পালিত হচ্ছে ছাত্রলীগের ৬৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

SHARE

বাঙালি জাতির বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ও সংগ্রামে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দানকারী ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৬৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হচ্ছে রোববার।
image_112651_0
‘জনগণের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নের মডেল’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে এবার ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবাষিকী পালন করবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বাংলা, বাঙালির স্বাধীনতা ও স্বাধীকার অর্জনের লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্ম।

উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও সর্বপ্রাচীন ছাত্র সংগঠন- বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ৬৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

সংগঠনের দফতর সম্পাদক শেখ রাসেল বাসসকে জানান, ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে কেককাটা। রোববার সকাল ৬ টায় দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন।  রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের’ প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংগঠনটি প্রতিটি গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে এবং চরম আত্মত্যাগের বিনিময়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমায় ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, ৫৮-এর আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ সালে ৬-দফার পক্ষে গণঅংশগ্রহণের মাধ্যমে মুক্তির সনদ হিসেবে এই দাবিকে প্রতিষ্ঠা, ৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আনা, ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়লাভ এবং ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য নেতা-কর্মী সম্মুখসমরে অংশগ্রহণ করে পরাধীন বাংলায় লাল সবুজের পতাকার স্বাধীনতার বিজয় ছিনিয়ে আনতে অগ্রসেনানীর ভূমিকা পালন করে।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান স্বাধীনতা অর্জনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অংশ নেয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করার পর ছিনতাই হয়ে যাওয়া বিজয় পুনরুদ্ধার ও বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার ১৭ মে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বীর সিপাহসালারের ভূমিকা পালন করে।

৮৩-এর ছাত্র আন্দোলন, সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী তীব্র আন্দোলন শেষে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পরও পুনঃবন্দীদশার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ছাত্রলীগের ইতিহাসের সোনালী অধ্যায়গুলোর মধ্যে অন্যতম। ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে ছাত্রলীগ গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করে।

১৯৯৬ সালে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি সরকার গঠন করে। যার মধ্যদিয়ে সারা দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষার সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়। ন্যূনতম মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা পায় দেশের প্রতিটি জনগণ।

তবে ২০০১ সালে ১ অক্টোবর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে রাষ্ট্রযন্ত্রকে জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহারের অপচেষ্টা করে। এর বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা সূচিত ধারাবাহিক লড়াই সংগ্রামে নিয়োজিত ছিল ছাত্রলীগ।

১/১১’র পট পরিবর্তনের মাধ্যমে জাতি সাজানো নির্বাচনের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেলেও সবচেয়ে ভয়ংকর, অবিশ্বাস্য এবং ষড়যন্ত্রমূলক আঘাত আসে ১৬ জুলাই। এ দিন তৎকালীন সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিনা কারণে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে।

এই গ্রেফতারের প্রতিবাদে ছাত্রলীগ প্রথম প্রতিবাদ করে এবং সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘট ও স্বতঃস্ফূর্ত ছাত্র বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয়। আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করে আনে শেখ হাসিনাকে।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর বাংলার জনগণের গণরায় নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ, ক্ষুধা- দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয়ে শেখ হাসিনা বাংলার মানুষের সেবায় নিয়োজিত আছেন। শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কর্মসূচি বাস্তবায়নে এবং ছাত্রসমাজকে দক্ষ মানব সম্পদে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার বিকাশে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে ছাত্রলীগ।
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের ইশতিহারের অঙ্গীকার অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তরুণ প্রজন্ম ও ছাত্র সমাজের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে দেশকে ইতিহাসের কলঙ্ক ও দায়মুক্ত করার লক্ষে স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য সম্পন্ন করতে বর্তমান সরকার যে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে সেই অঙ্গীকারকে সহযোগিতা করার জন্য ছাত্রলীগ নিজেদেরকে আত্মনিয়োগ করে। চলমান এই বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার লক্ষে বিএনপি,জামায়াত-শিবিরের দেশব্যাপী সাধারণ মানুষ হত্যা, নৈরাজ্য, ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও ও রাষ্ট্রবিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ রাজপথে প্রতিবাদী অবস্থান নেয়। এই কর্মসূচী সফল করার লক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মূল্যবান জীবনও বিসর্জন দিতে হয়েছে।

২০১৪ সনের ৫ জানুয়ারি দেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার জন্য নির্বাচন যখন জামায়াত বিএনপির সন্ত্রাসীরা প্রতিহত করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল তখনই সারা বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্তরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশের সাধারণ জনগণ তথা ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে ভ্যানগার্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিবির-ছাত্রদল সন্ত্রাসীরা যখন শিক্ষক ও ছাত্রহত্যার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে তখন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় সারা বাংলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অস্ত্রবাজমুক্ত করার লক্ষ্যে “ক্লিন ক্যাম্পাস অ্যান্ড সেভ ক্যাম্পাস’ কর্মসূচি পালন করে। দেশের চলমান এই উন্নয়নের ধারা আরো গতিশীল রাখার অঙ্গীকারকে সামনে রেখে দেশের ছাত্র সমাজকে সাথে নিয়ে ছাত্রলীগ সাংগঠনিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সূত্র: বাসস