দুর্ধর্ষ মোসাদের ‘ছোট্ট চুরি’, যেভাবে মহামারি থেকে বাঁচাল ইসরায়েলকে!

SHARE

সরকারি যোগাযোগ এবং গোপন কৌশল অবলম্বন করে করোনা মোকাবেলার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম চুরি করে ইসরায়েলকে মহামারির বড় বিপদ থেকে রক্ষা করেছে দেশটির কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। চুরির মাধ্যমে সংস্থাটি নিশ্চিত করছে ইসরায়েলে করোনা চিকিৎসা সরঞ্জামের কোন অভাব নেই।

ইসরায়েলের সীমানার বাইরে গোপনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা, শত্রুভাবাপন্ন দেশগুলি যাতে বিশেষ ধরনের অস্ত্র তৈরি বা সংগ্রহ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করা এবং দেশে-বিদেশে ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুর উপর হামলার ষড়যন্ত্র আগাম প্রতিরোধ করা, যেসব দেশে ইসরায়েলের অভিবাসন সংস্থা আইনত সক্রিয় হতে পারে না, সেই সব দেশ থেকে ইহুদিদের ইসরায়েলে নিয়ে আসার দায়িত্ব পালন করে ‘মোসাদ’।

মোসাদ গত কয়েক দশক ধরে নির্মমতা এবং দুঃসাহসী গোপনীয় মিশনগুলির জন্য খ্যাতি অর্জন করেছে। হত্যাকাণ্ড, অপহরণ থেকে শুরু করে এমন কোন পন্থা নেই যেটা কুখ্যাত এই বাহিনীটি ইসরায়েলের স্বার্থের জন্য পরিচালনা করে না। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলিতে, মোসাদের প্রাথমিক দায়িত্ব ইসরায়েলকে করোনাভাইরাস মহামারি থেকে রক্ষা করা। আর চুরি-ছিনতাইয়ের মাধ্যমে সেটা এরই মধ্যে ইসরায়েলকে নিরাপদ করে তুলতে সক্ষম হয়েছে সংস্থাটি।

মার্চের শেষের দিকে, করোনা মোকাবেলায় মোসাদের তৎপরতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল ইসরায়েলের বেশ কয়েটি গণমাধ্যম। মোসাদের প্রধান ইয়োসি কোহেন একটি বিশেষ কমান্ড সেন্টার স্থাপন করেছিলেন যা, ইসরায়েলি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করে।

জেরুজালেম পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, মোসাদের প্রচেষ্টায় মার্চ মাসের শেষের দিকে ইসরায়েল ১০ মিলিয়ন মাস্ক, কয়েক ডজন ভেন্টিলেটর, কয়েক হাজার টেস্ট কিট, পাশাপাশি বিপুল সার্জিক্যাল মাস্কের মজুদ নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছিল। গবেষণাপত্রে আল জাজিরার একটি প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যে, উপসাগরীয় এমন কিছু দেশ যেগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের কোন কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই সেসব দেশ থেকেই মোসাদ এই প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলো সংগ্রহ করেছে।

মহামারি মোকাবেলার জন্য সরঞ্জাম প্রাপ্তিতে মোসাদের ভূমিকা সম্পর্কে নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরায়েলের নিজস্ব সরবরাহ সুরক্ষিত করতে সংস্থাটি গুপ্তচরবৃত্তিতে তার দক্ষতা দারুনভাবে কাজে লাগিয়েছে। অন্যান্য দেশগুলি থেকে তারা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির তুলনায় স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা রয়েছে এমন রাষ্ট্রগুলো থেকে মোসাদ সহজেই কাজটা করতে পেরেছে।

ইসরায়েলের চ্যানেল ১২’এর অনুসন্ধানী সংবাদ অনুষ্ঠান ‘উভদা’র কাছে এ কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন ‘হেদ’ নামে পরিচিত মোসাদের কারিগরি বিভাগের প্রধান। তিনি জানান, করোনা আক্রান্ত কিছু কিছু দেশ এ সব সরঞ্জাম সরবরাহের ক্রয়াদেশ দিয়েছিল এবং তা ছিনিয়ে ইসরায়েলে নিয়ে আসার গোপন অভিযান পরিচালনা করছে মোসাদ।

‘হেদ’ আরও জানান, ইসরায়েলের জন্য কভিড-১৯ বিরোধী লড়াইয়ের সাথে সম্পর্কিত এক লাখ ৩০ হাজার সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে মোসাদকে আদেশ দেয়া হয়েছিল। এ সব সরঞ্জামের মধ্যে সুরক্ষা পোশাক বা প্রোটেকটিভ গিয়ার থেকে করোনা নির্ণয়কারী কিট, করোনা চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং শ্বাসযন্ত্র বা ভেন্টিলেটর রয়েছে।

একে অত্যন্ত জটিল অভিযান হিসেবে তুলে ধরে ‘হেদ’ জানান, তিনি অনেক অভিযান পরিচালনা করেছেন কিন্তু এমন জটিল অভিযান জীবনেও দেখেননি। করোনা মহামারি সামাল দেয়ার জন্য ভেন্টিলেটরের সরবরাহ সীমিত থাকায় কোনও কোনও দেশ তা হাতিয়ে নেয়ার গোপন লড়াইয়ে নেমেছে বলে দাবি করেন তিনি। এতে জয়ী হওয়ার জন্য ইসরায়েল তার বিশেষ সম্পর্ককে কাজে লাগানোর কথা বলেছে। অন্যান্য দেশ যেসব মজুদকৃত সরঞ্জাম কেনার ক্রয়াদেশ দিয়েছিল তা ছিনিয়ে ইসরায়েলে নিয়ে এসেছে মোসাদ।

ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ এর সাথে সাক্ষাৎকারে মোসাদ কারিগরি বিভাগের প্রধান এটাকে ছোট্ট একটু চুরি বলে অবিহিত করে বলেছেন, ‘ইসরায়েলিরা ভাইরাসের মোকাবেলায় কোনও অভাবের মুখোমুখি হবে না। সাধারণভাবে বিশ্বে বড় অভাব হবে। সরঞ্জামের অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে। ইসরায়েলের লোকেরা বাইরে যেতে পারবে না। তাদের সুরক্ষার জন্য এটা দরকার।”

মোসাদের গোয়েন্দারা সুরক্ষামূলক সরঞ্জামগুলি ইসরায়েলে আনতে কী কী উপায় অবলম্বন করেছিল সে সম্পর্কে জানতে চাইলে এই এজেন্ট বিশদ তথ্য দিতে অস্বীকার করেন। এই জাতীয় কাজে অন্য দেশও যুক্ত রয়েছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, আমরা চুরি করেছি, তবে কেবলমাত্র প্রয়োজন মেটানোর জন্য।’

সূত্র- টিআরটি ওয়ার্ল্ড।