ে সবচেয়ে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করেছেন। তামিমও খারাপ সময় পেছনে ফেলার আভাস দিচ্ছে। আর মুশফিক গেল বছরে দেশের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান ছিলেন। প্রসঙ্গত, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারেনি।
বাংলাদেশ স্কোয়াড:
মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, এনামুল হক, সৌম্য সরকার, মুমিনুল হক, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, নাসির হোসেন, সাব্বির রহমান, তাসকিন আহমেদ, আল আমিন হোসেন, রুবেল হোসেন, আরাফাত সানি ও তাইজুল ইসলাম।