দেশের নিম্ন বা অধস্তন আদালত হিসেবে পরিচিত জেলা পর্যায়ে থাকা আদালতগুলোতে বিচারের এখতিয়ার বাড়িয়ে আদেশ জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। অধস্তন দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত এবং ট্রাইব্যুনাল সমুহে বিচার কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার মো. আলী আকবরের স্বাক্ষরে আজ শনিবার আদেশ জারি করা হয়েছে।
নতুন আদেশ অনুযায়ী অধস্তন দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত এবং ট্রাইব্যুনাল সমুহে অতি জরুরি বিষয়ে বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হবে। ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে এই আদালত কার্যক্রম চলবে। এক্ষেত্রেও গত ১০ মে জারি করা প্রাকটিস নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত এই নির্দেশনা বহাল থাকবে।
শনিবার জারি করা আদেশে বলা হয়েছে, অধস্তন দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত এবং ট্রাইব্যুনাল সমুহ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অতি জরুরি বিষয় সমূহ শুনানি গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদান করবেন। এক্ষেত্রে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ-২০২০ এবং গত ১০ মে সুপ্রিম কোর্টের জারি করা ২১৪ নম্বর বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বিশেষ প্রাকটিস নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি, অসুস্থ কর্মচারী এবং সন্তান সম্ভবা নারীরা কর্মস্থলে উপস্থিত হতে পারবেন না।
এর আগে গত ১০ মে জারি করা আদেশে শুধুমাত্র জরুরি জামিন আবেদন শুনানির এখতিয়ার দেওয়া হয়েছিল। সেদিন জারি করা আদেশে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর দায়রা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, বিশেষ জজ আদালতের বিচারক, সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অথবা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অথবা তার নিয়ন্ত্রণাধীন এক বা একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার-২০২০ এবং বিশেষ নির্দেশনা অনুসরণ করে শুধুমাত্র জামিন সংক্রান্ত তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার উদ্দেশ্যে আদালত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনা বলবৎ থাকবে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে নিয়মিত আদালত বন্ধ থাকায় ভার্চুয়াল আদালত চালু করতে রাষ্ট্রপতিকে অধ্যাদেশ জারির জন্য অনুরোধ জানিয়ে আবেদন করা হয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে। আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই আবেদন পাবার পর রাষ্ট্রপতির নির্দেশনার আলোকে আইন মন্ত্রণালয় ৯ মে ভার্চুয়াল উপস্থিতিকে স্বশরীরে উপস্থিতি হিসেবে গণ্য করে আদালতে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০ নামে গেজেট প্রকাশ করে।
এই অধ্যাদেশের ক্ষমতাবলে ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করার মাধ্যমে আদালতকে মামলার বিচার, বিচারিক অনুসন্ধান, দরখাস্ত বা আপিল শুনানি, সাক্ষ্যগ্রহণ, যুক্তিতর্ক গ্রহণ, আদেশ বা রায় দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়। এই অধ্যাদেশ জারি পর গত ১০ মে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের অনুষ্ঠিত ফুলকোর্ট সভায় সুপ্রিম কোর্টসহ সারা দেশে ভার্চুয়াল আদালত চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফুলকোর্টসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওইদিনই ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনার জন্য আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগ এবং অধস্তন আদালত জন্য আলাদা আলাদা ‘প্র্যাকটিস নির্দেশনা’ এবং আইনজীবীদের জন্য ‘ভার্চুয়াল কোর্টরুম ম্যানুয়াল’ প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকে এই নির্দেশনা মেনেই আইনজীবীরা আবেদন করছেন এবং আদালতে বিচার কার্যক্রম চলছে।