পিতৃপরিচয়হীন বালিকা আজ বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যক্তি

SHARE

ধনী পরিবার থেকে কেউ জন্ম নিয়ে পরবর্তীতে আরও ধনী হবে এটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে একেবারে হতদরিদ্র থেকে উঠে এসে বিশ্বের প্রভাবশালী কেউ হবেন- এটা রীতিমতো চমকই বটে।
image_111654_0
অপরাহ গেইল উইনফ্রে এমনই এক নারী। তাকে থাকতে হয়েছে দীর্ঘ সময় পিতৃপরিচয়হীন। জন্ম ২৯ জানুয়ারি ১৯৫৪। যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপিতে। অবিবাহিত গৃহপরিচারিকা ভারনিতা লির ঘরে। বাবা ভারনন উইনফ্রে। পেশায় নরসুন্দর। বাবা-মার সঙ্গে একত্রে থাকার কপাল ছিল না উইনফ্রের। আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে ভারনিতা লি মেয়ের জন্য খাবার পর্যন্ত কিনতে অক্ষম হয়ে পড়েছিলেন। কিছুদিন পরে উইনফ্রেকে মার সঙ্গে নানির বাড়ীতে ঠাঁয় নিতে হয়েছিল। সেখানেও চরম দৈন্যদশায় দিন কাটছিল তাদের। না ছিল পর্যাপ্ত খাবার না ছিল পোশাক। নানিবাড়ীর আত্মীয়দের হাতে রোজ নির্যাতনের শিকার হতে হত মা-মেয়েকে। কখনও মা-মেয়ে একত্রে কাজ করতো অন্যর বাড়িতে। নিকট আত্মীয়দের বাড়ীতেও ।

উইনফ্রেকে নিয়ে তার সমবয়সীরা প্রায় হাসাহাসি করতো। কারণ উইনফ্রের পোশাক-আশাক ছিল একেবারের নিচু মানের। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। মাত্র নয় বছর বয়সেই নিকটাত্মীয়দের দ্বারাই যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয় উইনফ্রেকে। মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন উইনফ্রে, জন্মের কিছুদিন পর শিশুটি মারা যায়। অবশ্য নানির বাড়িতেই তার পড়ালেখার হাতেখড়ি।
স্কুলে পড়াকালে উইনফ্রে টেনিসি রাজ্যের স্থানীয় একটি রেডিও স্টেশনে চাকরি পেয়ে যান সান্ধ্যকালীন খবরের উপস্থাপিকা হিসেবে। উইনফ্রের সুদিন আসতে শুরু করে। পরে তার পারদর্শিতা দেখে দিবাকালীন টক-শো এএম শিকাগো উপস্থাপন করতে দেয়া হয়।
শিকাগোর এই তৃতীয় সারির টকশো যখন অপরাহর হাত ধরে প্রথম সারিতে জায়গা করে নেয়। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। তিনি ভুলতে শুরু করেন তার দুঃখময় অতীতকে। অপরাহ নিজের  প্রোডাকশন কোম্পানি খুললেন এবং আন্তর্জাতিক প্রচারে চুক্তিবদ্ধ হন। শিকাগোর সেই এএম শিকাগোই বর্তমানের দি অপরাহ উইনফ্রে শো।

এই শো টেলিভিশনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি প্রচারিত বলে গণ্য। নিজে ম্যাগাজিন প্রকাশের পাশাপাশি তিনি একজন সাহিত্য সমালোচক এবং অ্যাকাডেমি এওয়ার্ড মনোনীত অভিনেত্রীও। বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে ধনী আফ্রিকান আমেরিকান এবং সর্বকালের সেরা আফ্রিকান আমেরিকান মানবহিতৈষীও হবার যোগ্যতা অর্জন করেন তিনি। পরপর তিন বছর তিনি বিশ্বের অনন্য কালো কোটিপতি হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। কারো কারো মতে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মহিলা। ২০০৮ সালের জুনে প্রকাশিত ফোর্বস ম্যাগাজিন প্রকাশিত ২০০৮ সালের ১০০ জনপ্রিয় প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় পরপর দ্বিতীয়বারের মতো সর্বোচ্চ স্থান দখল করেন। -ওয়েবসাইট