বাড়তি ওজন নিয়ে ঝামেলার শেষ নেই। মার্কেটে ঘোরাঘুরির সময় একটি পোশাক পছন্দ হলো কিন্তু পোশাকটি পরতে পারবেন না, কিংবা ইচ্ছে হলো একটুখানি পছন্দের খাবার খাবেন কিন্তু শরীরের দিকে তাকিয়ে খাওয়া আর হলো না। এই ধরণের ঝামেলার মূল কারণ হচ্ছে বাড়তি ওজনটুকু। ওজন নিয়ে কে কী মনে করলো কিংবা কে কী বললো তা হয়তো অনেকেই গোনায় ধরেন না, কিন্তু বাড়তি ওজনের জন্য যে আপনার নিজেরই ক্ষতি হচ্ছে তার কি হবে?
অনেকেই আছেন যারা নিজের দেহটাকে ফিট রাখার জন্য অনেক কিছু করেন। বাড়তি ওজন ঝেড়ে ফেলার জন্য চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু বেশীরভাগ সময় এই চেষ্টার ফল পাওয়া যায় না। এ কারণে অনেকে আশা ছেড়ে দিয়ে চেষ্টা করা বন্ধ করে দেন। এজন্য ভুলগুলো আড়ালেই পরে থাকে। আমাদের দরকার ভুলগুলো খুঁজে বের করে সেগুলো বন্ধ করা চেষ্টা নয়। চলুন তবে দেখে নেয়া যাক সেই ৭ টি ভুল যার কারণে শত চেষ্টার পরও ওজন কমানো সম্ভব হচ্ছে না।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ নেয়া
শত চেষ্টার পরও ওজন না কমার কারণগুলোর মধ্যে এই কারণটি অন্যতম। অনেকেই সামান্যতেই অতিরিক্ত পরিমাণে মানসিক চাপ নেয়া শুরু করেন। ভুলেও এই কাজটি করতে যাবেন না। মানসিক চাপের ফলে যে হরমোন আমাদের দেহে উৎপন্ন হয় তা দেহের মাংসপেশি কমিয়ে দেয় এবং মেদ জমায়। মানসিক চাপের ফলে যে মেদ জমে তা পেটের আশেপাশে জমতে থাকে। তাই মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকুন। মানসিক চাপ মুক্ত থাকতে যোগব্যায়াম, স্ট্রেচিং ইত্যাদি করতে পারেন।
দেহে পরিমিত প্রোটিন না থাকা
অনেকে মনে করেন প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খেলে ওজন বাড়তে থাকে। এটি একটি ভুল ধারণা। দেহে প্রোটিনের ঘাটতির কারণে আপনি অন্য খাবার দিয়ে তা পূরণ করে নেন। যার ফলে উল্টো ওজন বাড়তে থাকে। প্রোটিন এমন একটি খাদ্য উপাদান যা অল্প পরিমাণ খেলে অনেকক্ষণ ক্ষুধার উদ্রেক করে না। তাই দেহে পরিমিত প্রোটিন সরবরাহ করুন। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যতটা খাওয়া প্রয়োজন ততোটাই খান।
আপনি ক্যালোরি গ্রহনের হিসাব রাখেন না
বেশীরভাগ মানুষ এই জিনিষটি জানেন না। খাওয়ার সময় অনেকেই বুঝেশুনে খেতে চান না। বোঝেন না কোন খাবারে কতো ক্যালোরি এবং কোন খাবারটি খেলে দেহে অতিরিক্ত পরিমাণ ক্যালোরি জমা হবে। যদি এই হিসাবটি করতে পারেন যে কোন খাবারটি খেলে দেহে কম ক্যালোরি জমা হবে তাহলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন আপনার ওজন কমাতে কী কী করা উচিৎ।
দেহে পরিমিত ফ্যাট না থাকা
ওজন বাড়ার ভয়ে অনেকেই প্রোটিন কম খান, আর ফ্যাটের ধারে কাছেও যেতে চান না। ফ্যাট খেলে ওজন বাড়বে এই ভয়ে অনেকেই দেহের জন্য দরকারি ফ্যাটটুকুও বাদ দিয়ে ফেলেন। কিন্তু আপনি জানেন কি, মাছের তেল দেহের শক্তি বৃদ্ধি করে দেহে ফ্যাট জমা ছাড়াই? আপনি যদি মাছের তেল খান তবে আপনার দেহের শক্তি বৃদ্ধি হবে এবং আপনি বেশি কাজ করতে পারবেন যাতে আপনার দেহের মেদ ঝরে যাবে। সুতরাং মাছের তেল জাতীয় ফ্যাট পরিমিত পরিমাণ খাবেন।
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করা
দেহের ওজন কমানোর সাথে পানি পানের সম্পর্ক অনেক বেশি গভীর। দেহের হজমশক্তি কমে গেলে ওজন বাড়তে থাকে। পানি দেহের হজমশক্তি বাড়াতে সব চাইতে বেশি কার্যকর। গবেষণায় দেখা যায় মাত্র আধা লিটার পানি পানের ফলে হজমশক্তি প্রায় ৩০% বৃদ্ধি পায়। আপনি যদি পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করেন তবে আপনার হজমশক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং আপনার দেহে মেদ জমবে না। তাই পানি পানের ব্যাপারে কোনো ভুল করবেন না।
স্বাস্থ্যকর ভেবে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
অনেক সময় রঙচঙে বিজ্ঞাপনের প্রভাবে অনেকে মনে করেম সকালের নাস্তায় সেরেল এবং বোতলজাত জুস খেলে ওজন কমানো সম্ভব। এই ধরণের বিজ্ঞাপন একেবারেই ভুল। সেরেলে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে যা দেহের মেদ বাড়ায় এবং কৃত্রিম জুসে থাকে কেমিক্যাল এবং প্রিজারভেটিভ। তাই স্বাস্থ্যকরের মোড়কে ঢাকা এই অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে দূরে থাকুন। ফলমূল এবং তাজা ফলের রস খাওয়ার অভ্যাস করুন।
পরিমিত কার্বোহাইড্রেট না খাওয়া
ওজন বাড়ায় কার্বোহাইড্রেট এই কথা জানার পর অনেক স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিরা ডায়েটিং এর নামে খাদ্য তালিকা থেকে একেবারে কার্বোহাইড্রেট বাদ দিয়ে ফেলেন। এটি অনেক বড় একটি ভুল কাজ। কার্বোহাইড্রেট ওজন বাড়ায় তা ঠিক কিন্তু দেহকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য কার্বোহাইড্রেটের প্রয়োজন আছে।
কার্বোহাইড্রেটের অভাবে দেহের মাংসপেশি কমে যায় এবং শক্তিও কমে। ফলে কাজকর্মে অনীহা চলে আসে যা দেহে মেদ জমায়। তাই দেহের জন্য যতোটুকু কার্বোহাইড্রেট দরকার খাদ্যতালিকায় তাই রাখুন।