চট্টগ্রামে পোশাক কারখানাগুলোতে ‘লে-অফ’ হিড়িক

SHARE

চট্টগ্রামে ইপিজেডে অবস্থিত শ্রীলঙ্কার বিখ্যাত হায়দ্রামানী গ্রুপের সিস্টার কনসার্ন তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান রিজেন্সী গার্মেন্ট লিমিটেড আজ রবিবার থেকে আগামী এক মাসের জন্য তাঁদের কারখানা সাময়িক কাজ বন্ধ (লে-অফ) ঘোষণা করেছে। সরকারি সাধারণ ছুটির মধ্যে গতকাল শনিবার রাতে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ইমেইলের মাধ্যমে লে-অফের নোটিশ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সিইপিজেডে অবস্থিত এই গ্রুপের আরেক সিস্টার কনসার্ন কেনপার্ক (বিডি) লিমিটেড গত ৫ এপ্রিল থেকেই ৪৫ দিনের জন্য লে-অফ ঘোষণা করেছে।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি দীর্ঘায়িত হওয়ায় চট্টগ্রাম ইপিজেডের অনেক কারখানা সাময়িক কাজ বন্ধ (লে-অফ) ঘোষণা করেছে। বিশেষ করে সম্প্রতি সাধারণ ছুটির মেয়ার ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোর পর থেকে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে লে-অফের আবেদন বেশি আসতে শুরু করেছে বলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেপজা সূত্র জানিয়েছে।

দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল চট্টগ্রাম ইপিজেডের এ পর্যন্ত প্রায় ১২ টি কারখানাকে লে-অফের অনুমোদন দিয়েছে বেপজা। এ ছাড়া গত দুইদিনেই আরও ১২টি কারখানা নতুন করে লে-অফের সুযোগ চেয়ে আবেদন করেছে। বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনের ভিত্তিতে যাচাই বাছাই করে বেপজা অনুমোদন দিচ্ছে। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে আরও ১৫ থেকে ২০টি কারখানা লে-অফের আবেদন করতে পারতে পারে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন।

এর আগে গত ৫ এপ্রিল থেকে সিইপিজেডের আরেক শ্রীলঙ্কান মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ইউনিভোগ গার্মেন্ট কোম্পানি লিমিটেড ৪১ দিনের জন্য তাঁদের মালিকানাধীন কারখানা লে-অফ ঘোষণা করে। বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন-২০১৯ এর ১১ ধারা অনুযায়ী বেপজার অনুমোদন সাপেক্ষে করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী সংকট ও কার্যাদেশ না থাকায় কারখানা লে-অফের ঘোষণা দেওয়া হয়। লে-অফ থাকাকালীন বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনের ১৫ ধারা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ প্রাপ্ত হবে।
শ্রম আইনে লে-অফের ক্ষতিপূরণ হিসেবে মূল বেতনের অর্ধেকের পাশাপাশি বাড়ি ভাড়ার পুরো অংশ পাবে শ্রমিকরা। একই সাথে বোনাসও পাবে পুরোটাই। তবে আনুষঙ্গিক ভাতা যেমন চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত ভাতা পাবে না শ্রমিকরা। এক ক্যালোর বর্ষের একটানা সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের সাথে আবেদনের প্রেক্ষিতে আরও ১৫ দিন লে-অফ রাখা যাবে কারখানা। এরপরেও সমস্যা থেকে উত্তোরণ না হলে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ সাপেক্ষে আইন অনুযায়ী ছাঁটাই করতে পারবে। তবে যাদের চাকুরীর বয়স ১ বছর হয়নি তারা কোন সুবিধাই পাবে না। কার্যত এই শ্রমিকরা বেকারই হয়ে যাচ্ছে।

চট্টগ্রামে অবস্থিত কর্ণফুলী ইপিজেডেও গতকাল পর্যন্ত ১১টি কারখানা লে-অফের অনুমোদন পেয়েছে। এ ছাড়া অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে আরও ২ টি আবেদন।

চট্টগ্রাম ইপিজেডের তাইওয়ানের মালিকানাধীন বাংলাদেশ স্পিনার্স অ্যান্ড নীটার্স (বিডি) লিমিটেড (বিএসকেএল) আজ রবিবার লে-অফের জন্য আবেদন করেছে বেপজার কাছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি আপাতত সরকারি ছুটির সাথে তাল মিলিয়ে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ দিনের জন্য লে-অফের আবেদন করেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ ও কমপ্লাইয়েন্স) কামরুল ইসলাম মাসুদ বলেন, কোম্পানিগুলোর আসলে এ ছাড়া আর কোন উপায়ও নেই। করোনা পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী যেভাবে সংক্রমিত হচ্ছে সহসা এর থেকে কোন প্রতিকার নেই। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই লে-অফের মতো সাময়িক সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।

যদিও শ্রম আইন অনুযায়ী, অগ্নিকান্ড, মহামারী, মারাত্মক দৈব ঘটনা ও দাঙ্গা হাঙ্গামার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজন হলে লে-অফের সুযোগ আছে। তবু সামর্থ্যবান কারখানা মালিকরাও লে-অফের সুযোগ নেওয়ায় সমালোচনাও আছে। সিইপিজেডের একজন কর্মকর্তা জানান, আমরা সামর্থ্যবান কোম্পানিগুলোকে নিরুৎসাহিত করছি। এতবছর যে শ্রমিকদের সার্ভিস নিয়েছে এই কঠিন সময়ে তাঁদের এক মাসের দায়িত্ব অন্তত তাঁদের নেওয়া উচিত। কিন্তু দূর্বল কারখানার সাথে অনেক আর্থিক সক্ষম প্রতিষ্ঠানও লে-অফের জন্য আবেদন করেছে।

এ প্রসঙ্গে বেপজার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) নাজমা বিনতে আলমগীর বলেন, শ্রমিকদের আর্থিক সুরক্ষার জন্যই আমরা মালিকদের আবেদন মেনে নিচ্ছি। করোনার কারণে বিশ্ব পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে সেটা বিবেচনায় নিলে লে-অফে শ্রমিকরা তাদের মোট বেতনের প্রায় ৭০ শতাংশই পাবে। এক্ষেত্রে মালিকরা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও আমরা শ্রমিকদের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি বেশি মাথায় রাখছি।