মাদরাসার আড়ালে জেএমবির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র!

SHARE

ভারতের মঙ্গলকোটের নিগনের তামিলপুকুর পাড়ের কাছে তৈরি হতে যাওয়া একটি মাদরাসার আড়ালে জামাতুল মুজাহিদিনের পশ্চিমবঙ্গ শাখার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা। এ কাজের জন্য ২৫ কাঠা জমি ব্যবহার করা হচ্ছিল।

ভারতীয় গণমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিনের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ভারতের চেন্নাই থেকে ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের আসাদুল্লা শেখ নামের এক ব্যক্তি গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে নিগনের মাদরাসায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। এর আগে ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরেরদিনই মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া মাদরাসার সঙ্গে তার যোগসূত্রের কথা জেনে যান তদন্তকারী কর্মকর্তারা। শিমুলিয়া মাদরাসায় তদন্ত করতে গিয়ে তারা খবর পান নিগনের তামিলপুকুর পাড়ের কাছে ২৫ কাঠা জমি কিনেন ইউসুফ, বোরহান ও আসাদুল্লা শেখ। তাদের তত্বাবধানেই তৈরি হচ্ছে একটি মাদরাসা। ২০১৩ সালের মার্চ মাসে কৃষ্ণবাটি গ্রামের বাসিন্দাদের কাছ থেকে ওই জমি কেনা হয়েছিল।

তদন্তকারী কর্মকর্তারা আরো জানতে পারেন, ২০১৩ সালের ৩ মার্চ নতুনহাট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ২৫ কাঠা জমি কেনা হয়েছিল তিনজনের নামে। তিন মালিকের মধ্যে আসাদুল্লার অংশ ৫ কাঠা, ইউসুফের বন্ধু কাঠমিস্ত্রি বোরহানের অংশ পাঁচ কাঠা এবং বাকি ১৫ কাঠা কেনা হয়েছিল বদরুজ্জামান শেখের নামে। বহরমপুরের উপরডিহি গ্রামের বাসিন্দা বদরুজ্জামান কেতুগ্রামের মউগ্রাম হাইস্কুলের আরবি শিক্ষক। এরপর ওই শিক্ষককে একাধিকবার তলব করেছিল ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ। যদিও তদন্তকারীদের কাছে ওই শিক্ষক তখন জানিয়েছিল তার মেয়ে শিমুলিয়া মাদরাসায় পড়াশোনা করত। সেই সুবাদে ইউসুফ ও বোরহানের সঙ্গে পরিচয়ের পর যৌথভাবে জমি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

এদিকে এই মাদরাসার খোঁজ পাওয়ার পরেই ভাতারের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আসাদুল্লাকে তলব করে একাধিকবার নোটিস পাঠিয়েছিল এনআইএ। নোটিস পাঠানো হয়েছিল বোরহানের বাড়িতেও। কিন্তু খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় আসাদুল্লা ও বোরহানরা। স্বামী পালিয়ে যাওয়ার পরে দুই মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যায় আসাদুল্লার দ্বিতীয় স্ত্রী হালিমা বিবিও। তারপর থেকে আর আসাদুল্লার হদিশ পাননি তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

খাগড়াগড় কাণ্ডের ছয় থেকে সাত বছর আগে থেকেই প্রথম স্ত্রী নূর নীহারের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যায় আসাদুল্লার। তারপর সে কুলসোনা গ্রামের মেয়ে হালিমাকে বিয়ে করে। মঙ্গলকোটের কুলসোনা গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম সম্প্রতি খাগডাগড় কাণ্ডে সাজা পেয়েছে। তাই দ্বিতীয় বিবাহের পর থেকেই আসাদুল্লার সঙ্গে জেএমবির সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।

বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্যসড়করে ভাতারের তামিলপুকুর। তার চারপাশে ঘন জনবসতি। পুকুরের পশ্চিমদিকে ২০০ ফুটের মধ্যেই কয়েকটা জমি পেরিয়ে এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে অসমাপ্ত মাদরাসার কাঠামো। প্লাস্টারহীন ইটের দেওয়ালে স্থানীয়রা কেউ ঘুঁটে দেন। আর মাদ্রাসার জমিতে চড়ে গরু। তবে সেখানে ঘেঁষতে দেখা যায় না বোরহান, আসাদুল্লা বা আরবি শিক্ষকের পরিবারের কাউকেই। খাগডাগড় বিস্ফোরণকাণ্ড না ঘটলে হয়ত এতদিনে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে যেত তামিলপুকুর পাড়ের জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। আর তাকে ঘিরে জেএমবির জাল এতদিনে বিছিয়ে ফেলতে পারত আসাদুল্লা ও ইউসুফরা।