সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ‘মোনাফেক’ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের বেতভুক্ত কর্মচারী ছিলেন জিয়াউর রহমান। তাকে সাহায্য করেছিল কর্নেল তাহের; যাঁর একটি পা পঙ্গু ছিল।
তিনি বলেন, পঙ্গুদের ফাঁসি দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। কত বড় মোনাফেক হলে নিজের সহযোগীকে হত্যা করা যায়!
শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর শেখ হাসিনা এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। বিশ্বাস করলে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত আজে-বাজে কথা বলতো না। মুক্তিযুদ্ধ এবং যে সংবিধান সারা বিশ্বের মানুষের কাছে প্রশংসিত হয়েছে, তা নিয়েও কটাক্ষ করার মতো দুঃসাহস তারা দেখিয়েছে।
‘অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী ব্যক্তির হাতে যে দল গঠিত হয়েছে, সে দলও অবৈধ’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য সে অবৈধ দল থেকে ছবক শুনতে হয়। যারা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে, তাদের হেয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, হাইকোর্টের রায়ে জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল। কাজেই সেই জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপিও অবৈধ।
এসময় বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা হাইকোর্টের রায় মানে না। প্রথম রাষ্ট্রপতি নিয়ে কে প্রশ্ন ওঠালো? যার বাবা মুক্তিযুদ্ধের সময় একজন মেজর ছিলেন। স্বাধীনতার পর জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রমোশন দিয়ে যাকে মেজর জেনারেল করেছিলেন। অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী খন্দকার মোশতাকের হাতে জিয়া হলেন সেনাপ্রধান। সেনাপ্রধান হয়ে তিনি তাহের, খালেদ মোশাররফসহ বহু মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেন।
তিনি বলেন, খন্দকার মোশতাককে বিদায় দেওয়ার পর সায়েম সাহেবকে রাষ্ট্রপতি করা হয়। পরে তাকে অস্ত্র ঠেকিয়ে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন জিয়া।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্মি রুল ও সংবিধান ভঙ্গ করে জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। পরে তিনি হ্যাঁ/না ভোট করেন। সে সময় থেকে ভোট কারচুপি শুরু হয়।
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, যার (তারেক রহমান) একাডেমিক ক্যারিয়ার ইন্ডারমিডিয়েট পাস করেনি বলে শোনা যায়; যার মা অষ্টম শ্রেণী পাস, তারা যদি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সংবিধান শিক্ষা দেয়, এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে!
সারাদেশে সুষ্ঠুভাবে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলেই জনগণ তাদের পছন্দমতো প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে পেরেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা চেয়েছি, নির্বাচনগুলো যাতে যেনতেন মতো না হয়। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতসব সবদলের সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে আসতে পেরেছেন। একটি সরকার যে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করতে পারে, সেটি এ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ চাইলে জামায়াতে ইসলামী একটি আসনেও নির্বাচিত হতে পারতো না।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, সরকারের বিকেন্দ্রীকরণ এবং স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা।
প্রতিটি উপজেলায় একটি মাস্টার প্ল্যান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোথায় হাসপাতাল হবে, কোথায় বিদ্যুৎ যাবে, কোথায় স্কুল প্রতিষ্ঠিত হবে, তার একটি প্ল্যান এমনভাবে করতে হবে, যাতে আবাদী জমি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
নির্বাচিত প্রতিনিধিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যে কোনো পরিকল্পনা সুষ্ঠুভাবে গ্রহণ করতে হবে; যাতে করে পরিকল্পনাটি কার্যকর হয়। টাকা-পয়সা যা দেই, তা যেন মানুষের কাজে লাগে!
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি। যেখানে বিদ্যুৎ নেই, সেখানে সোলার প্যানেল করে দিচ্ছি; যাতে করে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়।
টুঙ্গিপাড়ার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন হয়ে গেছে, পরস্পরের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে ফেলতে হবে। মিলেমিশে সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি দৃঢ় আস্থা ব্যক্ত করে বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।
অনুষ্ঠানে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী গোলাম মোস্তফা, ভাইস চেয়ারম্যান অসীম কুমার বিশ্বাস ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আফসানা বেগম মিমি বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ আবদুল্লাহ।
অনুষ্ঠান শুরুর আগে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যানদ্বয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুলের তোড়া উপহার দেওয়া হয়।